- বিনোদন
- মানসিক নির্যাতনের শিকার ৬৭% গৃহকর্মী
বিলসের গবেষণা প্রতিবেদন
মানসিক নির্যাতনের শিকার ৬৭% গৃহকর্মী

দারিদ্র্য, পেশার সহজলভ্যতা, বিয়েবিচ্ছেদসহ নানা কারণে গৃহকর্মীর কাজ বেছে নেন অনেক নারী। সেই পেশায় এসে ৬৭ শতাংশ গৃহকর্মী মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ৯১ শতাংশ গৃহকর্মীর জেন্ডার সহিংসতার সাহায্য চাওয়ার বিষয়ে হেল্পলাইন নম্বর সম্পর্কে ধারণাই নেই। ৪২ শতাংশ আবাসিক গৃহকর্মী বসারঘর কিংবা রান্নাঘরের মতো খোলা জায়গায় ঘুমান। ৭৫ শতাংশ খ কালীন গৃহকর্মী বস্তিতে অবস্থান করেন। গৃহকর্মীদের গড় মাসিক আয় ৫ হাজার ৩১১ টাকা, যেখানে তাঁদের মাসিক গড় খরচ ১০ হাজার ৮০১ টাকা।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) আয়োজিত শোভন কাজ ও কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সহিংসতা বিষয়ে গৃহশ্রমিকদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা এবং অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় সুনীতি (সিকিউরিং রাইটস অব উইমেন ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স ইন বাংলাদেশ) প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়। বিলস-সুনীতি প্রকল্পের পক্ষে গবেষণাটি পরিচালনা করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডিনেট। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল নারী গৃহকর্মীদের শ্রম অধিকার ও জেন্ডার সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি অন্বেষণের পাশাপাশি তাঁদের শোভন কাজ নিশ্চিত করতে বিদ্যমান সুযোগ বা প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়- ৯৬ শতাংশ গৃহকর্মী বলেছেন, তাঁদের বর্তমান মজুরি মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। শত ভাগ গৃহকর্মীই মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে কাজ করেন। ২৬ শতাংশ গৃহকর্মী কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত বা দেরি করার কারণে বেতন কাটার শিকার হয়েছেন। আবাসিক গৃহকর্মীরা দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন। ৮৭ শতাংশ খ কালীন গৃহকর্মী কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পান না। গৃহকর্মীদের ৯৯ শতাংশ পেশাগত কোনো দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পাননি।
গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ বিষয়ে ৯৯ শতাংশ গৃহকর্মীর এবং ৬৬ শতাংশ নিয়োগকর্তার কোনো জ্ঞান নেই।
বিলসের যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক এবিএম খোরশেদ আলম, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক বেলাল হোসেন শেখ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক সুস্মিতা পাইক, লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, আইএলও ওয়ার্ক ইন ফ্রিডম প্রোগ্রামের ন্যাশনাল প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর এনি দ্রং, ডিনেটের নির্বাহী পরিচালক এম. শাহাদাৎ হোসেন, সুনীতি প্রকল্পের সমন্বয়কারী তারেক আজিজ, বিলস উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল, বিলস নির্বাহী পরিষদের সম্পাদক শাকিল আখতার চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, প্রশিক্ষণ ও অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে গৃহশ্রমিকের শোভন কাজ নিশ্চিত করা সম্ভব। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমে গৃহশ্রমিকের মর্যাদার বিষয়টি যুক্ত করা হলে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনেও সহায়ক হবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে ১২ সুপারিশের মধ্যে রয়েছে গৃহশ্রমিকের নিবন্ধন, থানাগুলোতে গৃহশ্রমিকদের জন্য আলাদা অভিযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ তৈরি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে গৃহশ্রমিকের অধিকার ও তা লঙ্ঘনের প্রতিকার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, তাঁদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তনে ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নেওয়া ইত্যাদি।
মন্তব্য করুন