- বিনোদন
- ‘সিন্ডিকেটের সদস্য না হলে ভালো ছবি বানিয়ে যুদ্ধটাও একাই করতে হয়’
‘সিন্ডিকেটের সদস্য না হলে ভালো ছবি বানিয়ে যুদ্ধটাও একাই করতে হয়’

প্রযোজক ও নির্মাতা জসিম আহমেদ
দুই বাংলায় একসঙ্গে মুক্তি পেয়েছিল অপি করিম ও কলকাতার ঋত্বিক চক্রবর্তী অভিনীত ‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবিটি। দর্শকদের প্রশংসা নিয়ে তৃতীয় সপ্তাহেও চলছে প্রেক্ষাগৃহে। ছবিটির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন প্রযোজক ও নির্মাতা জসিম আহমেদ।
আপনার ‘মায়ার জঞ্জাল’ ৩য় সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহে চলছে। ছবিটি কতটা সাফল্য পেল?
তিন সপ্তাহতো এমন কোন বড় সময় না। এই ছবি দেখে দর্শক যে রকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বা প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তাতে ছবিটা অন্তত ৩ মাস থিয়েটারে চলার আশা আমরা করতেই পারতাম। তবে ঢাকার বাস্তবতা ভিন্ন। এই ধরনের ছবি যারা দেখতে চান তাদের কর্মব্যস্ত সময়ে হলে যাওয়ার সুযোগ তৈরী করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে ট্রাফিক জ্যামে যেভাবে রাস্তায় আটকে থাকতে হয়, হলে পৌঁছাতেই শো অর্ধেক শেষ হয়ে যায়। এমনও দেখা গেছে অনেকেই একাধিক দিনে চেষ্টা করে সময়মত হলে পৌঁছাতে পেরেছেন। এমন যুদ্ধ করে ছবি দেখতে যাওয়া কারো কাছে বিলাসিতার মত মনে হতে পারে।
অধিকাংশ আর্ট হাউজ সিনেমা দুই বাংলাতেই খুব বেশিদিন প্রেক্ষাগৃহে চলে না। এটার কারন কি?
দুই বাংলার প্রেক্ষাপট আর দর্শক আলাদা। আমরা যদি পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকাই, সাম্প্রতিক সময়ের হিট ছবিগুলো কিন্তু আর্ট হাউজ ঘরানার। সেখানে মেইন্সট্রিমের ছবিগুলো বিগত দিনগুলোতে দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়। অথচ অথর ছবিগুলো একটার পর একটা হিট করলো। মায়ার জঞ্জালের গল্প বলার অভিনবত্ব অন্য ১০ টি ছবির সাথে এর পার্থক্য তৈরী করে দিয়েছে বলে অনেকে রিভিউতে লিখেছেন। অনেকেই বলতে চেয়েছেন মায়ার জঞ্জাল একটি স্মার্ট সিনেমা যা সকল শ্রেনীর দর্শককে কানেক্ট করতে পারে। আগেও বলেছি, আমরা আমাদের দর্শকদের টার্গেট করে ছবিটি বানিয়েছিলাম। স্থানীয় দর্শকদের কথা মাথায় রেখে ছবি বানালে সেটা ফেস্টিবালে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়। কিন্তু আমাদের ছবির গল্প বলার ধরন ও নির্মাণের মুন্সিয়ানাই ফেস্টিবাল জার্নিতে সফলতা পায়।
বাংলাদেশের প্রযোজকরা বলেন হল নেই আর হল মালিকরা বলেন ছবি নেই। এই মতপার্থক্যের বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
তারা যে যার অবস্থান থেকে কথা বলবেন এইটাই স্বাভাবিক। আমরা যদি সিংগেল স্ক্রিনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাওয়া যায়, প্রজেকশন ঠিক নেই। সাউন্ড ঠিক নেই। তার সাথে নেই হলের পরিবেশ। এই সব হলোগুলোতে যে শ্রেনীর দর্শক যাবেন তাদের পছন্দের ছবি হয়তো অথর ফিল্মমেকাররা দিতে পারেন না। এই শ্রেনীর দর্শক টাকা খরচ করে ডিপ্রেশন নিতে যাবেন কেনো বা মাথায় চাপ দিয়ে, চরম মনযোগ দিয়ে একটা ছবি বোঝার চেষ্টা কেনো করবেন? তারা সহজ বিনোদনের একটা ছবিই হয়তো দেখতে চান। আবার ঢাকার মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে যে শ্রেনীর দর্শক যান তারা হয়তো হলিউড বা হিন্দি ছবির দর্শক। তাই সিংগেল স্ক্রিনের দর্শকরা যে ছবি দেখতে চান তারা এই ধরনের ছবি মাল্টিপ্লেক্সে নিতে পারেন না। আর মাল্টিপ্লেক্সের সংখ্যা হাতে গোনা। সেখানে বিদেশী ছবির ছাপে এমনিতেই বাংলা ছবি কোনঠাসা থাকে।

‘মায়ার জঞ্জাল’ যে মানের সিনেমা,সেই মানের দর্শক আমাদের দেশে তৈরী হয়েছে কি?
পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের সিনেমার দর্শক তুলনামূলক বেশী হলেও ঢাকায় যে দর্শক আছে তার প্রমাণ মায়ার জঞ্জাল দেখার পর দর্শক প্রতিক্রিয়া। তবে হল ভরে যাওয়া বা এমন ছবি একটানা হাউজফুল যাওয়ার দর্শক তৈরী হতে সময়ের প্রয়োজন। যদি নির্মাতাদের মধ্য থেকে নিয়মিত প্রযোজনা করা হয় এবং বছরে ১০/১২ টা করে ভিন্ন ধরনের ছবি আসে তাহলে হয়তো দেখা যাবে অদুর ভবিষ্যতে স্মার্ট ছবি দেখার দর্শক ঢাকাতেও তৈরী হয়েছে। এমনটা হলে কিন্তু এই ভিন্ন ধরনের ছবিই মূলধারা হয়ে উঠবে যেটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হয়েছে। তবে আমাদের এইখানে সংকট আরো আছে। যারা ভালো ছবি দেখতে অন্যদের আহবান করার কথা অর্থ্যাৎ ইন্ডাস্ট্রির লোকজন তারা কিন্তু ভালো ছবি দেখে চুপ করে থাকেন, কাউকে বলেন না। আসলে ভালো ছবি বানালে দিনশেষে যু্দ্ধটা আপনার একারই করতে হবে। যদি না আপনি কোন একটা সিন্ডিকেটের সদস্য না হন। তারা শুধু নিজেরাই নিজেদের পিঠ চুলকিয়ে দেওয়ায় বিশ্বাস করেন।
বিশ্বব্যাপি মায়ার জঞ্জাল কবে নাগাদ মুক্তি পেতে পারে?
আমরা নর্থ আমরিকা, কানাডা, ইউকে, ইউএই মুক্তি নিয়ে কাজ করছি। আশা করি জুন- জুলাই নাগাদ আমরা একটু বড় আকারেই মুক্তি দিতে পারবো।
মন্তব্য করুন