- ফ্যাশন
- আধুনিক গৃহসজ্জায় বেতের নান্দনিক আসবাব
আধুনিক গৃহসজ্জায় বেতের নান্দনিক আসবাব

বেত দিয়ে আসবাব তৈরির ইতিহাস অনেক পুরনো। বেতের তৈরি আসবাব শিল্পের ইতিহাস ঘেঁটে এর নির্দিষ্ট কোনো সৃষ্টিকাল পাওয়া না গেলেও অনুমান করা হয়ে থাকে আদি চীনে ঝুঁড়ি বুনন থেকে এর শুরু। খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ এর দিকের মিশরীয় সমাধিস্থলগুলোতে বেতের চেয়ারের নিশানা পাওয়া যায়। উনবিংশ শতাব্দীতে ডাচ ও ইংরেজদের আসবাবে বেতের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আর অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ক্যাফেগুলোতে বেতের চেয়ারের ব্যবহার হতো।
একটা সময় ছিলো যখন আমাদের দেশেও বেতের আসবাবের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। তখন ঘরের আসবাবপত্র বলতে প্রথমেই আসত বেতের কথা। বাড়িতে বইয়ের সেলফ, বসার মোড়া, সোফাসেট, খাট, অধিকাংশ আসবাবপত্রই ছিল বেতের। সাধারণ থেকে শুরু করে অভিজাত শ্রেণির মধ্যেও কদর ছিল বেশ। তবে কালের পরিক্রমায় বেতের আসবাবপত্রের ব্যবহার কমে গেলেও আধুনিক যুগে এসে গৃহসজ্জায় সৌখিনতার ছাপ ফেলতে আবারও বেতের আসবাবপত্রের ব্যবহার বেশ পরিলক্ষিত।
মাঝে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই শিল্পের চর্চায় নতুন প্রাণ ফিরে পাওয়ার এক সম্ভাবনাময় আলোকরেখা উঁকি দিচ্ছে আবারও। আধুনিক গৃহসজ্জায় নতুনত্ব হিসেবে বিশেষ কদর পাচ্ছে বেতের তৈরি নান্দনিক সব আসবাব। প্রাকৃতিক রং, কালজয়ী সৌন্দর্য, বহুমুখী ব্যবহার, হালকা ওজনের ও দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় বিগত কয়েক বছরে আবারও বিশ্বব্যাপী বেড়েছে এর ব্যবহার। ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাব, ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবে এই শিল্পের জুড়ি মেলা ভার। বেতশিল্পের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে অনেকেই। আবারও নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে বেত দিয়ে নান্দনিক সব আসবাব আর গৃহসজ্জার নানা উপকরণ তৈরির কাজ। বাড়ির আভিজাত্য আর ঘরের শোভা বাড়াচ্ছে। যার ফলে এর জনপ্রিয়তাও বেড়ে চলেছে।
বেতশিল্পে সমৃদ্ধির কারণে রাজশাহী মহানগরীর একটি এলাকার নামই আছে বেতপট্টি। সিলেট নগরের ঘাসিটুলা এলাকায় ঐতিহ্যবাহী বেত-বুনন শিল্পের বেশ কয়েকটি দোকান এখনও টিকে আছে। আমাদের দেশের বেতশিল্পের ঐতিহ্য নিয়ে কথা হলে স্বভাবতই চলে আসে রাতারগুল জলাবনের নাম। এই বনটাকে বেতের আঁধার বলা যেতে পারে। বেতের আসবাবের মূল উপকরণের বড় ধরনের উৎস এই বন, যাকে কেন্দ্র করে সিলেটে গড়ে উঠেছে দীর্ঘদিনের বেতশিল্প।
আসবাবের জগতে প্রাচীন এই শিল্পটি আধুনিকতার ছোঁয়ায় হয়ে উঠছে আরও দৃষ্টিনন্দন ও অভিজাত। যার ফলে আধুনিক জীবনযাপনে সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে এর ব্যবহারও। প্রায় হারিয়ে যেতে চলা শিল্পটি আবারও ফিরে পাচ্ছে তার পুরনো গৌরব, জায়গা করে নিচ্ছে সৌন্দর্য পিপাসুদের অন্দরে।
মন্তব্য করুন