তানভীর রাকিন (৫) থাকেন মালিবাগে। টেলিভিশনে সিসিমপুরের অনুষ্ঠানে টুকটুকি, হালুম, ইকরি, শিকুকে দেখেন। রাকিনের এ পছন্দের পাপেট চরিত্রগুলো অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রতিবছরের মতো শিশুপ্রহরে সিসিমপুর মঞ্চে এবারও থাকবে।

শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটায় শিশুপ্রহরের সিসিমপুর মঞ্চ উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। উদ্বোধনের পরে একে একে মঞ্চে আসেন সিসিমপুরের টুকটুকি, হালুম, ইকরি, শিকু। এর আগে সকাল ১১ টায় শিশুপ্রহরের উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা। 

সিসিমপুরের মঞ্চে টুকটুকি, হালুম, ইকরি, শিকু মঞ্চে এসেই তাদের পছন্দের গানে নাচতে থাকেন। আর তাদের সঙ্গেও ছোট্ট সোনামণিদের আনন্দময় সাহচর্য পেয়েছে। দুপুরের আগেই তানভীর রাকিন বাবা, মা আর ফুফুর সঙ্গে এসেছেন শিকুর সঙ্গে খেলতে। শিকুকে তার সবচেয়ে পছন্দ। রাকিনের মতো আরও অনেক শিশু বাবা মায়ের সঙ্গে এসেছেন শিশুপ্রহরের সিসিমপুরে। এবারের সিসিমপুরের নতুন পাপেট চরিত্র জুলিয়া। মেলায় সে না আসলেও থাকবে টিলিভিশনের পর্দায়। অনেক শিশুই নতুন এ চরিত্রকে খুঁজে ফিরেন।

শিশুপ্রহরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিশুদের মাঝে এসে গল্প পড়ে শোনান। শিশুদের সবাইকে তিনি বই পড়তে বলেন। অভিভাবকদেরকে শিশুদের খাওয়ানোর সময় এবং অন্য সময়ে মোবাইল হাতে না দিয়ে বই হাতে দিতে বলেন। তাদেরকে গল্প, কবিতা পাঠ করে শোনাতে বলেন। ছোটবেলা থেকে বইপড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে বড় হয়েও তারা বই পড়বেন।

ডা. এ কে এম মুজাহেদুল ইসলাম বলেন, মেলার আঙ্গিক সাজাতে সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিশুপ্রহরকে। মন্দিরের দিকে বড় পরিসরে জায়গা দেওয়া হয়েছে এ চত্বরকে।

এ সময় তিনি বলেন, শিশুপ্রহরের সিসিমপুরের চরিত্রগুলো প্রত্যেকটি শিক্ষার উপকরণ। হালুম মাছ খেতে পছন্দ করে। টুকটুকি বই পড়তে পছন্দ করে। তাদের মাধ্যমে সুষম খাবারের ও বই পড়ায় শিশুদের আগ্রহ বাড়বে। 

ব্যবসায়ী লোকমান আহমেদ ছুটির দিনের দুপুর বেলায় দুই ছেলে আবির রহমান (১০) ও আমানকে (৩) নিয়ে এসেছেন বই মেলায়। তিনি বলেন, ঢাকায় শিশুদের খেলার জায়গা নেই। শুক্রবার ছেলেদের নিয়ে ঢাকার মধ্যে কোথাও না কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান। আর বইমেলা আসলে ছুটির দিনে আসেন শিশুপ্রহরে। সেখানে তারা সিসিমপুরেরর হালুম, ইকরির সঙ্গে খেলতে পারে।

মেয়ে অর্পিতাকে নিয়ে বই মেলার শিশুপ্রহরে এসেছিলেন সরকারি চাকরিজীবী আসলাম আহম্মদ। তিনি বলেন, আমি গ্রামের ছেলে। কিশোর বয়সে আমরা কত রকমের খেলা খেলতাম। এখনকার ছেলেমেয়েরা সেসব খেলার নাম জানে না। আমরা তো তাদের সেসব খেলা শিখাইনি। সারাদিন তাদের ঘরে বন্দী করে রাখি। তাই মেয়েকে মেলায় নিয়ে এসেছি। ও এখানে আসতে পেরে খুব খুশি। সিসিমপুরের হালুম টুকটুকিদের সঙ্গে খেলা করেছে, বই কিনেছে, আইসক্রিম খেয়েছে।

শিশু চত্বরে শিলা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী বিএম কাউছার বলেন, আমার মনে হয় পাঠকরা মূল সাহিত্য থেকে সরে যাচ্ছে, নয়তো আমরাই তাদের সরিয়ে দিচ্ছি। মেলার শিশু চত্বরের স্টলগুলোতে নিম্নমানের গল্পের বইয়ের ছড়াছড়ি। এতে করে আমাদের কোমলমতি শিশুরা ভুলে ভরা বই পাচ্ছে।

প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর চালু থাকবে। আর শিশুপ্রহরের সিসিমপুরের মঞ্চ তিনটি পর্বে চালু থাকবে। সকাল সাড়ে ১১টা, বিকাল সাড়ে তিনটা আর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। এদিকে আজ শুক্রবার ছিল অমর একুশে বইমেলার প্রথম ছুটির দিন। সকাল ১১টা থেকে বইমেলার ফটক খুললেও দুপুরের পর থেকেই বইমেলায় বইপ্রেমীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার আগে মেলা প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।