বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির তথ্যমতে,  ২০২২ সালটা  ৫০টি সিনেমা মুক্তির বছর। এর মধ্যে কয়েকটি ছবি অতীত অনেক বছরের ব্যবসার রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। আবার লাখ লাখ টাকায় বানানো ছবি কোনা মোনাফা না করার রেকর্ডও আছে এ বছরে।

তবে এখন তো  সিনেমার আয় শুধু সিনেমাহল কেন্দ্রিক নেই।  ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, টিভি সত্ত্ব বিক্রি, ডিজিটাল রাইটস, স্পন্সর, দেশের বাইরে মুক্তি থেকে আয় নানা মাধ্যম থেকে আসা শুরু হয়েছে। সে বিচারে হলে ব্যবসা এনে দিতে না পারলেও অনেক ছবি  বিকল্প উপায়ে মুনাফা করেছে বলেও জানিয়েছে প্রযোজনা সংস্থা। 

তবে সিনেমা ব্যবসায় যাই হোক ২০২২ সালটা চঞ্চল চৌধুরী সিয়াম আহমেদ বিদ্যা সিনহা মিম ও শরীফুল রাজদের দখলেই ছিলো। শান, পাপপূণ্য, পরাণ, হাওয়া ও দামাল দিয়ে বছরটা নিজের করে নিয়ে ছিলেন তারা। তাই ২০২২ সালের চলচ্চিত্রের সালতামামি টানলে এই এদের দখলেই থাকবে সিনেমার ইন্ডাষ্ট্রির হালহকিত। 

চঞ্চল চৌধুরী

২০২২ সাল চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় জীবনের অন্যতম বছর হিসেবে লেখা থাকবে। এই বছর তার অভিনীত ২টি সিনেমা 'পাপ-পুণ্য' ও 'হাওয়া' মুক্তি পেয়েছে। পাপপূন্য ছবি প্রশংসিত হলেও হলে তেমন ব্যবসা এনে দিতে পারেনি। তবে চঞ্চল চৌধুরী নিজের অভিনয় দিয়ে মন কেড়েছে এই ছবিতেও।  আর 'হাওয়া' চঞ্চল চৌধুরীকে এনে দিয়েছে সর্বাধিক সাফল্য আর খ্যাতি। দেশে বটেই দেশের বাইরেই ছবিটি তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এই 'হাওয়া' এর কল্যাণেই বছর শেষে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের হয়ে চঞ্চল চৌধুরীকে বলিউড তারকা শাহরুখ খান ও অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে এক ফ্রেমে দেখা গেছে। অন্যদিকে ওটিটি প্লাটফর্মেও রাজত্ব করেছেন এই অভিনেতা। তার অভিনীত 'কারাগার' দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল দর্শক।

বিদ্যা সিনহা মিম

সাফল্যের বিচারে যদি প্রশ্ন রাখা হয় এ বছরের নাম্বার ওয়ান নায়িকা কে? তাহলে চোখ-কান বন্ধ করেই উত্তর দেওয়া যাবে বিদ্যা সিনহা মিম। বলা যায় এ বছর মিমের পুণর্জন্ম হয়েছে। 'পরাণ' ও 'দামাল' দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে রাজ করেছেন তিনি।  পরাণ এর অনন্যা চরিত্রে অভিনয় প্রেক্ষাগৃহে বসা দর্শকদের গালি খেলেও হলের বাইরে মিম ঠিকই তালি পেয়েছেন। আর এই ছবির মাধ্যমেই বছরের সেরা ব্যবসা সফল ছবির নায়িকা খেতাব পেয়েছেন মিম। তবে তার অভিনীত রায়হান রাফি পরিচালিত 'দামাল' ব্যবসায়িক সাফল্য খুব একটা না পেলেও এই ছবিতেও নিজের সেরা অভিনয়টা করেছেন মিম। পেয়েছেন হাততালিও।  শুধু সিনেমা হলেই নয়  ছোটপর্দায়ও সমান তালে সাফল্য পেয়েছেন এই অভিনেত্রী। পরাণ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির সময়েই ‘মনের মানুষ’, ‘কার্ণিশ’, ‘রিস্কি লাভ’ ও ‘চেহারা’ নামে ঈদে চারটি টেলিভিশন ফিচার ফিল্মেও প্রচার হয। এ কাজগুলোর জন্যও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। 

সিয়াম আহমেদ

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সিনেমা বাচাইয়ে রুচির পরিচয় দিয়ে আসছেন সিয়াম আহমেদ। এ বছরও তার প্রমাণ মিলেছে। চলতি বছরের সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবির নায়ক ছিলেন সিয়াম। তার অভিনীত 'শান', 'পাপ-পুণ্য', 'অপারেশন সুন্দরবন' ও 'দামাল' মুক্তি পায় এ বছর। চারটি সিনেমাতে ব্যতিক্রম এক সিয়ামকে দেখেছেন দর্শক। সিনেমাগুলোর মধ্যে 'শান' সিনেমাটি তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে। 'দামাল' সিনেমাতেও অনবদ্য এক স্ট্রাইকারকে দেখেছেন দর্শক। আর পাপপূণ্যতে সিয়াম ছড়িয়েছে অভিনয়ের মুগ্ধতা।  চারটি সিনেমায় অ্যাকশন, রোমান্টিক দুই ফর্মেটেই  নিজেকে চিনিয়েছেন সিয়াম।

শরিফুল রাজ

এই বছর ঢাকাই চলচ্চিত্র ইন্ডাষ্ট্রি নায়ক হিসেবে শরিফুল রাজকে পেয়েছে।  এর আগে 'আইসক্রিম' ও 'নডরাই' ছবির মাধ্যমে যে রাজ দর্শকদের কাছাকাছি যেতে ব্যর্থ হয়েছিল সেই রাজই এই বছর 'পরাণ' ছবি দিয়ে নতুন করে জ্বলে উঠলেন। পুরোনো নায়কদের ভিড়ে নতুন করে দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেন।  এ বছর রাজ অভিনীত তিনটি ছবি মুক্তি পায়। এর মধ্যে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের গুণিন, রায়হান রাফির 'পরাণ' ও মেসবাউর রহমান সুমনের 'হাওয়া'।  এই তিনটি ছবির দুটিই সুপারটার ডুপার হিট। পরাণ এর পর হাওয়াতেও নিজের অভিনয়ের জাতি চিনিয়েছেন এই নায়ক। তাই বছরের সেরা আলোচিত নায়কের খেতাবটি তার দখলেই চলে যায়।