নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন অনেকে। অধীর অপেক্ষায় ক্ষণ গুনছিলেন- কখন শুরু হবে শো। প্রেক্ষাগৃহ ছিল দর্শকে পূর্ণ। প্রতিটি শোতেই উপচে পড়া ভিড়। তাঁরা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উপভোগ করবেন। যখন সিনেমা শুরু হলো, আসন না পেয়ে অনেকে প্রেক্ষাগৃহের মেঝেতে বসে তা উপভোগ করলেন। গতকাল শনিবার কলকাতায় পাঁচ দিনব্যাপী 'চতুর্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে' এ চিত্র দেখা গেছে।

দুপুর ১টা ৩০ মিনিট, বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায় ছিল পরপর পাঁচটি সিনেমার শো। বিকেল ৪টায় শো উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তবে উদ্বোধনের আগেই দর্শকের ভিড় ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়তে শুরু করে কলকাতার নন্দন চত্বরে। সকাল থেকেই তাঁরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন। দুপুর দেড়টায় নন্দন ১-এ শুরু হয় চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত 'হাওয়া'। আসন সংখ্যা কম থাকায় অনেকে কার্পেটে বসে সিনেমা উপভোগ করেন। শো শুরুর অনেক আগে থেকেই প্রেক্ষাগৃহে ছিল দর্শকের দীর্ঘ সারি। শেষে প্রত্যেকেই চঞ্চলের অভিনয়ের প্রশংসা করেন।

দ্বিতীয় শো শুরু হয় বিকেল ৪টায়। নন্দন ২-এ 'হাসিনা :এ ডটারস টেল' দেখতে দর্শকের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যা ৬টায় দর্শক মুগ্ধতা নিয়ে দেখেন 'বিউটি সার্কাস' ও 'গোর'-এর মতো সিনেমা। নন্দন কর্মকর্তারা বলেন, প্রেক্ষাগৃহে এমন উপচে পড়া ভিড় তাঁরা অনেক দিন দেখেননি। এ চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত।

বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের ব্যবস্থাপনায় কলকাতার রবীন্দ্র সদনে পাঁচ দিনব্যাপী এ চলচ্চিত্র উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। উৎসবে সব মিলিয়ে ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি দেখানো হবে। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- 'হাসিনা :এ ডটারস টেল', 'হাওয়া', 'পরাণ', 'গুণীন', 'চিরঞ্জীব মুজিব', 'কালবেলা', 'বিউটি সার্কাস', 'শাটল ট্রেন', 'লাল মোরগের ঝুঁটি'।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি এবং পর্যটন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সারোয়ার কমল ও প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী জয়া আহসান, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সংগীতশিল্পী সাব্বির আহমেদ, প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস প্রমুখ। দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে মঞ্চে হাছান মাহমুদকে ফুল ও উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানান বাবুল সুপ্রিয়। একইভাবে বাবুলকে সম্মাননা জানান হাছান মাহমুদ।

পরে হাছান মাহমুদ বলেন, কাঁটাতারের বেড়া বা রাজনৈতিক সীমারেখা বিভক্ত করে দিলেও আমরা একই ভাষায় গান গাই, একই পাখির কলতান শুনি। কোনো বেড়াজালই আমাদের ভালোবাসা, মৈত্রীতে সীমারেখা টানতে পারবে না। তিনি বলেন, বাঙালি বিশ্বের অনেক জাতি-গোষ্ঠীর চেয়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকতে পারে; কিন্তু মেধা-সংস্কৃতির দিক থেকে অনেক এগিয়ে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, শিল্পীদের সীমানা নেই। তাই শিল্প-সংস্কৃতি যেন কাঁটাতারের মধ্যে আটকে না যায়। এ জন্য এ উৎসব। দুই বাংলা যদি যৌথভাবে কাজ করে, তাহলে বিশ্বে বাংলা চলচিত্র বড় জায়গা নিতে পারবে।

বাবুল সুপ্রিয় তাঁর বক্তব্যে দুর্গাপূজায় ইলিশ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানের শেষদিকে বাবুল সুপ্রিয়কে স্মারক নৌকা, পাঞ্জাবি এবং তাঁর স্ত্রীকে জামদানি শাড়ি উপহার দেন হাছান মাহমুদ। গৌতম ঘোষকে নৌকা ও পাঞ্জাবি দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে গৌতম ঘোষ আক্ষেপ করে বলেন, দুই দেশের মধ্যে ছবির আদান-প্রদান করতে পারেননি। আদা-রসুন আমদানি-রপ্তানি হয়, কিন্তু সিনেমা হয় না। বিষয়টি দেখার জন্য তিনি হাছান মাহমুদকে অনুরোধ জানান।

উৎসব চলাকালে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহ নন্দন ১, ২ ও ৩-এ ছবিগুলো দেখানো হবে প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।