- বিনোদন
- ইউটিউব চ্যানেলে তারকারা
ইউটিউব চ্যানেলে তারকারা

ক্যাসেট ও সিডি যুগের সমাপ্তি ঘটায় অনলাইন হয়েছে গান প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। সেই সুবাদে কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ না হয়ে অনেকেই নিজ গানের প্রযোজনা শুরু করেছেন। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে তারকাশিল্পী ও সংগীতায়োজকদের অনেকেই এখন ধারাবাহিকভাবে গান প্রকাশ করে যাচ্ছেন। তারকাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে এবারের আয়োজন।
পেছন ফিরে তাকালে মনে হয়, চোখের পলকেই সব বদলে গেল। হারিয়ে গেল গানের ক্যাসেট, সিডি ও ভিসিডি। অলনাইন হয়ে উঠল গান প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। গানের পাশাপাশি প্রযোজকের খাতায় নাম লেখানো শুরু করলেন শিল্পী, সুরকার ও সংগীতায়োজকরা। আসলে প্রযোজনায় আসা ছিল সময়ের দাবি, যার বীজ রোপিত হয়েছে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে। একদিকে চলছিল গানের মেধাস্বত্ব নিয়ে আন্দোলন; অন্যদিকে বিলুপ্ত হতে শুরু করেছিল গান প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম অডিও ক্যাসেট, সিডি ও ভিসিডি। ঠিক সেই সময়েই অনলাইন দুনিয়া খুলে দেয় সম্ভাবনার দুয়ার।
বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি ইউটিউব হয়ে ওঠে গান ও অ্যালবাম প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। গানের বাইরেও নানা বিষয় তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হয় সবার। তাই অডিও-ভিডিও প্রযোজক ও প্রকাশকদের দ্বারস্থ না হয়ে শিল্পী, সুরকার, মিউজিশিয়ানরাই নাম লেখান প্রযোজকের খাতায়। শুরুর দিকে নিজের গানের আর্কাইভ করার লক্ষ্যে অনেকে ইউটিউব চ্যানেল খুলছিলেন। পরে রীতিমতো পেশাদারি ভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করেন অনেকে। এখন অনেকেই নিজস্ব চ্যানেলের আয়োজন নিয়ে প্রশংসা কুড়ানোর পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবে পাচ্ছেন সাফল্যের দেখা। হাবিব ওয়াহিদের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। যার এইচডব্লিউ ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইব সংখ্যা মাত্র ক’বছরেই ৮ লাখ ১৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ৯৪টি কন্টেন্ট প্রকাশের মধ্য দিয়ে অগণিত সংগীতপ্রেমীর মনোযোগ কেড়েছেন এই শিল্পী ও সংগীত পরিচালক।
এখন নিজের চ্যানেলের বাইরে খুব একটা গান প্রকাশ করতেও দেখা যায় না তাঁকে। তাই শুরুতেই হাবিবের কাছে প্রশ্ন ছিল– নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল গান প্রযোজনায় কতটা সম্ভাবনাময় হয়ে ধরা দিয়েছে? এর জবাবে হাবিব ওয়াহিদ বলেন, ‘শিল্পী ও মিউজিশিয়ানদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানলগুলো প্রাথমিক অবস্থা কাটিয়ে দিন দিন সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে– এ মুহূর্তে এটি বলা যায়। যদিও নিজের গানের আর্কাইভ করার লক্ষ্যে এইচডব্লিউ চ্যানেলটি খুলেছিলাম। পরে নিজের গানের পাশাপাশি অন্যদের গানও প্রকাশ করেছি। ভালো লাগার বিষয় হলো, নিজস্ব চ্যানেল থেকেই বেশ কিছু তরুণ শিল্পীকে পরিচয় করিয়ে দিতে পেরেছি।’
হাবিবের মতো একই রকম কথা শোনা গেছে শিল্পী ও সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদার ও হৃদয় খানের মুখে। তাঁদের কথায়, নিজের সৃষ্টিকে আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল বড় ভূমিকা রাখছে। ১ লাখ ৬২ হাজার সাবস্ক্রাইবার আর ২৪২টি ভিডিও আছে বাপ্পার চ্যানেলে। বাপ্পার কথায়, এই সংখ্যা আরও বাড়বে, যদি গান প্রকাশের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়। তিনি মনে করেন, পুরোনো ব্যান্ড ও জনপ্রিয় শিল্পীদের উচিত নিয়মিত নতুন গান প্রকাশ করা। তাহলে একদিকে যেমন ভালো গানের সংখ্যা বাড়বে, তেমনি দর্শক-শ্রোতার মনোযোগ সরে যাবে সস্তা কনট্যান্ট থেকে।
তাঁর এই কথার প্রমাণ মেলে সময়ের আলোচিত শিল্পীদের চ্যানেলের দিকে তাকালে। মাত্র ৮৩টি ভিডিওর সুবাদে হৃদয় খানে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৭ লাখ ৮৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যা রীতিমতো ঈর্ষণীয়। হৃদয় বলেন, ‘নিরীক্ষাধর্মী কাজ তুলে ধরার জন্য নিজস্ব চ্যানেল হতে পারে বড় মাধ্যম। এর প্রমাণ এরই মধ্যে পেয়ে গেছি। নিজের পাশাপাশি নতুনদেরও সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি। এই সুযোগ অন্য অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে কতটা পাওয়া যেত, তা বলা কঠিন। বেসবাবাখ্যাত অর্থহীন ব্যান্ডের শিল্পী সুমনের কথায়, ‘ফিনিক্সের ডায়েরি’ অ্যালবাম প্রকাশ করে যে সাড়া পেয়েছি, তা তুলনাহীন। কেউ প্রশ্নই তোলেনি, ব্যান্ডের নিজস্ব চ্যানেলেই কেন গান প্রকাশ করলাম। আসলে সৃষ্টিটাই আসল, প্রকাশনা মাধ্যম নয়। বরং নিজেদের চ্যানেল মানেই বাড়তি স্বাধীনতা।’
একই সুরে কথা বলেছেন শাফিন আহমেদ, সুরকার শিশির আহমেদ, অবসকিওর, শিরোনামহীন, আভাস ব্যান্ডের সদস্য থেকে শুরু করে আরও অনেকে। নিজের গানের আলাদা প্ল্যাটফর্ম রেখে যাওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের আয়োজন করে শ্রোতা প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব– এমন আশা প্রকাশ করেছেন শিল্পী সামিনা চৌধুরী, কনা, ইমরান, লিজা, পড়শী, কর্ণিয়া, ঐশীসহ গানের ভুবনের তরুণ, তারকাশিল্পী ও সংগীতায়োজকরা।
মন্তব্য করুন