আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাউল শিল্পী আবুল সরকার (বয়াতি) মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। রোববার বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিজের ফতুল্লার বাড়িতে রাত নয়টার দিকে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় পড়ে যান। পড়ার পর আর জ্ঞান ফেরেনি তাঁর। বাড়ির পাশেই বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা রাত সাড়ে নয়টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তারই শিষ্য বাউল শিল্পী শাহ আলম সরকার। তিনি জানান, রাতেই তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি চার ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

শাহ আলম সরকার আরও জানান, গতকাল রাত সাড়ে ১২টায় স্থানীয় ফতুল্লা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে বাউল শিল্পী আবুল সরকার বয়াতির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। জানাজায় আত্মীয়স্বজন, সহশিল্পী, ভক্ত, বাউল শিল্পী সমিতির নেতা ও সদস্যরা অংশ নেন।

মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার সুরদিয়া গ্রামে সরদার বংশে বাউল শিল্পী আবুল সরকার বয়াতির জন্ম। বাবা কফিল উদ্দিন সরদার ছিলেন তরিকতপন্থী। এর ফলে ছোটবেলা থেকেই পারিবারিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষা পেয়েই তাঁর বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই তিনি লেখাপড়ায় উৎসাহী ছিলেন এবং বাউল গান খুবই পছন্দ করতেন। গ্রামের বাড়ি কুরুটিয়া হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি ঢাকার শ্যামপুরে খালার বাড়িতে চলে যান। ওই সময়েই সেখানকার পালা শিল্পী মো. সাহাব উদ্দিন বয়াতির দলভুক্ত হন তিনি। এরপর ওস্তাদের আদেশে তিনি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৩ সালে ভর্তি হন ওয়াইজঘাট বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে।

সুফি গায়ক, পালা কবি ও প্রখ্যাত ধর্মীয় পালা গায়ক হিসেবেই আবুল সরকার দেশ–বিদেশে বেশি খ্যাতি অর্জন করেছেন। গানপিপাসু শ্রোতাসহ পালা গায়ক-গায়িকাদের কাছে ‘খাজা বাবার জীবনী’ ও ‘বড় পীরের জীবনী’ গানের স্রষ্টা হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন তিনি।

বাউল শিল্পী আবুল সরকার (বয়াতি) ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ বেতারের শিল্পী হিসেবে এবং ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তাঁর কণ্ঠে গাওয়া পালা গানের এক হাজারের অধিক অডিও সিডি ও ভিসিডি বের হয়েছে, যা সারা বাংলাদেশে পাওয়া যায়।