প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন দুই দল শীর্ষ লিগ থেকে চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে গেছে। একটি- দুই মৌসুম  আগে রূপকথা লিখে প্রিমিয়ার লিগে ফেরা লিডস ইউনাইটেড। অন্যটি লেস্টার সিটি। ইংলিশ লিগ জয়ী এভারটনও অবনমনের শঙ্কায় ছিল। শেষ পর্যন্ত অল্পের জন্য শীর্ষ লিগে টিকে গেছে দলটি। 

লিডসের অবনমন যেন অনুমিত ছিল। রাফিনহা এবং কেলভিন ফিলিপস ছিল দলটির সেরা খেলোয়াড়। মৌসুমের শুরুতে তাদের ছাড়তে বাধ্য হয় দলটি। মোটা অঙ্কের অর্থও ঘরে তুলেছিল। কিন্তু সেটার যথাযথ ব্যবহার করে ভালো ফুটবলার কিনতে পারেনি হোয়াইটস খ্যাত ক্লাবটি। 

তবে লেস্টার সিটি চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে যাওয়ায় অবাক হতেই হবে। ২০১৫-১৬ মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন তারা। ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি ও লিভারপুলের রাজত্বে ঢুকে পড়া ছিল রূপকথার মতো। ইতালিয়ান কোচ ক্লদিও রানিয়েও ছিলেন ওই রূপকথার মাস্টারমাইন্ড। 

শীর্ষ লিগে টিকে যাওয়া এভারটনের উল্লাস। ছবি: ফাইল

পরের মৌসুমেই লেস্টার সিটি ১২তে নেমে গেলেও গত তিন মৌসুমে তারা দারুণ ফুটবল খেলেছে। ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ মৌসুমে লেস্টার পাঁচে থেকে লিগ শেষ করেছিল। গত মৌসুমে সেরা দশে থাকাও খারাপ নয়। সেখান থেকে তাদের এই অবনমন মানা কঠিন। 

এই অবনমনের পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। বড় কারণ করোনা মহামারী। লেস্টারের মালিকানা থাইল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কিং পাওয়ারের। এটি একটি আন্তর্জাতিক ট্রাভেল এজেন্সি। ভরপুর পর্যটক থাকায় থাই ট্রাভেল এজেন্সিটি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিল। কিন্তু করোনায় ‘বিশ্ব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়লে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক কাঠামো ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এতে করে ক্লাবের আর্থিক অবস্থাও নাজুক হয়ে যায়। লেস্টার আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয়। 

লেস্টারের অবনমনের নেপথ্যে যথাযথ পরিকল্পনার অভাবও বড় কারণ। সংবাদ মাধ্যম গোল মনে করছে, খেলোযাড়দের প্রতি ক্লাবের ‘অতি ভক্তিকে’ একটা কারণ। লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এবং পরপর দুই মৌসুম সেরা পাঁচে শেষ করায় ক্লাবটি মূল খেলোয়াড়দের সঙ্গে লম্বা চুক্তি করে মোটা অঙ্কের বেতন দিতে শুরু করে। জনি ইভান্স, রায়ান বাট্রান্ড, জ্যানি ভেস্টারগার্ডকে মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে শুধু ক্লাবে পুষেছে দলটি।

তারকা খেলোয়াড় থাকলেও ব্যর্থ হয়েছে লেস্টারসিটি। ছবি: ফাইল

 আবার বেলজিয়াম মিডফিল্ডার তালিসম্যানের চড়া বাজারদর থাকলেও তাকে বিক্রি করেনি লেস্টার। ইংলিশ মিডফিল্ডার ম্যাডিসন বাজারে হটকেক ছিলেন। পূরণ করতে পারেনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। যেমন- গোলরক্ষক স্মাইকেল লেস্টার ছাড়ার পর যোগ্য কাউকে ভেড়ায়নি ক্লাবটি। মৌসুমজুড়ে রক্ষণভাগ ছিল ছেড়া জালের মতো। প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বাজে রক্ষণ সামলেছে লেস্টার। 

এর সঙ্গে যোগ হয় ইনজুরি। রিকার্ডো পেরেইরা, জেমস জাস্টিনের মতো ডিফেন্ডাররা ফ্লপ গেছেন। অবনমনে যাওয়া এই লেস্টারের জন্য শীর্ষে লিগে ফেরাও কঠিন হয়ে পড়তে পারে। কারণ দলটিতে বেশ ক’জন তারকা খেলোয়াড় থাকতেও চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে গেছে তারা। এখন দলটির ওই তারকারা শীর্ষ লিগে থাকা ক্লাবে চলে যাবেন। যেমন- ম্যাডিসন নিউক্যাসলে যেতে পারেন, টালিসম্যান আর্সেনাল কিংবা অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে যেতে পারেন, জেমি ভার্ডি লেস্টারে থাকবেন না। ক্লাব ছাড়বেন আরও অনেকে। ওই জায়গা পূরণ করে শীর্ষ লিগে ফিরে আসা সহজ নয়!