
জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটির ভোটের সঙ্গে কমিশনের ইমেজ জড়িত। নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনোভাবেই গাইবান্ধা মডেলের ভোট চায় না। সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ মন্তব্য করেছেন।
অন্যদিকে, প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এই নির্বাচন ঘিরে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে না। বড় শঙ্কারও কিছু নেই। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। তবে যে কোনো সময় পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রস্তুতিও রাখা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে এমন মতামত উঠে আসে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সিইসি তাঁর বক্তব্যে উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের উদ্দেশে বলেন, সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা। সরকারের কেউ না। আর সরকারের চাওয়া এবং আমাদের চাওয়াও অনেক সময় এক নাও হতে পারে। সে বিষয়টি সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। পাঁচ সিটিতে অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সর্বাত্মক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সিইসি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন কমিশনের জন্য অনেক গুরুত্ব বহন করছে। এটি কমিশনের ইমেজের প্রশ্ন। কমিশন কোনোভাবেই গাইবান্ধা মডেলের নির্বাচন চায় না। গাইবান্ধার নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কমিশন থেকে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে সবাইকে পাঁচ সিটির ভোটে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সিইসির বক্তব্যের পর উপস্থিত কর্মকর্তারা সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কমিশনকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বৈঠকে নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলার তেমন হুমকি বা নাশকতার শঙ্কা নেই বলেও জানান তাঁরা। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানানো হয়। এ ছাড়া বিজিবির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ফোর্স বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সিটির ভোটের দিন ইন্টারনেটের গতি কমানোর প্রস্তাব করা হলে ইসি তাতে সায় দেয়নি।
সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে বৈঠকে জানানো হয়, প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে এমন একজনের (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম) সেখানে প্রভাব রয়েছে। তাঁকে ঘিরে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে। সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশপ্রধান, বিজিবি, র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। এ ছাড়াও বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) উপস্থিত ছিলেন।
রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি জানান, পাঁচ সিটির ভোট নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ইসি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। কমিশন থেকে সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। ইসির নির্দেশনা মেনে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে তাঁরা কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন।
আইজিপি বলেন, আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টিও উঠে এসেছে। সংসদের ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কমিশনের অধীনে থাকবে। কমিশনের নির্দেশনার আলোকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
নির্বাচন ঘিরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর স্থানীয় ইউনিট সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে কাজ করছে। বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা সিটি নির্বাচনে কোনো চ্যালেঞ্জের কথা বলেননি।
নির্বাচনে কোনো কোনো সময় পুলিশ স্থানীয় প্রার্থীদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে পক্ষপাতদুষ্টু হতে পারে সিইসির এমন বক্তব্যের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশপ্রধান জানান, তিনি এমন মনে করেন না। আইন অনুযায়ী পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যা দরকার, পুলিশের প্রতিটি সদস্য তা যথাযথভাবে পালন করছে।
পরে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানান, মাঠ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণে পাঁচ সিটি নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো নাশকতা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা এখন পর্যন্ত নেই। তিনি বলেন, কমিশন বারবার বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি আইন পরিপন্থি কাজে জড়িত হলে ইসি ব্যবস্থা নেবে।
মন্তব্য করুন