ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

‘স্কুইড গেম’ সিজন-২: মরা-বাঁচার খেলায় মেতেছে পুরো দুনিয়া

‘স্কুইড গেম’ সিজন-২: মরা-বাঁচার খেলায় মেতেছে পুরো দুনিয়া

ছবি: নেটফ্লিক্স

সাইফান সানাফ

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৩:৩৩

‘স্কুইড গেম’-এর বিষয় কী? এটি একটি গেম। একেকটা এপিসোড, একেকটা প্রতিযোগিতা। যে হারবে, সে মরবে! প্রচণ্ড রুদ্ধশ্বাস, নৃশংস এই মরা-বাঁচার খেলায় মেতেছে পুরো দুনিয়া। যে জিতবে, সে পাবে ৩৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার। খেলছে কারা? ধারদেনায় ডুবে থাকা আমজনতা। সে নিম্নমধ্য বিত্ত থেকে, অতিশিক্ষিত ব্যেবসায়ী, গ্যাং স্টার, পকেটমার, মধ্যিবিত্ত দম্পতি থেকে মৃতপ্রায় বৃদ্ধ– কে নেই!

দশ বছর ধরে যে শোয়ের জন্যদ কোরিয়ান নির্মাতা হং দুং ইয়ক, প্রোডিউসার পাননি, সেই শো আজ কোটি কোটি মানুষের মুখে। ‘স্কুইড গেম’-এ আমরা দেখতে পাই নিরুপায় কিছু মানুষ, বেপরোয়া হয়ে ছুটছে টাকার পেছনে। সামনে ঝুলছে টাকা। সেই অর্থের লোভে একে অপরের প্রাণ নিচ্ছে। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও এই ভয়ঙ্কর খেলায় এগিয়ে আসছে কিছু মানুষ এবং আরও একদল মানুষ এই ওয়েব সিরিজে আছে, তাদের দেখা যায় ‘ভিআইপি’দের চরিত্রে। তারা বসে বসে এই মরণ-বাঁচনের লাইভ শো দেখছে এবং এই খেলার পেছনে মোটা টাকা ব্য য় করছে।

২০২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে নেটফ্লিক্সে দেখা যাচ্ছে হং দুং ইয়ক পরিচালিত দক্ষিণ কোরিয়ার এই সিরিজটি। সিরিজটি প্রচারের পর নব্বইটি দেশে ‘স্কুইড গেম’ সর্বোচ্চ ভিউয়ারশিপ দখল করে। সিরিজটি জনপ্রিয়তার কারণে নেটফ্লিক্স এর সাবটাইটেল তৈরি করে ৩৭টি ভাষায় এবং ৩৪টি ভাষায় ডাব করে।

শোনা যায়, শোয়ের জনপ্রিয়তার জেরে নাকি নেটফ্লিক্সের ব্যেবসা, সাবস্ক্রিপশন এক ধাপে অনেকটাই বেড়েছিল। এবার প্রায় তিন বছর পর আসছে নতুন এপিসোড। বলা যায়, ওয়েব দুনিয়ায় আবারও ফিরেছে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এই খেলা। প্রথম সিজনে খেলা শেষ হয়নি। তাই এবার দ্বিতীয় মৌসুমে মুক্তি দিয়েছেন নির্মাতা। তাঁর কথায়, সত্যি ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ‘স্কুইড গেম’। 

দক্ষিণ কোরিয়ার ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি, তাঁর নিজের একটা সময়ের আর্থিক অবনতি, তাঁর চারপাশের বন্ধুবান্ধব সব থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন পরিচালক। 

প্রথম কিস্তির মতো এবারেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সিরিজটির বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রগুলো। চলুন, সেগুলোর মধ্য থেকে জনপ্রিয় কয়েকটি চরিত্রের নানা দিক সম্বন্ধে পর্যালোচনা করা যাক। সং গি-হন: প্লেয়ার ৪৫৬। বিজয়ী হিসেবে বেঁচে থাকা একমাত্র ব্যক্তি সং গি-হন তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে খুঁজে চলেছে বেনামী ‘রিক্রুটার’কে। উদ্দেশ্য একটাই, আর তা হচ্ছে, অমানবিক স্কুইড গেমকে ধ্বংস করা। দ্বিতীয় সিজনে তার এক বিস্ময়কর এবং অনুপ্রেরণাদায়ক রূপান্তর দেখা গেছে। কিম ঝুন-হি: প্লেয়ার ২২২। এই চরিত্রের পেছনের গল্পটা না জানা গেলেও অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া কিম ঝুন-হি বেশ শক্তিশালী একটি চরিত্র। সহপ্রতিযোগী লি মাইয়ং-গির পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি তাঁর নৈতিক অবস্থানকে বিশেষায়িত করে। ছো হিয়ন-জু: প্লেয়ার ১২০। 

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শারীরিক পরিবর্তনের খরচ জোগাতে খেলায় অংশ নেয় ট্রান্সজেন্ডার ছো হিয়ন-জু। তাঁর অংশগ্রহণের আরও একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁর মতো জীবনধারণ করা মানুষগুলোকে অনুপ্রাণিত করা। ঝাং জিয়ম-ঝা: প্লেয়ার ১৪৯। ছেলে ইয়ং-সিককে ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত করতে মা ঝাং জিয়ম-ঝায়ের প্রবেশ ঘটে এই প্রাণঘাতী খেলায়। কিন্তু টুর্নামেন্টে প্রবেশের পর তাঁর ছেলেকেও সে একজন প্রতিযোগী রূপে দেখতে পায়। থ্যানোস: প্লেয়ার ২৩০। বেগুনি চুল, অদ্ভুত ব্যাপার, এবং সবকিছু থোরাই কেয়ার করা থ্যানোসের মতো চরিত্রটির পুরো সিরিজে আর কারও সঙ্গেই মিল পাওয়া যাবে না। দ্য ফ্রন্ট ম্যান: প্লেয়ার ০০১। কাহিনির প্রয়োজনেই নিজের নামের পেছনের রহস্যটা প্রথম সিজনে একদম শীর্ষে রেখেছিল দ্য ফ্রন্ট ম্যান। দ্বিতীয় সিজনে ওহ ইয়ং-ইল নামে গোপনে প্লেয়ার ০০১ হিসেবে সে প্রবেশ করে গেম-এ। পার্ক ইয়ং-সিক: প্লেয়ার ০০৭। 
সিরিজে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মানসিক দুর্বলতার প্রতীক বলা যেতে পারে পার্ক ইয়ং-সিক চরিত্রটিকে। ঋণের দায় থেকে বাঁচার জন্য অংশ নেওয়া খেলায় বৃদ্ধ মাকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় সে। অথচ গেমের পরিস্থিতি তাঁকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষে পরিণত করে। 

রুদ্ধশ্বাস এই ‘স্কুইড গেম’ এক টানে দেখে ফেলার পর কেউ অত তলিয়ে ভাববে না, যে বাঁচার উপায় থাকে। সব সময়ই দুটো রাস্তা থাকে। পুরো পৃথিবী একদিকে গেলে, কোথাও না কোথাও একজন থাকে যে সাম্য বাদ, মানবতাবাদের রাস্তাটা বেছে নেয়। মুশকিল এটাই যে, আমরা কেউই সেই ‘একলা একজন’ হতে চাই না।

আরও পড়ুন

×