- বিনোদন
- লোডশেডিংয়ে সীমাহীন কষ্ট চমেক হাসপাতালে
লোডশেডিংয়ে সীমাহীন কষ্ট চমেক হাসপাতালে

তীব্র তাপদাহের সঙ্গে লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন হাসপাতালে আসা সেবাপ্রার্থীরা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে জেনারেটর থাকার পরও দিনে-রাতে একাধিকবার লোডশেডিং হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। জেনারেটর দিয়ে কয়েকটি অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম চালানো সম্ভব হলেও আইসিইউ, এনআইসিইউ, সিসিইউ, সার্জারি, জরুরি বিভাগ, জটিল অপারেশনের মতো স্পর্শকাতর বিভাগে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোগী নিয়ে দুশ্চিন্তায় স্বজনরাও। একই অবস্থা আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের।
যদিও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান সমকালকে বলেন, ‘হাসপাতালে লোডশেডিংয়ের তেমন প্রভাব নেই। কিছু সময় বিদ্যুৎ গেলেও জেনারেটর থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হচ্ছে না।’ চমেক হাসপাতালে শুধু বহির্বিভাগেই দিনে গড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নেন। গতকাল বুধবার সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬০২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এ দিন ১ হাজার ৩১৩ শয্যার বিপরীতে হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৮৭০ জন। রোগীর সঙ্গে এক থেকে তিনজন স্বজন থাকেন। লোডশেডিং রোগীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এক ঘণ্টা অবস্থানে এ প্রতিবেদক দু’বার লোডশেডিং পান। প্রথমবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে যায়, ১৫ মিনিট পরে আসে। দ্বিতীয়বার দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে গিয়ে ছিল প্রায় এক ঘণ্টা। অবস্থা বেগতিক দেখে চার্জার ফ্যান এনে কিছুটা হলেও স্বস্তি খুঁজতে দেখা যায় অনেককে।
স্বজনরা রোগী সমানে বসে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। লোডশেডিংয়ের কারণে খাবার পানির সংকটের কথাও জানান বেশ কয়েকজন। হাসপাতালে শিশুকে নেবুলাইজড করার সময় বিদ্যুৎ যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়ার কথা জানান একাধিক স্বজন। এদিকে একই অবস্থা আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের। এখানে বহির্বিভাগে দিনে গড়ে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। ভর্তি রোগী হাজারের কাছাকাছি। লোডশেডিংয়ের কারণে এখানে ১ হাজার ১৫০ ও ১ হাজার ২৫০ ভোল্টের দুটি জেনারেটর দিয়েও চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি বৈঠকে ৬৫০ ভোল্টের আরেকটি জেনারেটর কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ সমকালকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত লোডশেডিং বাড়ছে। চিকিৎসাসেবা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ অফিসকে তাগাদা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এ জন্য পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন জেনারেটর কেনা হচ্ছে।’ অভিন্ন অবস্থা চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। এখানে গত কয়েক দিন রাতদিন মিলিয়ে ১০ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জেনারেটরের জ্বালানি খরচ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। আগে যেখানে দিনে ৩০ হাজার টাকা খরচ হতো, এখন তা ৭০ হাজারে ঠেকেছে।
হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মো. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, ‘আইসিইউ, এনআইসিইউ, পিআইসিইউতে ভর্তি রোগীদের বেশিরভাগ সময় অক্সিজেন মাস্ক থাকে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে ছন্দপতন ঘটে বড় বিপদ হতে পারে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি লোডশেডিং না দিতে অনুরোধ করেছি।’ বিদ্যুৎ অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। এখন চাহিদার বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে দেওয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন