সরকারি প্রতিষ্ঠানে সদ্য পাস করা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন পেয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে এ নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।

‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ (ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ) নীতিমালা,২০২৩’ শীর্ষক নীতিমালার খসড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সচিব কমিটিতে উঠানো হয়েছিল। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। 

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, সচিব কমিটিতে নীতিমালার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, তবে এর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কী আছে নীতিমালায়: এর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ তৈরি হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ নতুন। আগ্রহীরা ৩ থেকে ৬ মাসব্যাপী ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাবেন। গ্র্যাজুয়েশনের ২ বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন মনে করলে পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করতে পারবে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চালু থাকা ইন্টার্নশিপ কার্যক্রম এ নীতিমালার আওতার বাইরে থাকবে। একই সঙ্গে সামরিক, আধাসামরিকসহ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে ইন্টার্নশিপের সুযোগ থাকছে না।

নীতিমালার খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুগোপযোগী ও অভিজ্ঞ মানবসম্পদ সৃষ্টি, পাঠ্য পুস্তকের জ্ঞানের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার সমন্বয় এবং সরকারি দপ্তরের কাজের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ইন্টার্নশিপের যোগ্যতা, বাছাই ও অন্যান্য: স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রি অর্জনের দুই বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এসময় পার হয়ে যাওয়া কেউ আবেদন করতে পারবেন না। একজন প্রার্থী একবারই সরকারি অফিসে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাবেন। আবেদনকারীদের একাডেমিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত মেধা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুযায়ী ইন্টার্ন বাছাই করা হবে। এর আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তর–সংস্থা তাদের চাহিদার কথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে জানাবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইন্টার্ন বাছাইয়ের লক্ষ্যে ইন্টার্নশিপের স্থান, সংখ্যা, সময়কাল, বিশেষ দক্ষতা, ভাতাসহ বাছাই প্রক্রিয়ার বিষয়টি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করতে হবে। ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ তিন থেকে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনের মাধ্যম এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। ইন্টার্নরা প্রতিমাসে নির্ধারিত ভাতা পাবে। এর বাইরে আর কোনো টাকা তারা পাবে না। তবে ভাতার পরিমাণ নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়নি।

স্থায়ী চাকরির ক্ষেত্রে সুবিধা নয়: ইন্টার্নশিপ চালুকালীন এ সংক্রান্ত কোনো প্রত্যয়নপত্র পাবে না প্রার্থীরা। একই সঙ্গে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করা কোনো প্রার্থী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী, অস্থায়ী বা অন্যকোনো প্রকার চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন না। অর্থাৎ সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রচলিত পদ্ধতি আছে, তা ইন্টার্নদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।

ইন্টার্নশিপের মাঝখানে কেউ যদি অন্য জায়গায় চাকরি পেয়ে যায়, তাহলে তিনি ইন্টার্ন অসমাপ্ত রেখেই চলে যেতে পারবে। অন্যদিকে ইন্টার্নের কার্যক্রম সন্তোষজনক না হলে, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত হলে, অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে, অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে, দাপ্তরিক আদেশ অমান্য করাসহ কর্তৃপক্ষ মনে করলে যে কোনো সময় ইন্টার্নশিপ বাতিল করতে পারবে।