জ্যৈষ্ঠের খরতাপে পুড়ছে দেশ। ঘরে-বাইরে কোথাও নেই এতটুকু স্বস্তি। নেই বৃষ্টির লক্ষণও। মে মাসের শেষ দিক থেকে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহ এখনও চলছে, যা আরও পাঁচ থেকে ছয় দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

রোববার আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের ৪৪টি আবহাওয়া স্টেশনের পরিস্থিতি তুলে ধরে। এতে দেখা যায়, ৪৪টি স্টেশনের মধ্যে ৩১টিতেই মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে ৪১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনাজপুরে এমন তাপমাত্রা গত ৬৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ১৯৫৮ সালের ৩ জুন দিনাজপুরে ৪১.১ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছিল। রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

এই তাপপ্রবাহের কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন মৌসুমি বায়ু আসার সময়। সাধারণত ৩১ মের মধ্যে মৌসুমি বায়ু উপকূলের টেকনাফ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর বিস্তার লাভ করে। কিন্তু এবার মৌসুমি বায়ু আসতে দেরি হচ্ছে। তবে এবারই যে এমন হচ্ছে, তা নয়। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গত বছর ২৩ জুন থেকে মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করে। এর আগের বছর ছিল ১৪ জুন। ২০১৫ সালের পর থেকে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করছে।

আষাঢ় মাস আসতে আর প্রায় এক সপ্তাহ বাকি। সবার আশা, বর্ষার আগমনে তখন বৃষ্টি নামলে হয়তো এই অসহনীয় গরম থেকে পরিত্রাণ মিলবে। কিন্তু এ নিয়েও তেমন কোনো সুখবর শোনাতে পারেননি আবহাওয়াবিদরা।

ড. মল্লিক বলেন, আগামী পাঁচ-ছয় দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি নামতে পারে। তবে ১৩ জুনের আগে সামগ্রিকভাবে তাপমাত্রা কমার মতো ভারী বৃষ্টির দেখা পাওয়া যাবে না।

কেন এত গরম এমন প্রশ্নে তিনি জানান, তাপপ্রবাহের মধ্যে গরম অসহনীয় হওয়ার মূল কারণ বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। তাছাড়া এল নিনো (প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ স্রোত) সক্রিয় হতে শুরু করায় এখানে আকাশ প্রায় মেঘমুক্ত। ফলে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ধরে সূর্যের প্রখর আলো ভূপৃষ্ঠে পতিত হতে থাকে। এ কারণেই বাতাসের গতিবেগ কম এবং জলীয় বাষ্পের আধিক্য বেশি। এল নিনো সক্রিয় হওয়ায় বর্তমানে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান, ভারত,  বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডসহ পুরো অঞ্চল ‘হিট ইঞ্জিন’ হিসেবে কাজ করছে।

এদিকে তাপপ্রবাহের মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রা ২৬.৫ এর ওপরে থাকা ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ। বর্তমানে সাগরের উপরিভাগের তাপমাত্রা ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি পর্যন্ত রয়েছে।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, প্রথমে আরব সাগরে ও পরে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। বঙ্গোপসাগরের ঝড়টি সর্বোচ্চ গভীর নিম্নচাপ পর্যায়ে যেতে পারে। মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ বাংলাদেশের ওপর ৭ জুন থেকে পড়া শুরু করবে। তখন দেশব্যাপী মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা আছে ১০ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত।