বলিউডে প্রথম ছবিই সুপারহিট। তাও আবার যে ছবিতে তাঁর চরিত্র সঞ্জয় দত্তের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই স্বাদ বেশি দিন পেলেন না অভিনেতা। প্রথম ছবি মুক্তি পাওয়ার পরেই হারিয়ে গেলেন জয়দীপ ওরফে ভিকি অরোরা।

ভিকির জীবনের কাহিনি অন্য রকম। মুম্বাইয়েই জন্ম তাঁর। তবে, জন্মের সময় তাঁর নাম ভিকি ছিল না। তাঁর আসল নাম জয়দীপ অরোরা। ছোট থেকেই ‘সুদর্শন’ তকমা নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে মডেলিংয়ে ঝুঁকতে শুরু করেন তিনি।

কলেজে ভর্তির পর মডেলিং শুরু করেন জয়দীপ। মডেলিংজগতে নাম হয়ে যায় সুদর্শন জয়দীপের। বিভিন্ন নামী জামাকাপড়ের ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন তিনি।

মুম্বাইয়ের কলেজে জয়দীপের সহপাঠী ছিলেন ফিরোজ খানের মেয়ে লায়লা। জয়দীপ ও লায়লা একে অপরের ভালো বন্ধু ছিলেন। তখন সবে নব্বইয়ের দশকের শুরু। ফিরোজ তখন তাঁর নতুন ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছেন। শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খানের মতো অভিনেতাদের কাছে প্রস্তাবও দিয়েছিলেন ফিরোজ। কিন্তু সবাই তাঁর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তার পর অন্য অভিনেতাদের কাছে গিয়েও লাভ হয়নি ফিরোজের। সব জায়গা থেকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত ফিরোজের রক্ষাকর্ত্রী হয়ে এলেন তাঁর কন্যা লায়লা। লায়লা তাঁর বন্ধু জয়দীপের ছবি দেখালেন ফিরোজকে। ছবি দেখামাত্রই ফিরোজ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন যে, জয়দীপকে তিনি তাঁর ছবির নায়ক করবেন।

মনিষা কৈরালার সঙ্গে নাচের দৃশ্যে ভিকি

১৯৯২ সালে মুক্তি পায় ফিরোজ খান পরিচালিত ‘ইয়ালগার’ ছবিটি। মুখ্যচরিত্রে জয়দীপের পাশাপাশি অভিনয় করেছিলেন সঞ্জয় দত্ত এবং মনীষা কৈরালা। এ ছাড়াও মুকেশ খন্না, কবীর বেদী এবং ফিরোজ খান নিজে এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।

সঞ্জয়ের মতো অভিনেতা অভিনয় করলেও ‘ইয়ালগার’ ছবিতে সঞ্জয়ের চরিত্রের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল জয়দীপের চরিত্র। জয়দীপ ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলেন যে, তিনি কত বড় সুযোগ পেয়েছেন। ছবির প্রয়োজনে নিজের আসল নামও বদলে ফেলেছিলেন জয়দীপ। ফিরোজ খানের পরামর্শে তিনি তাঁর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ভিকি।

কিন্তু ছবি তৈরির সময় ফিরোজ বুঝতে পেরেছিলেন যে, ভিকির গলার আওয়াজ ক্ষীণ। নিজের ছবির যেন কোনও ক্ষতি না হয়, তাই ভিকির সমস্ত সংলাপ অন্য একজনকে দিয়ে ডাবিং করিয়েছিলেন। তবে পরে মত বদলে ফেলেন ফিরোজ। ‘ইয়ালগার’ ছবিতে যে অভিনেতারা কাজ করেছিলেন, তাঁদের সকলের কণ্ঠস্বর বেশ ভারী। সে ক্ষেত্রে একজন অভিনেতার গলার আওয়াজ সামান্য পাতলা হলেও তা পুষিয়ে যাবে বলে অনুমান করেছিলেন তিনি।

কিন্তু ধারণা একেবারেই ভুল ছিল ফিরোজের। ভরসা করে ডাবিংয়ের অংশগুলো ছবিতে না ঢুকিয়েই ‘ইয়ালগার’ মুক্তি পায়। ছবিটি সুপারহিটও হয়। তবে, ছবি মু্ক্তির পর কটাক্ষের শিকার হন ভিকি।

ভিকির কণ্ঠস্বর এতটাই ক্ষীণ ছিল যে, অনেক দর্শক তাঁকে ইঁদুরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ‘ভিকির গলা শুনে মনে হয় যেন কোনও ইঁদুর তারস্বরে চিৎকার করছে।’ ‘ইয়ালগার’ ছবিতে কাজ করার সময় ভিকি বহু ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু ফিরোজের ছবির কাজে তিনি এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, অন্য কোনও কাজে হাত দেওয়ার সময় ছিল।

‘ইয়ালগার’ ছবির পরে বলিপাড়া থেকে একেবারে অদৃশ্য হয়ে যান ভিকি। ২০০২ সালে একটি মিউজিক ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সকলে ভেবেছিলেন, আবার অভিনয়ে ফিরে আসবেন ভিকি। কিন্তু সে রকম কিছুই হয়নি। বহু দিন তাঁর কোনও খোঁজ না পাওয়ার পর ভিকির মৃত্যুর ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে। একাংশের দাবি, মুম্বাইয়েই থাকেন ভিকি। কর্মসূত্রে দুবাই গিয়েও মাঝেমধ্যে থাকতে হয় তাঁকে। কিন্তু ভিকি এখন কী করেন, কোথায় থাকেন তা নিয়ে এখনও কেউ নিশ্চিত নন। বলিপাড়া থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন ভিকি। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা