শাহানাজ বেগম (৫০) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজির আড়তে কাজ করতেন। ১০ দিন ধরে কাজ নেই। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের আধা ঘণ্টা আগে তিনি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ইফতার আয়োজনে চলে আসেন। সমকালকে শাহানাজ বেগম বলেন, গত বছরও এরা ইফতারি দিয়েছিল। এ বছরও দ্বিতীয় রোজা থেকে এখানে এসে ইফতার করি। ইফতারি অনেক ভালো। আল্লাহ তাদের ভালো করুক।

রমজানের প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন তিন শতাধিক মানুষকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ইফতার করানোর উদ্যোগ নেয় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। তবে ইফতারকারীর সংখ্যা বাড়ায় সেই সংখ্যা বাড়িয়ে পাঁচ শতাধিক করা হয়েছে। ইফতারে খেজুর, আপেল, এক প্যাকেট বিস্কুট, ডিম, পানি, শরবত ও তেহারি দেওয়া হয়। এ ছাড়া 'ইফতারি দ্রব্য বক্স' রাখা হয়েছে। সেখানে যে কেউ ইচ্ছা করলেই যে কোনো ইফতারসামগ্রী সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য রেখে যেতে পারেন। বিদ্যানন্দের এ কার্যক্রমে কাজ করছেন এক দল স্বেছাসেবী। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র তানভীর (১০)। তার বাবা-মা পাশেই ভাঙাড়ির দোকানে কাজ করেন। সে প্রথম দিন এখানে এসে ইফতার করে। এখন ইফতারের আগে এসে স্বেচ্ছায় কাজ করছে। শিশু তানভীর বলে, এখানে সবাই একসঙ্গে ইফতার করে। কেউ ইফতারি নিয়ে আসে, কেউ নিয়ে খায়। আমি এখানে কাজ করি, ইফতারও করি।

কারওয়ান বাজারের এটিএন নিউজের অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ছাউনি করে এবং মাটিতে মাদুর বিছিয়ে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। ছাউনির ভেতরে ইফতারির প্যাকেট তৈরি করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। ভেতর ও বাইরে মাদুরে বসে আছেন ৩০০-এর বেশি মানুষ। তাদের কারও পরনে ছেঁড়া জামা, কারওবা দামি। কারওয়ান বাজারের শ্রমিক, পথচারী, ভাসমান লোক, আশপাশের মধ্যবিত্ত, ধনী সবাই এসেছেন। মাদুরে বসেছেন ফরহাদ হোসেন (৬০)। তিনি মাথায় করে পণ্য আনা-নেওয়া করেন। কাজ শেষ করে তিনি এখানে ইফতারের জন্য এসেছেন। তার পাশেই এসে বসলেন কানাডিয়ান প্রবাসী লেখক ও শিল্পী সৈয়দ ইকবাল। এ শিল্পী বললেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন 'সবাই মিলে বাংলাদেশ' স্লোগানে ইফতারের আয়োজন করেছে। তাদের ইফতার আয়োজনে কোনো ভেদাভেদ নেই। এক কাতারে সবাই ইফতার করেন। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এ আয়োজনে গত বুধবার আসেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি ভাসমান লোকদের সঙ্গে বসেই ইফতার করেন। তার আগের দিন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও তাদের সঙ্গে ইফতার করেন।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশনের প্রধান সালমান সমকালকে বলেন, সারাদেশেই সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কারওয়ান বাজারে প্রথম দিন সাড়ে তিনশ মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ায় আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে পাঁচশ লোকের আয়োজন করা হয়েছে। মাসব্যাপী এ আয়োজনে অনেকেই সহযোগিতা করছেন। আমরা চাই সবাই এগিয়ে আসুক। তাহলে সমাজে কেউ বঞ্চিত হবে না। ঢাকার ১০টি স্থানে ইফতারি বিতরণ ও কারওয়ান বাজারে ইফতার করানো হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে আমাদের কার্যক্রম চলছে।

এ আয়োজনের সঙ্গে থাকা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্নী সাহা সমকালকে বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সারাদেশে এমন অনেক আয়োজন করে। আমরা তাদের বলে এখানে এ আয়োজন করার উদ্যোগ নিয়েছি। কারওয়ান বাজার ব্যস্ততম এলাকা। এখানে অনেক মানুষ কাজ করে। তারা ভালো কিছু খেতে পারে না। সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ইফতারের জন্যই এ আয়োজন।