আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় মাদক কারবারে যুক্ত আল আমিন ওরফে শুটার আলামিন। তাঁর স্ত্রী জোসনাকে সহায়তা হিসেবে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য চক্রের সদস্য বাদশাকে চাপ দেয় অন্যরা। তবে সে টাকা না দেওয়ায় তার ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয় চক্রের প্রধান নুরুল ইসলাম ওরফে নূরী। বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে সে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বাদশাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এর পরদিন নূরী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। তিন বছর আগের এ ঘটনায় জড়িত মাসুম ওরফে টুন্ডা মাসুমকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মঙ্গলবার সে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত জানিয়েছে।

পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সংঘবদ্ধ অপরাধ-দক্ষিণ) সারোয়ার জাহান সমকালকে বলেন, বছরখানেক আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ মামলায় আহাদুজ্জামান সবুজ ও আরিফের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। তখন মাসুম ও রাজু নামে দুই আসামির ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাদের খুঁজে বের করা এবং গ্রেপ্তার আরিফের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত। তদন্তে নেমে দীর্ঘ প্রচেষ্টায় মাসুমকে শনাক্ত করা হয়। এর পর রামপুরার পূর্ব উলন এলাকা থেকে সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর বর্ণনা করে। পরে গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মেরুল বাড্ডা মাছের আড়তের পাশে বাদশাকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে হত্যা করে নূরী। পালানোর সময় সে ধরা পড়ে। পরদিন তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে যায় ডিবি। তখন তার সহযোগীদের সঙ্গে ডিবির ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় নূরী। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় করা মামলাটির তদন্ত করে ডিবি। এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আল আমিন নিহত হয়।

জবানবন্দিতে মাসুম জানায়, সে এক সময় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেছে। তার চাচাতো ভাই সাদ্দাম ও আল আমিন মাদক কারবারে যুক্ত ছিল (পরে তারা বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়)। তাদের মাদক কারবারে সহায়তা করত মাসুম। সে নিজেও মাদকাসক্ত। ওই এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে নূরীকে চিনত সবাই। সব মাদক কারবারি ও মাদকসেবীর কাছ থেকে সে চাঁদা নিত। তার হাতে খুন হওয়া বাদশা মাদক কারবারের টাকার হিসাব রাখত। ঘটনার দিন সকালে মাসুমকে ফোন করে ডেকে নিয়ে ২ হাজার ৬০০ টাকা চাঁদা নেয় নূরী। সেই সঙ্গে জানায়, তাকে একটি কাজ করতে হবে। এর ঘণ্টাখানেক পর সে ফোন করে তাকে রামপুরা ব্রিজে ডেকে নেয়। সেখানে তার সঙ্গে দেখা করে নূরী ফিরে যায় এবং আধাঘণ্টা পর সবুজসহ দু’জনকে নিয়ে আবার ফিরে আসে। এ সময় সে নির্দেশ দেয়, আশপাশে পুলিশ দেখলে যেন সঙ্গে সঙ্গে তাকে জানানো হয়। মাসুম তাতে সম্মত হয়ে রামপুরা ব্রিজের পাশে অপেক্ষা করতে থাকে। আর তারা তিনজন পাশেই মেরুল বাড্ডা মাছের আড়তে যায়। এর ৫-১০ মিনিট পরই গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এর পর নূরীকে গুলি করতে করতে পালাতে দেখা যায়। তবে লোকজন তাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে। তখন মাসুম ভয়ে পালিয়ে যায়। পরে সে মাছের আড়তে গিয়ে বাদশার লাশ দেখে আসে।

পিবিআই জানায়, নিহত ব্যক্তি এবং হত্যায় জড়িতরা সবাই মাদক কারবারে যুক্ত ছিল। আল আমিনের স্ত্রীকে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আসামিরা যোগসাজশে বাদশাকে হত্যা করে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, অভিযোগপত্রভুক্ত আরিফের পরিচয় নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে সে আরিফ, না রিপন– এটি নিশ্চিত হতে বলেন আদালত। তদন্তে দেখা যায়, গ্রেপ্তার আরিফই হত্যায় জড়িত ব্যক্তি। তার পুরো নাম আরিফ হোসেন রিপন। অপর আসামি রাজুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।