'যশ-খ্যাতির মোহে তুমি যদি ছুটে বেড়াও তাহলে দেখবে, প্রাপ্তির ঝুলিটা শূন্য থেকে গেছে। তাই সেই কাজটাই করো, যা নিজের শিল্পীসত্তাকে খুশি করবে- গুণীজনের মুখে শোনা এ কথাই সব সময় মেনে চলেছি। যে জন্য সস্তা জনপ্রিয়তার মোহ আমাকে কখনও পেয়ে বসেনি। তাই যা কিছুই করি, সেখানে নতুনত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি নির্দিষ্ট একটা সময়ের চিহ্ন রেখে দেওয়ার চেষ্টা করি।' গানের ভুবনে পথচলা নিয়ে এই ভাবনার কথা বলে গেলেন সিঁথি সাহা। এ কথা কতটা সত্যি, তার প্রমাণ মেলে এই শিল্পীর প্রতিটি আয়োজনের দিকে নজর দিলে। কিছুদিন আগে পাকিস্তানের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শাফকাত আমানত আলির সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে গান গেয়ে চমকে দিয়েছিলেন সিঁথি। শুধু তাই নয়, তাঁদের গাওয়া 'রাতজাগা পাখি' গানটি শ্রোতার হৃদয় স্পর্শ করতেও সময় লাগেনি। একই সঙ্গে তিনি বিস্মিত করেছেন তুরস্কীয় সংগীতায়োজনে কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গান 'ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ' কণ্ঠে তুলে নিয়ে। এই আয়োজনে বড় চমক ছিল গানের শেষাংশে তুরস্কের লোকগান 'কাটিবিম'-এর দুটি লাইন সংযোজন। 'রাতজাগা পাখি' গানের মতো 'ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ'-এর গল্পনির্ভর ভিডিওতে ছিল নান্দনিকতার ছোঁয়া। রবীন্দ্রসংগীতের জন্য একাধিকবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সিঁথি কোনো গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আটকে রাখতে চাননি। তাই রবীন্দ্রসংগীত সংকলন 'কিছু বলবো বলে' প্রকাশের পর ভিন্ন ভিন্ন ঘরানার গানে নিজের কণ্ঠ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাদ পড়েনি লোকগানও। সিঁথির কথায়, যে গান আমাদের শিকড় চেনায়, তা থেকে দূরে সরে থাকার কথা ভাবতেও পারি না।

লোকগানের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করতেই গেয়েছি রাধারমণ দত্তের কালজয়ী গান 'জলের ঘাটে'। এসব আয়োজনের আগেও শ্রোতারা প্রতিবার নতুনভাবে সিঁথিকে আবিস্কারের সুযোগ পেয়েছেন। 'কল্পনা', 'গল্প পাতায়', 'মনবালিকা' অ্যালবামের পাশাপাশি হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গে গাওয়া 'উড়ে যারে মুনিয়া', ইমরানের সঙ্গে গাওয়া 'বেহাল বেঘোর', একক গান 'কাজল রাতে'সহ তাঁর প্রায় প্রতিটি গানই সংগীতপ্রেমীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। আর সিঁথি সর্বশেষ আলোচনায় এসেছেন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রকাশ করা নতুন গান 'বলো দুজ্ঞগ্দা মা'। যেখানে তাঁর সহশিল্পী হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ঊষা উত্থুপ ও ঈশান। রাজীব দত্তের লেখা এই গানের সুর করেছেন তুবাই রায়। অবাক করা বিষয় হলো, এই গানে মডেল হিসেবেও অংশ নিয়েছেন ঊষা উত্থুপ। পথিকৃৎ বসুর পরিচালনায় ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা আবির চ্যাটর্জি। অবশ্য সিঁথির ভক্তরা তাঁর কাছে এমন আয়োজনই প্রত্যাশা করেন।

কারণ তাঁরা জানেন, সিঁথির গান মানেই অভিনব আয়োজন। হয়তো এ জন্যই সিঁথি কী নিয়ে ব্যস্ত, আগামীতে কী চমক দিতে যাচ্ছেন- তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। তাই সিঁথির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আগামীতে আরও নতুন কী করার পরিকল্পনা আছে? এর উত্তরে সিঁথি বলেন, 'উপমহাদেশের প্রখ্যাত গজল শিল্পী অনুপ জালোটার সঙ্গে একটি গজল গেয়েছি। এ ছাড়া শাফকাত আমানত আলির সঙ্গে দুটি গান গেয়েছি, যেগুলো শিগগিরই প্রকাশ করার পরিকল্পনা আছে।' তাঁর মুখে এ কথা শুনে এটা বোঝা গেল যে, আগামী দিনগুলোয় সিঁথিকে পাওয়া যাবে আরও ভিন্ন ধাঁচের গানের মাধ্যমে। এখন কথা হলো, সিঁথি তো গানের পাশাপাশি অভিনয় আর উপস্থাপনা করেও দর্শকের মনোযোগ কেড়েছেন, তারপরও এ সময় শুধু গান নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাচ্ছেন, কারণ কী? এর জবাবে সিঁথি বলেন, গানের সূত্র ধরেই আমি উপস্থাপনার সুযোগ পেয়েছি। আর অভিনয় তো এখনও শখের। তাই সব সময় ভাবনায় গানের বিষয়টাই থেকে যায়। তার চেয়ে বড় কথা হলো, আমার চাওয়া একটাই- ভার্সেটাইল কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরা।