ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

‘দেশের অনেক পরিবর্তন হয়েছে, নানা প্রান্তে তার ছাপ স্পষ্ট’

‘দেশের অনেক পরিবর্তন হয়েছে, নানা প্রান্তে তার ছাপ স্পষ্ট’

জুবায়ের বাবু। ছবি: সমকাল

রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৫:৫৩ | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৫:৫৩

জুবায়ের বাবু। নন্দিত নির্মাতা। প্রবাস থেকে দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তিনি। প্রস্তুতি নিচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাণের। চলচ্চিত্র নিয়ে নিজস্ব ভাবনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর কথা বলেছেন রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ 

৮ বছর পর দেশে ফিরলেন। কী পরিবর্তন চোখে পড়ছে?
অনেক কিছুই বদলেছে। বিমানবন্দর থেকে বেরুতেই চোখে পড়েছে একের পর এক ফ্লাইওভার। সেই ফ্লাইওভারে জ্যামে আটকা পড়ে থাকার অভিজ্ঞতাও হয়েছে [হাসি]। তবে হ্যাঁ, দেশের অনেক পরিবর্তন হয়েছে, নানা প্রান্তে তার ছাপ স্পষ্ট। 

দেশে কী স্থায়ী নাকি আবার ইংল্যান্ডে ফিরে যাবেন?
যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকব। যেহেতু আমার পরিবার ইংল্যান্ডে থাকে, আমিও সেখানকার মিডিয়ায় প্রফেশনালি কাজ করছি, তাই চাইলেও এখন স্থায়ীভাবে ফেরা সম্ভব না।  

এবারের সফর কি শুধুই বেড়ানোর উদ্দেশ্যে?
শুধু বেড়ানোর উদ্দেশ্যে নয়, কিছু করার পরিকল্পনাও আছে। প্রথম কথা হলো, দেশের প্রতি হৃদয়ের যে টান, যে অমোঘ আকর্ষণ, সেটাই আমাকে এখানে টেনে এনেছে। আমি প্রায়ই স্বপ্ন দেখতাম, হোয়াইট চ্যাপেল থেকে রিকশায় করে বাড়ি ফিরছি; যা আমাকে আসলে দেশের কথাই মনে করিয়ে দিত। এত বছর দেশ ছেড়ে কীভাবে বিদেশ বিভুঁইয়ে পড়ে আছি তা ভাবিয়ে তুলত। দেশের মাটির ঘ্রাণ, আকাশ-বাতাস এখানকার ধুলা-বালি গায়ে মাখা, টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ আরও কত কিছু যে মনকে নাড়া দিত, তা বলে শেষ করা যাবে না। তাই আগে হোক পরে হোক, দেশে আমাকে ফিরতেই হতো। তবে বিদেশে থেকে একটা লাভ হয়েছে, নির্মাতা হিসেবে যে শিক্ষাটা ছিল স্কুলপর্যায়ের, বিদেশে গিয়ে তা কলেজ লেভেল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছি। যদিও সেই শিক্ষা পর্বটা একটু দীর্ঘ হয়ে গেছে। দেরিতে হলেও প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দেওয়ার মতো করেই চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দিচ্ছি।  

সিনেমা নির্মাণের উদ্দেশ্যেই কী তাহলে দেশে আসা?
চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই, প্রস্তুতিও নিচ্ছি, এ সবই সত্যি। তবে এ ইচ্ছা পূরণের জন্যই যে দেশে আসা, বিষয়টি এমন নয়। সিনেমাপ্রীতি তো ছোটবেলা থেকেই। তাই নিজের ভাবনাকে ফ্রেমবন্দি করে রাখতে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে মিউজিক ভিডিও নির্মাণ শুরু করেছিলাম। যার সূত্র ধরে একুশে টেলিভিশনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ১০টা-৫টা চাকরিতে অনীহা ছিল, তাই শর্ত বেঁধে দিয়ে একুশে টেলিভিশনে কাজ করেছি। যাতে করে স্বাধীনভাবে অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার সুযোগ থাকে। এ সবই করেছি, নির্মাতা হিসেবে নিজেকে যোগ্য করে তোলার জন্য। একই কারণে একুশে টেলিভিশন যখন বন্ধ হওয়ার পর, সায়মন ড্রিংয়ের প্রস্তাব ফেরায়নি। তাঁর আমন্ত্রণে ইংল্যান্ডে গিয়েছি, মিডিয়ায় কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে পরিণত করে তোলার চেষ্টা করেছি। প্রায় ৯ বছর সেখানে কাজ করার পর এখন দেশে ফিরে চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে ভাবা শুরু করেছি। আমি মনে করি, বিশ্বের নানা প্রান্তে যেসব স্কিলড মানুষ আছে, কোনো না কোনো সময় ফিরে এসে দেশকে তাদের কিছু দেওয়া উচিত। নতুবা দেশের প্রতি এটা অন্যায় হয়ে যাবে। তাই যতটুকু আমি শিখেছি, তার মাধ্যমে দেশকে কিছু দেওয়ার এখনই সময়। 

কী ধরনের সিনেমা নির্মাণ করতে চান?
মুক্ত গল্প নিয়ে কাজ করতে চাই; যে গল্প একান্ত আমাদের। অনেকে বলেন, ভালো গল্প নেই বলে সিনেমা ভালো হচ্ছে না? এই কথা আমাকে অবাক করে। যাদের সাহিত্যের বিশাল ভান্ডার রয়েছে, তাদের ভালো গল্পের অভাব– এ কথা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সাহিত্য কতটা সমৃদ্ধ তা বুঝতে হলে শুধু পড়াশোনা দরকার, এর বেশি কিছু নয়। কারিগরি মানে আমরা হয়তো অনেকের চেয়ে পিছিয়ে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের না হলেও নির্মাণ কিছুটা হলেও উন্নত করা সম্ভব। তবে মূল বিষয় হলো, দর্শকের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা, সেটা নিজের গল্প দিয়ে যতটা সম্ভব, ততটা অন্যদের অনুকরণে সম্ভব নয়। এক সময় ইরানিরা হলিউডের আদলে চলচ্চিত্র নির্মাণ করত। খোমেনি যুগের আগেও সেটা অহরহ চোখে পড়েছে। কিন্তু যখন থেকে তারা তাদের সিনেমায় নিজেদের গল্প বলা শুরু করেছে, তখন শুধু ইরান নয়, বিশ্বজুড়ে তা প্রশংসা কুড়ানো শুরু করেছে। নিজের গল্প দিয়েই ইরানি সিনেমা আজ কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে, তা দেখে বিস্ময় জাগে! ইরানের মতো একই উদাহরণ কোরিয়ান সংস্কৃতি নিয়েও তুলে ধরা যায়। তাই আমার মতে, আমাদের গল্পই হতে পারে দেশীয় সিনেমার বড় শক্তি। 

নির্মাণ প্রসঙ্গ ছেড়ে এবার ভিন্ন বিষয়ে আসি; গানের সঙ্গে সম্পর্ক কী পুরোপুরি ছিন্ন করে ফেলেছেন?
তীর্থক ব্যান্ড ছাড়ার পর গান করিনি ঠিকই, কিন্তু গানের রিদমটা প্রতিনিয়ত অনুভব করি। ঠিক হার্টবিট যেমন আমাদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করে, ঠিক সেভাবেই প্রতিটি কাজ ছন্দ মিলিয়ে করার চেষ্টা করে যাই। তীর্থকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, কারণ এই ব্যান্ডই আমার কল্পনাশক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বল্প ব্যাপ্তির একটি গানও হয়ে উঠতে পারে ঘটনাবহুল জীবনের গল্প– তা জেনেছি গানের জগতে পা রাখার পর।
 

আরও পড়ুন

×