টাইগ্রিসের গর্ভে লুকোনো ইতিহাস

আবদুল্লাহ সরদার
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ | ২৩:৫৩
সময় পেরিয়ে যায়। সবকিছু লীন হয় কালের গর্ভে। তবু কিছু চিত্র, হাজার বছরের পুরোনো কিছু জগৎকে কালগর্ভ উদরস্থ করতে পারে না। উগরে দেয় অনায়াসে।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদ। তার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে টাইগ্রিস নদী। তুরস্কের টরাস পর্বতমালার হাজার হ্রদ থেকে নদীটির উৎপত্তি। ইরাকের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিলেছে ফোরাত নদীর সঙ্গে। তারপর বয়ে গেছে শাত আল আরব নামে পারস্য উপসাগরে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় এক হাজার ১৫০ মাইল। কিন্তু ইদানীং নদীটির অনেকাংশই শুকিয়ে গেছে। চর জেগেছে নানা রূপে। ইরাকি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আউন দিয়াব বলেন, 'বৃষ্টির অভাব এবং প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা পানির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে গত বছরের তুলনায় পানির মজুত ৫০ শতাংশ কম।'
বিশ্নেষকদের এমন মতামতের পরপরই আশ্চর্যজনক এক আবিস্কার উঠে আসে ওই নদী থেকে। দেখা মেলে প্রায় ৩৪ হাজার বছর পুরোনো এক সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। মিতান্নি সভ্যতা নামে যাকে জানা যায়।
মিতান্নি সভ্যতার আবির্ভাব হয় মূলত ব্যাবিলনীয় সভ্যতার পতনের পর। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এ সভ্যতা। এর কেন্দ্রে ছিল সিরিয়া ও মেসোপটেমিয়া। মিতান্নিদের শহর বিস্তৃত ছিল উত্তর ইরাক থেকে সিরিয়া হয়ে তুরস্ক পর্যন্ত।
মিতান্নিদের ছিল উর্বর জমি ও ভালো কৃষি ব্যবস্থা। ভেড়া ও ছাগল পালনে বেশ পারদর্শী ছিল তারা। কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করেও জীবনধারণ করতেন।
মিতান্নি রাজারা প্রথমে ইন্দো-ইউরোপীয় ছিলেন। কিন্তু তাঁরা ব্যবহার করতেন হুরিয়ান ভাষা। ঐতিহাসিক গুয়ান্ডলিন লিখেছেন, 'মিতান্নি রাজ্যের অধিবাসীরা বেশিরভাগই হুরিয়ান ছিলেন। কিন্তু তাঁদের ইন্দো-ইউরোপীয় রাজারা ইন্দ্র এবং আরাভের মতো বৈদিক নাম দিয়ে পূজা-অর্চনা করতেন।
আধুনিক রাষ্ট্রের যুগে মিসরীয় ও মিতান্নি সভ্যতার মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কারণ মিসরীয় রাজারা যেমন- টুথমোসিস প্রথম, আমেনহোটেপ প্রথম এবং আমেনহোটেপ দ্বিতীয় এই অঞ্চলগুলোতে অনুসন্ধানমূলক ভ্রমণ করেন।
মিতান্নি সভ্যতার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন তুশরাত্তা। যে তাঁর বোন ও মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তুশরাত্তার রাজত্বে সে সময় নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বিশৃঙ্খলা নির্মূলে তুশরাত্তা আখেনাতুনের (আমেনহোটেপ চতুর্থ) কাছে চিঠি পাঠান। বেশ কয়েকবার চিঠির আদান-প্রদান হয়। কিন্তু আখেনাতুন বিশেষ গুরুত্ব দেননি।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার থেকে ৩০৫০ বছর আগে অর্থাৎ ১৩৫০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্পের ফলে ধ্বংস হয়েছিল শহরটি। প্রত্নতত্ত্ব গবেষক ড. হুসেইন দুকিল বলেন, একটি ইরাকি প্রত্নতাত্ত্বিক মিশন ২০১৮ সাল থেকে এই জায়গায় অনুসন্ধান চালাচ্ছে একটি জার্মান মিশনের সঙ্গে অংশীদারিত্বে। গবেষকরা জানান, এ আবিস্কারে উঠে এসেছে একটি প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ, কিছু উঁচু দেয়াল এবং প্রায় ১০০ কিউনিফর্ম শিলালিপি।
- বিষয় :
- ইতিহাস