শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় গ্রেপ্তার ও কারাবাসের তথ্য গোপন করে ১৯ বছর চাকরি, পদোন্নতি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল ও অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সরকারের তিন সচিব, দুই মহাপরিচালকসহ ৮ জনকে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. খবির উদ্দিন ভূইয়া শুক্রবার সাংবাদিকদের নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নোটিশে দুই সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্ত দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। নয়তো এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি জানান, গত ২২ মে একটি জাতীয় দৈনিকে দুই চিকিৎসকের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ‘অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল ও অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজা শিশু গৃহকর্মীকে গুরুতর দগ্ধ করে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করেছিলেন। ফৌজদারি মামলা ও কারাবাসের তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিধান থাকলেও ওই তথ্য লুকিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কারাবাসের দিনগুলো ব্যক্তিগত, পারিবারিক কারণে কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখিয়ে অর্জিত ছুটি মঞ্জুর করান। অতঃপর ১৯ বছর কর্মরত থেকে দফায় দফায় পদোন্নতি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন।’ এটি আইনত অপরাধ। এজন্য তিন সচিবসহ ৮ জনকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত বৃহস্পতিবার আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজাকে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গণমাধ্যেম প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বিন্নাকুড়ি গ্রামের মাতৃহীন শিশু গৃহকর্মী মোস্তাকিনাকে ২০০৪ সালে ১ মে গরম ইস্ত্রি দিয়ে দগ্ধ করেছিলেন চিকিৎসক দম্পতি ডা. ফাতেমা দোজা ও ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। ফাতেমা তখন ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আর জামাল ছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের রেজিস্ট্রার। ওই ঘটনার পরদিন ২ মে তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিলেন রমনা থানার তৎকালীন এসআই মো. আবদুল্লাহেল বাকী। সেদিনই ঢাকার পরীবাগ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন আদালতের আদেশে দম্পতিকে পাঠানো হয় জেলহাজতে।