প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ইরানের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য আরও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আজ সোমবার বিকেলে ফোন করলে প্রধানমন্ত্রী এ অভিমত ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক চুক্তির ভূয়সী প্রশংসা করেন। খবর বাসসের।

ঢাকা ও তেহরানের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রকৃত সম্ভাবনার অনেক নিচে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। আলাপের সময় তিনি দুই দেশের বণিক সমিতি নিয়ে একটি জয়েন্ট বিজনেস কমিশন (জেবিসি) গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ চলতি বছরের কোনো এক সময়ে জেইসির ষষ্ঠ বৈঠক আহ্বান করার জন্য কাজ করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জেইসি প্ল্যাটফর্ম উভয় পক্ষকে বাণিজ্য বাধা, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং ব্যাংক লেনদেনে বিধিনিষেধ কাটিয়ে ওঠার উপায় অন্বেষণ করতে সহায়তা করবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি হচ্ছে উভয় দেশের অভিন্ন ইতিহাস, বিশ্বাস ও সংস্কৃতি। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উৎপাদন সক্ষমতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ দেশ ইরানের জন্য মানসম্মত আমদানির উৎস হতে পারে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন, বাংলাদেশ ও ইরান ওআইসি এবং ডি-৮ এর সদস্য হওয়ায় অনেক সময় একে অপরকে সমর্থন করেছে।

তিনি বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে বিশেষ করে জাতিসংঘে ইরানের প্রতি সমর্থন বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মানবাধিকার কাউন্সিলে কানাডার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ভোটের কথা উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের প্রস্তাবে বাংলাদেশ নারীর মর্যাদা কমিশন থেকে ইরানকে অপসারণ করার বিষয়ে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে। ইসলামে নারী-পুরুষের সমান আচরণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইরানের নারীরা যাতে শিক্ষার সমান সুযোগসহ মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে।  নারীরা যেন তাদের পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য ইরানের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসন, আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর হামলার নিন্দা করেন। তিনি ইরানের প্রেসিডেন্টকে বলেন, তাঁর সরকার ইসরায়েলি বাহিনীর এ ধরনের বেআইনি কাজের নিন্দা করে আসছে।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আর্থিক সহায়তা হ্রাস সত্ত্বেও পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি দেওয়া মানবিক আচরণ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট রাইসিকে অবহিত করেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলে তিনি ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন দেওয়ার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রেসিডেন্ট রাইসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইরানের নতুন প্রশাসন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও সুসংহত করতে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ইরানকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।

তিনি প্রশংসা ব্যক্ত করেন যে, এটি সফল কূটনৈতিক কৌশলের একটি ধ্রুপদি উদাহরণ, যা উপসাগরীয় অঞ্চলে এবং তার বাইরেও বৃহত্তর আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়তা করবে। তিনি আরও বলেন, তিনি তেহরানে প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন।

তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট ও সে দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের একটি রহমতপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ রমজান মাস কামনা করেন এবং নওরোজ উৎসবের শুভেচ্ছা জানান। দীর্ঘ ২২ মিনিট টেলিফোন কথোপকথন শেষে ইরানের প্রেসিডেন্টকে তাঁর সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি তাঁকে এবং ইরানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণকে ঈদুল ফিতরের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।