ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে হাইকোর্টের এক রায়ে দেওয়া ৯ দফা নির্দেশনা প্রতিপালন হচ্ছে কি-না এবং রায় বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্নিষ্টদের এ বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী আমাতুল করিমকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, নির্দেশনা বাস্তবায়নে বার বার আপনাদের ডাকতে হয়। আমরা নিজেরাই লজ্জা পাচ্ছি। পরিবেশ দূষণ রোধে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি জানাবেন।

এ দিকে বায়ু দূষণ রোধে বুধবার থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এডিপি সভায় পরিবেশমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের বর্তমানে কর্মরত তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বুধবার থেকেই বায়ু দূষণকারী প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের বিরুদ্ধে নগরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।

বায়ু দূষণ রোধে জনস্বার্থে করা এক রিটের শুনানি নিয়ে ২০২০ সালে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের নির্দেশনায় বলা হয়, ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি বহনকারী ট্রাকগুলোকে ঢেকে পরিবহণ করা এবং যে সব জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে সেসব জায়গার কনট্রাকটররা তা ঢেকে রাখবে। ঢাকার নির্দিষ্ট কিছু সড়কে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা, সড়কের মেগা প্রজেক্টের নির্মাণ কাজ এবং কার্পেটিংসহ যেসব কাজ চলছে, যেসব কাজ আইন কানুন এবং চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন মেনে করার বিষয়টি নিশ্চিত করা, যেসব গাড়ি কালো ধোয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করা, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করা এবং যেসব গাড়ি পুরাতন হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে, এর মধ্যে যেগুলো এখনও বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করা, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইকিলিং বন্ধ করা। এ ছাড়াও রায়ে মার্কেট ও দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখার পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতে মঙ্গলবার শুনানি করেন। তিনি গত সোমবার হাইকোর্টের দেওয়া ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে সম্পুরক আবেদন করেন। মঙ্গলবার ওই আবেদনের শুনানিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেন, বার বার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। বায়ু দূষণ রোধে আপনারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। আপনারা কি আমাদের সবার ক্ষতি করতে চান? এ পর্যায়ে আবেদনকারী মনজিল মোরসেদ বলেন, কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমে রিপোর্ট হচ্ছে- বিশ্বের সর্বোচ্চ বায়ু দুষণকারী শহর হচ্ছে ঢাকা। বায়ু দূষণে ঢাকার এই অবস্থান ধারাবাহিকভাবে একইরকম হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে যেন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। যেটা দিল্লিতে করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের এখানে কারও কোনো খবর নেই। এখন পর্যন্ত ঢাকা শহর বায়ু দূষণে এক নম্বরে আছে, অথচ কেউ কোনো পাত্তা দিচ্ছেন না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত এ বিষয়ে বলে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে পরিবেশ অধিদপ্তরকে হাইকোর্টের ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বুধবার থেকেই বিশেষ অভিযান:

মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এডিপি'র সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় পরিবেশমন্ত্রী বুধবার থেকেই বায়ুদূষণকারী প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের বিরুদ্ধে নগরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ঘোষণা দেন। মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। তাই বায়ুদূষণ রোধে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সভায় মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মিজানুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) মিজানুর রহমান এনডিসি, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ এবং বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরীসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ঢাকার বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ু দূষণ পরিমাপকারী সংস্থা আইকিউ এয়ার তাদের ইনডেক্সে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আইকিউ এয়ারের ইনডেক্সে তুলে ধরা হয়েছে বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ২৬৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শীর্ষ অবস্থানে ছিল। মূলত গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা।