প্রচ্ছদ
উৎসবে শাড়ি

তাবাসসুম রহমান
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২ | ০০:৪১
বাঙালি নারীর কাছে যে কোনো উৎসবে প্রথম পছন্দ শাড়ি। উৎসবের সঙ্গে শাড়ির সম্পর্ক সেই আদিকাল থেকে। আধুনিক ট্রেন্ডের ভিড়ে শাড়ি যেন তার স্বকীয়তা বজায় রেখেছে। তাই তো যতই আধুনিক ট্রেন্ড আসুক না কেন, উৎসবে শাড়ির রয়েছে আলাদা কদর। যারা সচরাচর শাড়ি পরেন না, তারাও যেন বড় উৎসবগুলোতে সেজে ওঠেন শাড়িতে। কারণ, এই পরিধেয় নারীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহু গুণে। তাই যে কোনো উৎসব ঘিরেই ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন নতুন মোটিফের শাড়ি নিয়ে আসে। উৎসবের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের শাড়ি। এখনকার তরুণীরা রুচিশীল মার্জিত ডিজাইনের শাড়ি পরতে বেশ পছন্দ করেন। রঙের ক্ষেত্রে একেকজনের পছন্দ একেক রকম। হালকা রং থেকে শুরু করে গাঢ় রং পরছে অনেকেই। উৎসব মানেই তো নতুন সাজ পোশাক। ঐতিহ্যবাহী শাড়ির কদর সব সময় রয়েছে। তাঁতের শাড়ি থেকে শুরু করে জামদানি, কাতান, মসলিন, তসর, সিল্ক্ক শাড়ি রয়েছে এ যুগের নারীদের পছন্দের তালিকায়। আবার নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে অনেকেই পরেন এন্ডি, মটকাসহ বিভিন্ন শাড়ি। প্রতিনিয়ত শাড়ির কাজের মধ্যে আসছে নতুনত্ব। অনেকের আবার পছন্দ সুতি শাড়ি। এই গরমে অবশ্য সুতি শাড়ির বেশ কদর রয়েছে।
সাধারণ থেকে এক্সক্লুসিভ শাড়ি তৈরি হয় আমাদের দেশের তাঁতিদের হাতেই। তেমনই একটি শাড়ি মৃগনয়নী। বিশ্বরঙের ফ্যাশন ডিজাইনার এবং স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা জানান, এই শাড়িগুলো বিশেষ টেকনিকে করা। হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সুতা দিয়ে করতে হয়। এগুলো সব তাতে বোনা শাড়ি। আজকাল তো মেশিনের শাড়ি বেশি পাওয়া যায়। কলের ব্যবহারের ফলে হারাতে বসেছে তাঁতিদের হাতে বোনা শাড়ি। এই শাড়িগুলোর এক ইতিহাস আছে। কভিডের সময় তাঁতশিল্পের অবস্থা অনেকটাই নাজুক ছিল। অনেক তাঁতির পেশা পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু নিখুঁত ডিজাইন তুলতে পারা এই শিল্পীরা একদিনে তৈরি হননি। বছরের পর বছর লেগেছে। বংশপরম্পরায় তারা এই কাজগুলো করেন। কভিডের সময় অনেক শিল্পী রোজগারের আশায় অন্য পেশা বেছে নিচ্ছিলেন। এটা অবশ্যই দেশি ফ্যাশন শিল্পের জন্য বড় হুমকির বিষয় হয়ে উঠছিল। সবচেয়ে বড় বিষয়, তারা একবার অন্য পেশায় গেলে ফিরিয়ে আনা কঠিন হতো। তখন কিছু জটিল কাজ উদ্ভাবন করা হয়, যেগুলো তারা অনেক দিন ধরে বুনতে পারবে। কারণ, রেগুলার শাড়ি অনেক দ্রুত তৈরি করতে পারেন তারা, কিন্তু সেগুলো বিক্রি করার কঠিন ছিল। তাই এমন কিছু শাড়ির ডিজাইন দেওয়া হয়, যেগুলো সময় নিয়ে বুনতে হয়। সময় বেশি লাগার অন্যতম কারণ অনেক রঙের সুতার ব্যবহার।
মৃগনয়নী শাড়ির মোটিফ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে নেওয়া। যেমন- কিছু আছে রাঙামাটি বা বান্দরবানে যেসব থামি তৈরি হয়, সেখান থেকে অনেক ডিজাইন আসছে। পাহাড়িরা যেসব পিনন পরেন, সেখান থেকে কিছু এসেছে। নকশি পাখা থেকে, যেসব পাখা সোনারগাঁয়ের কাপড়ে সুতা দিয়ে তৈরি। সেখান থেকেও অনেক ডিজাইন নেওয়া হয়েছে। সিলেটের শাল থেকেও কিছু ডিজাইন এসেছে। আবার কিছু ডিজাইন দেশের বাইরে থেকেও নেওয়া। পৃথিবীর সর্বত্রই পাহাড়িদের একটা জায়গা রয়েছে। সেখানে তাদের নতুন নতুন বেশকিছু ক্রিয়েশন হয়। ডিজাইনাররা এসব মোটিফের খোঁজখবর সব সময় রাখেন; কিন্তু সব সময় ব্যবহারের সুযোগ হয় না। তাই এগুলো সচরাচর দেখা মেলে না। একটু কঠিন কাজ হওয়ায় তাঁতিরাও খুব একটা বুনতে চান না। কিন্তু আমরা অনেক ভাগ্যবান, আমাদের দেশের তাঁতিরা যে কোনো কিছুই হুবহু করে ফেলতে পারেন। তাদের এই গুণ যেন বংশপরম্পরায় পাওয়া। ওই জটিলতার দিকে আমরা গিয়েছি যেন দীর্ঘ সময় নিয়ে তারা কাজ করতে পারে। যেহেতু মার্কেটেও কাজের অনেক কাটতি ছিল না, তাই তারাও রাজি হয়েছিলেন ভিন্নধর্মী কাজগুলো করতে। কথায় বলে, কষ্টের মধ্যে অনেক সুন্দর জিনিস সৃষ্টি হয়। এটা তেমনই এক সৃষ্টি।
শাড়িগুলো বিশেষ উৎসবের জন্য একদম পাফেক্ট। দামও সাধ্যের মধ্যেই। তবে যারা একটু শাড়ির প্রতি শৌখিন, তাদের জন্য দারুণ একটি কালেশন হতে পারে মৃগনয়নী। নারীদের শাড়ির প্রতি ভালোবাসা সব সময়ই। এই শাড়িগুলো তা যেন একটু উস্কে দেবে। শাড়ি পরার প্রতি আগ্রহ তৈরি করবে নিশ্চিত। এই আগ্রহই বাঁচিয়ে রাখবে আমাদের ঐতিহ্যবাহী তাঁত এবং তার শিল্পীদের। শাড়িতে ব্লকপ্রিন্ট বা স্ট্ক্রিনপ্রিন্ট এখন অনেক বেশি কমন। নারীরা সব সময় চান একটু ভিন্নতা। এসব শাড়ি যেন তাদের দিতে পারে ভিন্নতার পরশ। একেকটি শাড়ি তৈরিতে সাত দিন, ১০ দিন; আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাসখানেকও লেগে যেতে পারে। এটি নির্ভর করে সুতার ব্যবহার এবং মোটিফের ওপর। অনেক সময় দেখা যায়, এক আঁচলেই অনেক মোটিভ এসেছে। সুতা পরিবর্তন করতে গেলে সময় অনেক বেশি লাগে। তাই দামের ক্ষেত্রেও থাকে অনেক হেরফের। এই শাড়িগুলো সাধারণত পার্টিতে পরার উপযোগী। সে বিষয়টি মাথায় রেখে সিল্ক্ক, জরি সুতা ছাড়াও রেশমের ব্যবহার আছে। শাড়িগুলো তিনটি ম্যাটেরিয়ালে করা হয়েছে- সুতি, হাফ সিল্ক্ক ও এন্ডি সিল্ক্ক। যে যার সাধ্য অনুযায়ী শাড়ি কিনতে পারবেন। এগুলো শাড়ি সবই টাঙ্গাইলে তৈরি। এখানকার তাঁতিদের ফিনিশিং অনেক বেশি ভালো। শাড়ি বোনার সময় অনেক ধরনের হিসাব আছে। তাই নতুন ডিজাইনে তারা এই হিসাব কষে ঠিক করতে পারেন।
উৎসবে নারীদের শাড়িই যেন দেয় পূর্ণতা। তাই নানা রঙের সমাহারে সাজিয়ে তোলা হয় উৎসবের শাড়িগুলো। এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। গাঢ়-হালকা সব ধরনের রঙেই তৈরি করা হয়েছে শাড়ি। রং হিসেবে উঠে আসছে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, সাদা ও গোলাপি। এ ছাড়া বিশেষ কিছু রঙের ব্যবহারও হয়েছে, যেমন- মেজেন্টা পার্পেল, ডাই, সি ব্লু, গ্রিনিশ ব্লু, ফিরোজা, কমলা, লালচে মেরুন, কালোর মধ্যেও বেশকিছু শাড়ি রয়েছে। অনেক বেশি ডিজাইন করা হলেও শাড়ির সংখ্যা অনেক কম। বাহারি রঙের কাজ করা শাড়ি উৎসবের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে যাবে।
শাড়ির সঙ্গে সাজ
সারাদিন শাড়ি পরতে চাইলে সকালে বেছে নিন হালকা রং শাড়ি; সঙ্গে হালকা মেকআপ। এতে করে সকালের সাজে আপনাকে লাগবে স্নিগ্ধ। বিকেলে কোনো অনুষ্ঠান কিংবা বেড়াতে গেলে পরতে পারেন গাঢ় রঙের শাড়ি। কিন্তু ভারী মেকআপ একদমই নয়। এসব শাড়িতে একটু হালকা মেকআপ বেশি মাননসই। শাড়ির সঙ্গে সিলভার আর অক্সি- এ দুই মেটালের তৈরি গহনা বেশি মানানসই হবে। আর যদি শাড়িতে সোনালি জরির ব্যবহার থাকে, তবে গোল্ডের কিছু পরতে পারেন।
- বিষয় :
- উৎসবে শাড়ি
- ফ্যাশন হাউস
- এক্সক্লুসিভ শাড়ি