- বিনোদন
- প্রতিবাদ ঠেকাতে কাউন্সিলরের পক্ষে দিনভর মহড়া
পুরান ঢাকায় পুকুর দখল
প্রতিবাদ ঠেকাতে কাউন্সিলরের পক্ষে দিনভর মহড়া

প্রতিনিয়ত অবৈধ দখলে সংকুচিত হয়ে আসছে রাজধানীর গেণ্ডারিয়ার ডিআইটি পুকুর। নির্মাণ করা হয়েছে কাউন্সিলরের কার্যালয়ও - সমকাল
রাজধানীর গেণ্ডারিয়ার ডিআইটি পুকুর বেআইনিভাবে ভরাট বন্ধের দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের পূর্বনির্ধারিত মানববন্ধন করতে দেয়নি পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের গেণ্ডারিয়া ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে রাতের আঁধারে পুকুর দখল এবং এর পাশে স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয় নির্মাণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গতকাল আন্দোলনের ডাক দেন স্থানীয় এবং পরিবেশবাদীরা। তবে শেষমেশ পুলিশের অনুমতি না দেওয়ায় সে কর্মসূচি হয়নি।
গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় গেণ্ডারিয়ার ডিআইটি পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখা য়ায়, মানববন্ধনের জায়গায় পুকুরের চারপাশে অবস্থান নিয়েছেন হাজারখানেক যুবক। তাঁদের জন্য পুকুরপাড়ে স্থাপিত কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে করা হয়েছে রান্নার আয়োজন। এ যেন পুরোপুরি পিকনিক আয়োজন। এ সময় পরিবেশবাদীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতেও দেখা যায় কাউন্সিলরের সমর্থকদের। এ ছাড়া দলবেঁধে মহড়াও দেন তাঁরা। এ সময় পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়।
এ সময় মানববন্ধন করতে না পারার বিষয়ে পুলিশকে দায়ী করে গেণ্ডারিয়া ডিআইটি পুকুর রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ইব্রাহিম আহমেদ রিপন বলেন, আমরা মানববন্ধন করার বিষয়টি বৃহস্পতিবারই শ্যামপুর থানা ও পুলিশের ওয়ারী জোনে জানাই। কিন্তু রাতে ওসি আমাকে ডেকে বলেন এই আয়োজন করা যাবে না। আয়োজন করলে কোনো খুনাখুনি হলে দায় আমাদের নিতে হবে। আমরা পুলিশের নির্দেশ মেনে মানববন্ধনটি করিনি। যদিও ঠিকই দখলদাররা পুকুরপাড়ে অবস্থান নিয়ে পিকনিক করেছে। আমরা মানববন্ধন করতে না পারলেও পরবর্তী সময়ে অনুমতি নিয়ে আরও বড় করে প্রতিবাদী অনুষ্ঠান করব।
এ সময় পুকুরপাড়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, নোঙরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুমন শামস ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ইবনুল সাইদ রানাসহ পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা।
এ সময় তাঁরা বলেন, পুকুরের মালিকানা নিয়ে ব্যক্তি বা সরকারি সংস্থার মধ্যে মামলা থাকতে পারে সেটি অন্য বিষয়। কিন্তু জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০, পরিবেশ আইন ও ড্যাপ অনুযায়ী কোনোভাবেই একটি পুকুর ভরাট করার বৈধতা নেই। মালিক যেই হবেন, তিনি পুকুরের মালিক থাকবেন, কিন্তু ভরাটের অধিকার তাঁর নেই। তাছাড়া নগরীর তাপ কমানো, অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর কিছু জলাশয় থাকা দরকার। যদিও আমাদের শহরে সেটি নেই। জলাধার না থাকায় আমাদের শহরে তাপ, বায়ুদূষণ এবং অগ্নিদুর্ঘটনা ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে। তাই আমরা চাই এই পুকুরটি যেন কোনোভাবেই না হারায়।
এ বিষয়ে শ্যামপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, এখানে পুকুরকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে। তারা আমাদের কাছ থেকে লিখিত কোনো অনুমতি নেয়নি। তাই যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তাদের কর্মসূচি না করার অনুরোধ করেছি। ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহানা আক্তারকে পুকুরপাড়ের কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর বাবা মো. সাইদুর রহমান বলেন, পুকুর রক্ষার কর্মসূচি ঠেকাতে নয়, মশক নিধনে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির জন্য লোকজন জড়ো করা হয়েছে। দখল নয়, পুকুরে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে পুকুরের চারপাশে স্থাপনা করে বেড়ি দিচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।
মন্তব্য করুন