
চলতি বছরের ৩ থেকে ৫ মার্চ নারী সহায়তা সংগঠন শান্তিবাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘দ্য বিগিনিং’ শিরোনামে চিত্রশিল্পী ও গণমাধ্যমকর্মী সাদিয়া আফরিন অরিনের একক চিত্র প্রদর্শনী।
এ প্রদর্শনী সাজানো হয়েছিল ২০২১ ও ২০২২ সালে শিল্পীর আঁকা মোট ২২টি চিত্রকর্ম দিয়ে। ক্যানভাসে মূলত অ্যাক্রিলিকে করা চিত্রকর্মগুলোয় করোনাকালীন বিপন্ন সময়ে শিল্পীর যাপিত মানসজগৎ উন্মোচিত হয়েছে।
প্রদর্শনীর ছবিগুলো– অপরাজিতা, বিট্রেয়াল, মুন বাথ, স্ট্রেংথ, হলোনেস, ডিল্যুশন, সোলেস, মেলানকোলিয়া, রিভেরি, কারেজ, দ্য উম্ব, দ্য ট্রমা, আউটকাম অব আ ট্রমা, মিডনাইট ইডেন ১-২, সেরেনিটি, ক্যাওস, মুড সুইং, হোপ, হিলিং, সলিচ্যুড ও এক্সটেসি।
একটি সংবেদনশীল মন মহামারির বিরূপ সময়ে যে গভীর নিঃসঙ্গতা, বিয়োগান্তকতা ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে অনুভব করে, সাদিয়া আফরিন অরিনের ক্যানভাসে তা মূর্ত।
সাদিয়া আফরিন অরিন বলেন, যখন ছবি আঁকি তখন দুশ্চিন্তা, বিষাদ কাজ করে না। বিপন্নতা ভুলে থাকি। ক্যানভাসে আমার মনের অবস্থা ব্যক্ত হয়েছে।
সাদিয়া আফরিন অরিন জানান, কেবল ভেতরগত তাড়নাকে পুঁজি করে, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই, তিনি ছবি আঁকতে শুরু করেন। প্রিয়জনকে হারানোর ভয়, তাঁদের কাছ থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণা, ক্ষোভ, ক্রোধসহ মহামারি-যাপিত জীবনের নতুন বাস্তবতায় সৃষ্ট যৌগিক মানবিক অনুভূতি ছবিগুলো চালিকা হিসেবে কাজ করেছে।
তাঁর মানব অবয়বগুলো নৈর্ব্যক্তিক অর্থ থেকে মুক্ত। বরং বহুপথগামী অর্থবোধক। অবয়বগুলোর মুখ– প্রাকৃত উপাদানে ঢাকা, আড়াল করা অথবা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এরা ভাষ্যকে বহন করে এবং একাধিক রূপক অর্থ ব্যক্ত করে। যে কারণে দর্শক আপন অভিজ্ঞতাজাত অর্থ সেখানে আরোপ করতে পেরেছেন।
দর্শক হিসেবে ছবিগুলো নন্দনকে স্পর্শ করেছে বলেই মনে হয়েছে। ছবিতে উজ্জ্বল মৌলিক ও মিশ্র রঙের সমন্বয় লক্ষণীয়। মানবাকৃতি বিশেষত নারী প্রতিকৃতি কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে স্থান পেয়েছে বেশিরভাগ ছবিতে। উপস্থাপিত হয়েছে চেনা বস্তুর অচেনা সমন্বয়ে গড়া বিমূর্ততা।
ছবিগুলোর বিমূর্ততা সম্বন্ধে শিল্পী জানান, মনের ক্ষত, হতাশা, ক্রোধ, আনন্দ, আত্মতৃপ্তি, বিষাদ, যুদ্ধ কিংবা সংগ্রাম কোনো কিছুই ঠিক দৃশ্যমান নয়, অনুভূতি– অদৃশ্য; অথচ বিদ্যমান। এই অনুধাবন থেকে ছবিগুলো বিমূর্ত হয়ে উঠেছে।
প্রায় সব ছবিতে নীলের প্রাধান্য লক্ষণীয়। শিল্পী বলেন, নীল রং সাহস কিংবা স্রোতের বিপরীতে চলার প্রতীক। কোথাও আবার লালের ছটা। লাল মানসিক আঘাত বা ক্রোধের প্রতিচ্ছবি।
ছবিগুলোয় মেক্সিকান চিত্রশিল্পী ফ্রিদা কাহলোর আত্মপ্রতিকৃতির প্রভাব প্রচ্ছন্ন বলে ব্যক্তিগতভাবে অনুভূত হয়েছে। বিশেষত রঙের ব্যবহার, নারী অবয়ব, পেছনপট হিসেবে জৈব– বিশেষ ক্ষেত্রে উদ্ভিজ্জ উপকরণের ব্যবহার, ফ্রিদার বিশ শতকীয় ধ্রুপদি ধারার প্রতি শিল্পীর অনুরাগের প্রকাশ বলেই মনে হয়। শিল্পী জানান, নেতিবাচক চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ হিসেবে তিনি ছবি আঁকাকে বেছে নিয়েছেন। প্রদর্শনীর নামের সাথে মিলিয়ে যে প্রচ্ছদ ছবি ব্যবহার হয়েছে তার নাম ‘বিট্রেয়াল’। শিল্পীর ভাষ্য অনুযায়ী এ ছবিতে ওপর-নিচ চেরা রক্তাক্ত পিঠে নীল গোলাপের জন্ম নতুনের সূচনা নির্দেশ করছে।
চিত্রশিল্পী হিসেবে সাদিয়া আফরিন অরিন নবাগত। মহামারির বিয়োগান্তকতা থেকে আঁকা তাঁর চিত্রকর্মগুলো আসছে দিনে বহুবর্ণিল ও দর্শনঋদ্ধ আরও ছবির অপেক্ষা তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে বলে দর্শক হিসেবে মনে হয়েছে।
মন্তব্য করুন