রহস্যময় পিরামিডের সন্ধান

আসমাউল হুসনা
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৩ মে ২০২২ | ২৩:২৭
রহস্যময় এই পৃথিবীর কতটুকুই বা জানি আমরা! আদৌ কি এসব রহস্য ভেদ করা সম্ভব? বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও মানুষের কৌতূহলী মনের বদৌলতে অনেক রহস্যেরই সমাধান সম্ভব হয়েছে এবং অনেক রহস্য সমাধানে প্রচেষ্টা চলছে। সম্প্রতি এমনই নতুন এক রহস্যের উৎপত্তি হয়েছে বরফে ঘেরা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে। পৃথিবীর ৭টি মহাদেশের মধ্যে অ্যান্টার্কটিকা একমাত্র মহাদেশ, যেখানে কোনো রকম জনবসতি গড়ে ওঠেনি। এর প্রধান কারণ এখানকার বিরূপ আবহাওয়া। কখনও কখনও ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে চলে এখানে। বেশিরভাগ সময়েই তাপমাত্রা হয়ে থাকে মাইনাস ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কিন্তু ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক স্যাটেলাইট চিত্র বিজ্ঞানীদের এই মতবাদে ছেদ ফেলে। প্রকাশিত হওয়া ভিডিওচিত্রে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে তিনটি পিরামিডের সন্ধান পাওয়া যায়; যার মধ্যে দুটি বরফে ঢাকা, অন্যটি সমুদ্র উপকূলে। পিরামিডগুলোর প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার ও উচ্চতা ৪ হাজার ১৫৯ ফুট। সেই থেকে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় পিরামিডগুলো ঘিরে। কেউ কেউ বলেন, আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষরা বসতি গড়ে তুলেছিল এই মহাদেশে। আবার কেউ কেউ বলেন, প্রাচীনকালে ভিনগ্রহীদের আগমন হয় এই অ্যান্টার্কটিকায়।
ধারণা করা হয়, ভিনগ্রহী এলিয়েনরা প্রযুক্তিগতভাবে মানুষের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল। আর পিরামিডগুলো তাদেরই সমাধিস্থল। এগুলো দেখতে মিসরের ফারাও যুগের পিরামিডগুলোর মতোই বর্গাকৃতির। যার চার দিকই মসৃণ ঢাল। সাধারণত পাহাড়ের একটি বা দুটি দিকে মসৃণ ঢাল হয়। তবে ভূতত্ত্ববিদরা এর রহস্য উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এগুলো সাধারণ পাহাড়। বছরের পর বছর বরফের চাপে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পিরামিড আকৃতি ধারণ করেছে। পাহাড়গুলোর মসৃণতার কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন 'ফ্রিজ থো' নামক প্রক্রিয়া। শীতল বরফের আস্তরণে ঘেরা এ মহাদেশের পাহাড়গুলোতে দিনের বেলা তুষার ও পানি জমে, যেগুলো রাতে বরফ হয়ে আয়তন বৃদ্ধি পায়, যার ফলে চাপ সৃষ্টি হয়। আর এই চাপের কারণেই পাহাড়ের চারদিকে মসৃণ ঢালের সৃষ্টি হয়।
যদিও পলিনেসিয়া জনগোষ্ঠী দাবি করে, তাদের পূর্বপুরুষদের বসতি ছিল অ্যান্টার্কটিকায়। ফ্রেঞ্চ লেখক 'আউট অব অ্যান্টার্কটিকা' বইয়ে এসব গল্প একসঙ্গে তুলে ধরেছেন। তাদের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে ২০১৭ সালে জার্মান ভূতত্ত্ববিদ সাগরের নিচ থেকে নানা রকম নমুনা সংগ্রহ করে অবিশ্বাস্য তথ্য দেন। তিনি জানান, এখানের কাদামাটিতে এমন কিছু উপকরণ পাওয়া গেছে, যা রেইন ফরেস্টের অনুরূপ। আরও জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার বছর আগে শীতল এই মহাদেশটি ছিল সবুজে ঘেরা। ৫০ কোটি বছর আগের ক্যামব্রিয়ান ফসিল অর্থাৎ পশুপাখির দেহাবশেষের জন্য বিশ্ববিখ্যাত ছিল এই মহাদেশ। তার মানে বোঝা যায়, মানুষের বসতি নিয়ে নিশ্চয়তা না থাকলেও এক সময় পশুপাখির বিচরণক্ষেত্র ছিল এ ভূমি। এমনকি তখনকার তাপমাত্রা ছিল ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যথেষ্ট রহস্য ও কৌতূহলপূর্ণ এ পিরামিডগুলোর নির্দিষ্ট কোনো নাম না থাকলেও এলসওর্থ পর্বতশ্রেণির দক্ষিণাংশে অবস্থানের কারণে এগুলো হেরিটেজ রেঞ্জ নামে পরিচিত।