মেয়ের আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালের পর মায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার বখাটে আসাদুল ইসলামকে গতকাল সোমবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আসাদুল বরগুনার তালতলীর সোনাকাটা ইউনিয়নের লাউপাড়া গ্রামের মো. সুলতানের ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধির দাবি, আসাদুল আগে থেকেই এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। তাই এবারের ঘটনায় কঠোর শাস্তি চান তাঁরা।

পুলিশ বলছে, আসাদুলের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকৃত ঘটনা জানতে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

মেয়েটির বাবা বলেছেন, ‘স্ত্রীকে হারিয়েছি। মানসম্মান সব শেষ হয়ে পুরো পরিবার লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এখন আমার আর কিছুই নাই। তাই এ ঘটনার কঠিন বিচার চাই। যাতে আর কোনো পরিবার অথবা মেয়ে এ ধরনের ঘটনার শিকার না হয়।’

গত রোববার তালতলী থানায় মামলা করেন মেয়ের বাবা। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি ঢাকায় চাকরি করেন। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই মেয়ে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন। মেয়েটি স্কুলে যাওয়া-আসার পথে একই গ্রামের বখাটে আসাদুল প্রেমের প্রস্তাব দিতেন। তাতে রাজি না হওয়ায় আসাদুল বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে তাকে ধর্ষণ এবং অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারন করেন। এই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার মেলামেশা করেন। তার পরও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি ৮ মার্চ সকালে মাকে জানায় মেয়েটি। এর পর তাঁর স্ত্রী ৯ মার্চ আসাদুলকে বাড়িতে ডেকে এনে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তিনি সব স্বীকার করেন। তখন অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ডিলিট করার জন্য আসাদুলকে অনুরোধ করেন। কিন্তু আসাদুল তাতে রাজি হননি। উল্টো মেয়ের মানসম্মান নষ্ট করা, এমনকি মাকেও সামাজিকভাবে হেয় করার হুমকি দেন। দিশেহারা হয়ে ৯ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘরে থাকা সোলারের ব্যাটারির এসিড পান করে আত্মহত্যা করেন তাঁর স্ত্রী।

রোববার সকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থেকে আসাদুলকে গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করে র‍্যাব-৮। তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করে গতকাল আদালতে হাজির করলে বিচারক আসাদুলকে বরগুনা জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসাদুল এ পর্যন্ত দুটি বিয়ে করেছেন। কিন্তু দুটি বিয়েই ভেঙে গেছে। এর পর থেকে এলাকায় বখাটেপনাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। এ বিষয়ে তাঁর পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সাবেক ইউপি সদস্য মো. জলিল ফরাজী বলেন, ‘আসাদুল বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মেয়েটি কিছুদিন আগেও আমার কাছে অভিযোগ করেছে। কিন্তু আসাদুলকে আমি বলার পরেও সে কথা শোনেনি। তাই এই অপকর্মের কঠোর শাস্তি চাই।’

সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ বলেন, আসাদুলকে একজন বখাটে হিসেবে এলাকার সবাই চেনেন। তবে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি করেন তিনি।
থানার ওসি কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, আসামির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে তা বলা যাচ্ছে না।

র‍্যাব-৮-এর পটুয়াখালী কোম্পানি কমান্ডার তুহিন রেজা বলেন, আসামি আসাদুল দৈহিক মেলামেশার বিষয়টি স্বীকার করলেও ছবি ও ভিডিও প্রকাশের কথা স্বীকার করেননি।