৩০ ডিসেম্বর ২০২২

সকাল ৭টা :চার দশক পরেও এভাবে ব্যস্ততা বেড়ে যাবে- ভাবিনি। আজ ঢাকা, কাল চট্টগ্রাম, এরপর খুলনা, যশোর, সিলেট- কোথায় না ছুটতে হচ্ছে স্টেজ শোর জন্য। এত শোতে কীভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছি- তা প্রশ্ন নিজের কাছেই। অনেকের মনে হতে পারে, আমার জন্য এটা স্বাভাবিক; কিন্তু তা নয়। সেরা পারফরম্যান্স তুলে ধরতে না পারলে কোনো শিল্পীই এমন ধারাবাহিক কাজ করে যেতে পারেন না। এই যেমন আজ ছুটতে হচ্ছে খুলনার পথে। তাই সকাল সকাল না উঠলেই নয়। গত রাতেই লাগেজ গুছিয়ে রেখেছি, এখন নাশতা সেরেই ছুটতে হবে।

সকাল ১০টা :মাইলস ছাড়ার পর নতুন লাইনআপ নিয়ে পারফর্ম করছি। যাঁরা এখন আমার সঙ্গে মিউজিক করেন, তাঁদের নিয়ে গর্ব করা যায়। দারুণ বোঝাপড়া আমাদের। তাই শো'র কিছু দায়িত্ব ওদের হাতে তুলে দেওয়া যায় নিশ্চিন্তে। তবু সবকিছুর দিকনির্দেশনা দিতে হয় নিজেকেই। তাই সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে বেরিয়ে পড়লাম খুলনার উদ্দেশে।

বিকেল ৩টা :পদ্মা সেতু যোগাযোগের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। তাই খুলনার দীর্ঘ পথটাও আমাদের কাছে এত দীর্ঘ মনে হয়নি। বিকেল নাগাদ আমি ও দলের সবাই গন্তব্যে পৌঁছেছি। এরপর সাধারণত আমি যা করি, হালকা নাশতা করে চলে এসেছি হোটেলে। একটু বিশ্রাম নিয়ে যাব সাউন্ড চেক করতে।

বিকেল সাড়ে ৪টা :সাউন্ড চেক পর্ব শেষ। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গেও কথা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক বুঝিয়ে দিয়েছি। সত্যি বলতে কি প্রতিটি শো, গানের তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে সাউন্ড, ব্যাকগ্রাউন্ডের এলইডিসহ সব বিষয়ে নজরদারি থাকে আমার। রিহার্সাল তো শোর আগের দিনই সেরে ফেলি। কখনও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

সন্ধ্যা ৭টা :স্টেজে ওঠার সময় ঘনিয়ে এসেছে। এবার মূল পরীক্ষা। পরীক্ষা কথাটা এ কারণেই বললাম, এখনও আমি নিজের সেরাটা তুলে ধরার জন্য স্টেজে উঠি। প্রতিযোগিতা করেই পারফর্ম করি। দর্শককে দিয়ে কখনও গান গাওয়ার ভাবনা মাথায় থাকে না। ভালো লাগা, মুগ্ধতা নিয়ে দর্শক আমার গানে কণ্ঠ মেলাতেই পারেন। কিন্তু আমি এক লাইন গান গাইলাম আর দর্শককে বললাম গাও- এই কাজ আমাকে দিয়ে কখনও হয়নি। হবেও না।

রাত সাড়ে ১১টা :এক ধরনের আত্মতৃপ্তিতে মনটা ভরে গেছে। দর্শক আমার গান শুনে যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, তা কখনও ভুলতে পারব না। আজ আবার প্রমাণ হয়েছে, আমাদের কাছে শ্রোতার প্রত্যাশা এতটুকু কমেনি। সেই আত্মতৃপ্তি নিয়ে উঠে বসলাম গাড়িতে। এবার ফেরার পালা, প্রস্তুতি নেওয়ার পালা আরেকটি গানের মঞ্চে ছুটে যাওয়ার।