ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

জল জোছনায়

জল জোছনায়

কোনাল

এমদাদুল হক মিলটন

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ২১:৪৭

নিজেকে ভেঙেচুরে বারবার নতুন রূপে তুলে ধরার বাসনা তাঁর শুরু থেকেই ছিল। মঞ্চ, টিভি, রেডিও, জিঙ্গেল থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক সব জায়গাতেই নিজেকে প্রতিবার নতুন করে তুলে ধরতে চেয়েছেন। সংগীতভুবনে চঞ্চলা হরিণীর মতো যেন তাঁর ছুটে চলা। বলছি, তারকা কণ্ঠশিল্পী সোমনূর মনির কোনালের কথা। শুরুতে তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল শিল্পী হিসেবে কেন নিজের গায়কী নিয়ে এই ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতে ওঠা। উত্তরে কোনাল বলেন, 'স্কুলজীবেন প্রথমবার যেদিন মঞ্চে পা রেখেছিলাম, সেদিনই মনে হয়েছে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো যেমন প্রত্যেকে আলাদা, তেমনি তাঁদের ভালো লাগা, মন্দ লাগার বিষয়টিও ভিন্ন। সাত সুর নিয়ে যদি লাখো-কোটি গান হতে পারে, তাহলে একই কণ্ঠে কেন নানা ধরনের গান হবে না।

এ প্রশ্ন মনের মধ্যে যখন জেগে উঠেছে, তখন থেকে নিজেকে ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া শ্রোতার পছন্দও একরকম নয়। অনেকের ভালোবাসা কুড়াতে হলে প্রত্যেকের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য আমি শ্রোতার ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিই। তেমনি শিল্পীসত্তাকে খুশি করার জন্য নিরীক্ষাধর্মী কাজ করে যাচ্ছি। আর প্রতিটি আয়োজনে নিজেকে ভেঙে নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। যদি সত্যি আমার একেকটি গান একেক রকম হয়েই থাকে, তাহলে কৃতিত্বটা গীতিকার, সুরকার, সংগীত আয়োজক, সহশিল্পী এবং ভিডিও নির্মাতাদের। প্রশংসাটা সবার আগে তাঁদেরই প্রাপ্য। যদি আমার গায়কী কারও মনোযোগ কাড়ে, তাহলে শ্রোতার মন্তব্যটাই আসল। কোনালের এ কথায় বোঝা গেল শিল্পী হিসেবে তাঁর চাওয়া কী। অনেক সংগীতবোদ্ধা বলেছেন এত অল্প সময়ে গায়কীতে নিজেকে ভাঙার সাহস খুব কম শিল্পীর মধ্যেই দেখা গেছে। কোনাল তাঁদের মধ্যে একজন।

এ কথা যে মিথ্যে নয় তাঁর গানগুলো শুনলেই প্রমাণ হয়ে যায়। তাঁর 'জানে খোদা', 'আগুন লাগাইলো', 'তুমি আমার জীবন', 'ভুল', 'ঠিকানা আমার নোটবুকে আছে', 'ঘুম জড়ানো', 'বন্ধু'সহ অন্যান্য গান শুনলেই স্পষ্ট হবে এই কণ্ঠশিল্পী কীভাবে বারবার নিজেকে বদলে দর্শক-শ্রোতার কাছে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। গেল দুই ঈদে আটটি নাটকের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কোনাল। প্রতিটি গানে এখনও শ্রোতাদের সাড়াও পাচ্ছেন। কোনাল বলেন, 'নাটকের গানে সাড়াই অন্যরকম। আগে ঈদে অনেক সিনেমা মুক্তি পেত। ক্যাসেট কিংবা সিডি বের হতো। এখন দুটির একটিও নেই। মানুষের গান শোনার চাহিদা নাটকের গান দিয়ে পূরণ হচ্ছে। প্রায় নাটকেই এখন গান থাকছে। দেখুন, গান কতটা শক্তিশালী। গানে মানুষকে প্রেক্ষাগৃহে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এটি দর্শককে নাটক দেখতে উদ্বুদ্ধ করছে। নাটকের গান আলাদা করে ইউটিউবে রিলিজ হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে নাটকের গান গাওয়া বেশ উপভোগ করি।'

গানের জগতে আসার পর কোনালের মূল লক্ষ্যই ছিল চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক। যেজন্য সেরা কণ্ঠ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর মুকুট পরার পরপরই চলচ্চিত্রের গানে মনোযোগী ছিলেন তিনি। অডিও মাধ্যমে কম গান করেছেন। মিউজিক ভিডিওতে কম মুখ দেখিয়েছেন। বর্তমানে চলচ্চিত্রের গানেই ব্যস্ত তিনি। সম্প্রতি ইমন চৌধুরীর সুর ও সংগীতে 'অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন', অভিজিত সরকার জিতুর সুর ও সংগীতে 'জল জোছনায়', ইমন সাহার সংগীত আয়োজনে 'বাংলা ভাষা', ফোয়াদ নাসের বাবুর সুর সংগীতে 'ক্রান্তিকাল'সহ বেশ কয়েকটি সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়; সিনেমার গানে বাহারি আয়োজনে ব্যস্ত কোনাল। আগামী আয়োজনেও ভক্তরা তাঁর কণ্ঠে শুনতে পাবেন নতুন নতুন গান।দেখতে দেখতে সংগীত ক্যারিয়ারে এক যুগ পার করেছেন।

পেছনে ফিরে তাকালে কী দেখতে পান? 'এতগুলো বছর শুধু শিখে গেছি। যখন মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াই, তখন পুরোনো কথা মনে পড়ে। ক্যারিয়ারের শুরুতে, অর্থাৎ ২০০৯ সালে অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে গান করেছি। কারণ তখন জানাশোনা অনেক কম ছিল। সেদিনের তুলনায় একটু হলেও বেশি জানি। যেজন্য এখন আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে গাইতে পারি না। কারণ, আমি জানি, আমার ভুলত্রুটি কোথায়। আমি জানি লিজেন্ডরা কীভাবে গান করেন। তাঁদের মতো হতে হলে কত অধ্যবসায় দরকার। এই দীর্ঘ পথচলায় কিছু উপলব্ধি হয়েছে।

এতটুকু বুঝেছি, মিডিয়ায় কেউ কারও বন্ধু নয়, যা দেখছি আসলে তা নয়, এটা শোবিজ। শো দিয়ে বিজনেস করা হয়। যা শো করা হয় আসলে তা নয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একটার পর একটা কাজ করে গেছি। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলেছে। এই পথচলায় মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। শ্রোতাদের ভালোবাসার কারণে সেরা কণ্ঠের চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। তাঁদের ভালোবাসায় নেতিবাচক কিছু আমার কাছে পৌঁছাতে পারেনি। যতদিন শ্রোতারা চাইবেন আমি গান গেয়ে যাব। তাঁরা যেন আমার সঙ্গে থাকেন- এটাই চাওয়া।'

আরও পড়ুন

×