জীবনটাকে বহু আগেই নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি: রুনা লায়লা
রুনা লায়লা। ছবি:সংগৃহীত
মীর সামী
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১২:৪০ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১২:৫২
রুনা লায়লা। বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার। আজ তাঁর জন্মদিন। আজ তিনি ৭২ পেরিয়ে ৭৩ বছরে পা রাখছেন। জন্মদিন ও শিল্পীজীবনের বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে...
শুভ জন্মদিন, দৈনিক সমকালের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ। আপনাদের মাধ্যমে আমার গানের শ্রোতা-ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা জানাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে আগামী দিনগুলো আনন্দে কাটাতে পারি। আল্লাহ যেন আমার পরিবারের সবাইকে সুস্থ রাখেন, ভালো রাখেন। আমি যেন আরও সুন্দর সুন্দর গান শ্রোতাদের উপহার দিতে পারি।
আজকের দিনটি কীভাবে উদযাপন করবেন?
জন্মদিন মানেই আরও একটি বছর জীবনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। অভিজ্ঞতার ঝুলি ঋদ্ধ হওয়া। খুব সাধারণভাবেই আজকের দিনটি কাটবে। গত বছরের এ দিনে কলকাতা ছিলাম। জন্মদিনে সবসময় যা হয়, এদিন সন্ধ্যায় সহকর্মী ও বন্ধুরা আসে। এ ছাড়াও এমনিতে সারাদিন ধরে ফোনে শুভেচ্ছা জানান শুভাকাঙ্ক্ষীরা। পরিবারের পাশাপাশি সবাই বিশেষ দিনটিতে আমাকে মনে করেন। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানাজন নানা কথা লেখেন খুব গুছিয়ে। সেসব কথা আমি মন দিয়ে পড়ি।
গত বছর বলেছিলেন, আপনার বয়স ১৭ বছর। এবার বাড়ল...
বয়স বাড়েনি। বয়স আমার ওখানেই আটকে আছে (হাসি)। আসলে মনের তারুণ্যই বড় কথা। মনে তারুণ্য থাকলে সবকিছুই ভালো লাগে। আমি সব সময় বিশ্বাস করি, মানুষের দেহের বয়স বাড়ে, মনের নয়। তাই তো বয়স আমার কাছে একটি সংখ্যা মাত্র। আমি কখনও মনের বয়স বাড়তে দিই না।
জন্মদিন এলে কাকে মনে পড়ে?
প্রতি বছর জন্মদিন এলে মনে পড়ে বাবা-মা ও বড় বোনের কথা। হয়তো সবাই থাকলে জীবনের বিশেষ দিনটি আরও বিশেষায়িত হতো। তারপরও যারা আছে, তাদের নিয়ে ভালো থাকাটা জরুরি। আলহামদুলিল্লাহ, সবাইকে নিয়ে ভালো আছি।
আপনার কাছে জীবন মানে কী?
আমাদের জীবন একটাই। তাই আমি সব সময় মনে করি, জীবনকে যতটা উদযাপন করা যায় ততটাই ভালো। এ উদযাপন কাজে, সম্পর্কে ও জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে হতে হয়। আর জীবন মানে সব ইতিবাচকভাবে দেখা। নিজে ইতিবাচক থাকলে সবই ঠিক। মনের জোর থাকতে হয়। মনের জোর থাকলে অনেক বাধা অতিক্রম করা যায়। আমার জীবন হচ্ছে, আমার গান ও পরিবার। পরিবার নিয়েই আমার জীবনটা। দুঃখ তো থাকে সবার জীবনেই। বাবা-মা-বোনের কথা মাঝে মধ্যেই মনে পড়ে। এগুলো ছাড়া জীবনকে ফুল অব জয় হিসেবে বলা যায়।
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গ। এরই মধ্যে সংগীতজীবনের ৬০ বছর পার করলেন। বিষয়টি ভাবতে কেমন লাগে?
কীভাবে এতগুলো বছর গানের সঙ্গে কেটে গেল বুঝতেই পারিনি। মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি অসম্ভব কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে শিল্পীজীবন দিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার রহমত, বাবা-মায়ের সহযোগিতা এবং আমার গুরুদের আশীর্বাদ, সবার দোয়া ও ভালোবাসায় আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। এ ভালোবাসা, আশীর্বাদ ও শ্রদ্ধা যেন চিরকাল থাকে আমার সঙ্গে। অন্তর থেকে ধন্যবাদ দিই আমার ভক্ত-দর্শক-শ্রোতাদের। তারা আমার গান পছন্দ করেছেন সারাটা জীবন। তাই আমি এখনও গান করছি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের যে ভালোবাসা, সমাদর আর শ্রদ্ধা পেয়েছি তা বর্ণনা করা যাবে না। এমন ভালোবাসা ক’জনের ভাগ্যে জোটে জানি না।
গত ষাট বছর ধরে আপনি আপনার গায়কী ধরে রেখেছেন; যা অনেক শিল্পীর ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না...
আমি আমার জীবনকে বহুকাল আগে থেকেই ডিসিপ্লিনের মধ্যে এনেছি। শুধু নিয়ম করে রেওয়াজ নয়। পুরো জীবনপ্রণালি হতে হয় নিয়মতান্ত্রিক। এক্ষেত্রে সারগাম করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি খাদ্যাভ্যাস, শরীরের প্রতি যত্নশীল, ঠিক ততটাই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান। আমি মনে করি একজন শিল্পীকে দীর্ঘকাল তাঁর শিল্পস্বত্বার মধ্যে নিবিষ্ট থাকতে হলে তার চারপাশটা সুস্থ ও সুন্দর রাখতে হয়। পজিটিভ চিন্তাভাবনা, পজিটিভ এনার্জির সঙ্গে ওঠাবসা এবং নিজেকে প্রতিনিয়ত ইমপ্রুভ করার মানসিকতা থাকতে হয়।
নতুন গান নিয়ে পরিকল্পনা আছে কী?
গান নিয়েই তো আমার সারাবেলার ভাবনা। বেশকিছু পরিকল্পনা আছে নতুন গান নিয়ে। আমার সুরে যেমন কয়েকজন শিল্পীকে নিয়ে গানের পরিকল্পনা আছে, ঠিক তেমনি আমিও অন্যের সুরে গান গাইবো তেমন পরিকল্পনাও আছে। যেমন এরইমধ্যে সাদেক আলীর সুরে বেতারে প্রচারের জন্য দুটি গান করেছি। সামনে আরও গান আসছে।
আর সুরকার রুনা লায়লার খবর কী?
সুরকার রুনা তাঁর নিজের মতো করে কাজ করে চলেছেন। এরই মধ্যে বেশকিছু গানেরও সুর তৈরি করেছি। চলতি বছরের শেষে, না হলে আগামী বছরের শুরুতে গানগুলোতে কণ্ঠ দেবেন এ প্রজন্মের সংগীতশিল্পীরা।
- বিষয় :
- রুনা লায়লা
- সাক্ষাৎকার
- সংগীতশিল্পী