ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

শাকিবের দ্বিতীয় ইনিংস

শাকিবের দ্বিতীয় ইনিংস

শাকিব খান

মীর সামী

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ২১:৫১

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিতে সেখানে অবস্থান করছিলেন ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। শুরুতে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করলেও একসময় নিজেই তা প্রকাশ্যে আনেন। এই খবরে দেশের চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক এবং শাকিবভক্তরাও শঙ্কায় ছিলেন- তবে কি শাকিব খান আর সিনেমায় ফিরবেন না? সব আশঙ্কা পেছনে ফেলে ৯ মাস পর গত সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন শাকিব খান। বিমানবন্দরে পা রেখেই বলেন, 'সামনে অনেক সুখবর আসবে। অপেক্ষা করুন।' গত মঙ্গলবার রাতে নন্দনের সঙ্গে আলাপকালে শাকিব খান জানালেন, আবারও সিনেমায় নিয়মিত হবেন তিনি। নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান 'এসকে ফিল্মস' থেকে কিছু সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। শাকিব বলেন, 'নিউইয়র্কে টানা ৯ মাস ছিলাম।

এত লম্বা সময় আমি কোথাও থাকিনি।' জানতে চাই দীর্ঘদিন পর দেশের মাটিতে ফিরে কেমন লাগছে? 'দেশে ফিরে অসম্ভব ভালো লেগেছে।' কথায় কথায় শাকিব জানান, এই ৯ মাস ছিল অনেকটা অদৃশ্য শিকলে বাঁধা পড়ে থাকা জীবনের মতো। নিজেকে ভালোভাবে চেনা ও জানার জন্য তাঁর পরবাসে থাকা দরকার ছিল। তিনি বলেন, 'কেন জানি মনে হয়, নিজের জীবনদর্শন, বাস্তবতা ও সব নতুন করে চেনাজানা এবং বোঝার জন্য এই সময়টা প্রয়োজন ছিল। এ সময় খুব কাছে থেকে নিজের জীবনের সব নতুন করে কল্পনায় এঁকেছি, যেমনটা সিনেমায় করে থাকি।

সময়টা আমাকে পৃথিবী ও নিজের সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করেছে।' এতদিন সেখানে কী করেছেন? শাকিব বলেন, 'দেশের বাণিজ্যিক সিনেমা কীভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেওয়া যায়, এসব নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছি। সিনেমার কিছু চিত্রনাট্য পড়েছি। গ্রিনকার্ডের বিষয়ে কিছু কাজ ছিল, সেগুলো করতে হয়েছে। তেমনি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ডিস্ট্রিবিউশন ও চলচ্চিত্রের বাজার সম্প্রসারণে অনেকের সঙ্গে আলাপ করেছি। কীভাবে দেশের চলচ্চিত্রকে আরও বড় পরিসরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেসব বিষয়েও অনেক পরিকল্পনা করেছি।' এখন দেশে ফিরেছেন। আপনার পরিকল্পনা কী? ''অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। কোনটা কীভাবে শুরু করব, সবাই ধীরে ধীরে জানতে পারবেন। তবে যা হবে আগে কখনোই হয়নি।

শিগগির এসকে ফিল্মসের ব্যানারে 'মায়া' [সম্ভাব্য নাম] সিনেমার কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া তপু খানের 'লিডার আমিই বাংলাদেশ' সিনেমার গানের কাজ বাকি আছে। আগামী সপ্তাহে এই কাজটি করব। তারপর শুরু করব 'মায়া'র কাজ। এই ছবি হবে 'লার্জার দ্যান লাইফ' স্কেলে। ছবির ভিএফএক্সের কাজ হবে বিশ্বমানের। এতদিন মার্কিন মুল্লুকে নানান দেশের ছবি দেখেছি। সেসব ছবি দেখে আমার মনে হতো কেন আমরা এসবের চেষ্টা করি না, 'মায়া' অনেকটা তেমন আয়োজনের ছবি হবে। গল্পটা পর্দায় সঠিক তুলে ধরতে বাজেটে কোনো ছাড় হবে না।'' সিনেমা নিয়ে শাকিব তাঁর ভাবনার কথা জানিয়ে বলেন, 'গত কয়েক মাসে কমপক্ষে ২০টি সিনেমার চিত্রনাট্য পড়েছি। দেশি-বিদেশি পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে একাধিকবার মিটিং করেছি। মানুষ কোন ধরনের সিনেমা বেশি দেখতে চান, কীভাবে সেই ধরনের সিনেমা নির্মাণ করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করেছি।

ফলে বলতে পারি, আমার এখনকার কাজগুলো হবে আরও বেশি নান্দনিক। ব্যাক টু ব্যাক ভালো ভালো কাজ হবে। কথা নয়, এবার কাজ করেই দেখাব।' শাকিব আরও বলেন, 'মানুষের দেখার জগৎ এখন অনেক বড় হয়েছে। আমার কাছেও অনেক দর্শক-চাহিদা রয়েছে। তাইতো এতদিন নিজেকে নতুনভাবে প্রস্তুত করেছি। এখন সিনেমার পালে হাওয়া লেগেছে। ভালো কাজ দিয়ে আরও ভালো করতে চাই।' 'মায়া' ছাড়াও শাকিব তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে 'রাজকুমার' নামে আরেকটি ছবি বানাচ্ছেন। ওই ছবির দৃশ্যধারণ হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। পরিচালক থাকবেন হিমেল আশরাফ। নায়িকা মার্কিন অভিনেত্রী কোর্টনি কফি।

জানা যায়, অডিশনের মাধ্যমে এই অভিনেত্রীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। শাকিব বলেন, 'বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কমপক্ষে দেড়শ সিনেমা হলে রাজকুমার মুক্তি দেওয়া হবে।' রাজকুমার সিনেমার কাজ শুরু করবেন কবে থেকে? 'বাংলাদেশ আর আমেরিকায় শুটিং পদ্ধতি একরকম নয়। সিনেমাটি নিয়ে যেভাবে স্বপ্ন দেখেছি, সেভাবেই নির্মাণ করতে চাই। সুন্দর একটি ছবি বানাব, যা দেখে দেশ-বিদেশের সবাই বলবে, আরে বাহ্‌ ...!' আশাবাদী শাকিব বলেন, 'দেশের বাইরে আমাদের চলচ্চিত্রের একটা বিশাল বাজার আছে। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বিষয়টা আরও ভালোভাবে টের পেয়েছি। এখানকার ব্যবসায়ীরাও দেশের সিনেমা নিয়ে ভাবছেন। আমাকেও তাই ভাবতে হচ্ছে, দেশের মানুষ যেন আমাদের সিনেমা নিয়ে গর্ব করতে পারে, সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।' নিজের প্রযোজনা সংস্থা নিয়ে কথায় কথায় শাকিব আরও বলেন, 'যাঁরা নতুন কনটেন্টে কাজ করতে চান তাঁদের জন্য আমার দুয়ার খোলা। আমি প্রযোজনা করব মৌলিক কোনো অসাধারণ চিন্তা পর্দায় আনার জন্য।'

এদিকে শাকিব খানের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার খবরে নানা ধরনের গুঞ্জন ঢাকাই সিনেমার শিল্পে। হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন জনপ্রিয় এ নায়ক? তবে কি তিনি নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে অনিরাপত্তায় ভুগছেন? অনেকেই মনে করছেন শাকিবের বয়স বাড়ছে। একটা সময় তো থামতেই হবে। সেসব বিবেচনা করে নিজের জনপ্রিয় ইমেজটা ধরে রেখে আড়ালে চলে যেতে চান শাকিব! অনেকে আবার দাবি করছেন- যেহেতু শাকিব ছাড়াও এখন সিনেমা চলছে, তাই যখন তাঁর এ দেশে কাজ থাকবে না তখন সে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবে? শাকিব বলেন, 'চলচ্চিত্রে গত ২৩ বছরের অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমি আজকের অবস্থানে এসেছি। এ সময়ের মধ্যে কত আলোচনা-সমালোচনা, বিতর্ক, প্রশংসা, তার হিসাব নেই।

তাই কে কী বলল, তা গায়ে মাখি না।' কিন্তু অনেকেই তো বলছে শাকিবের দিন শেষ? এমন প্রশ্নে হাসতে হাসতে শাকিব বলেন, 'আমি তো আছি, থাকব। যতক্ষণ দর্শকের অন্তরে আছি আমাকে ঠেকানোর সাধ্য কার? আমার শিকড় ইন্ডাস্ট্রি এবং দর্শকের অন্তরে গাঁথা আছে। ওটা কি রোখা যাবে?' অন্যদিকে দেশের অনেক চলচ্চিত্রবোদ্ধা মনে করছেন- ''শাকিব এতদিন নায়কোচিত চরিত্রে কাজ করেছে। সে 'চরিত্রপ্রধান' কাজ খুব একটা করেনি। আগামীতে শাকিবকে চরিত্রখচিত কাজের জন্য তার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা উচিত। নায়ক হিসেবে সে নিজেকে প্রমাণ করেছে। এখন চরিত্রাভিনেতা হিসেবে, কাজে বৈচিত্র্য রেখে কাজ করা উচিত। কারণ অভিনেতা হিসেবেও শাকিব দুর্দান্ত, তাই পরিচালকদের উচিত তার অভিনয় সত্তাকে বের করে আনা ভিন্নভিন্ন চরিত্র দিয়ে।'

একসময় অপু বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিতেন, তারপর শবনম বুবলি ... শুনলাম এখন সব নতুন নায়িকাকে ... প্রশ্ন শেষ হয় না। শাকিব বলেন, 'এ বিষয় নিয়ে কথা বলাই বোকামি। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। কেবল অপু-বুবলিকে নিয়ে পড়ে থাকার সময় কি আছে? আমি কেবল আমার কাজটি করি। মনোযোগ দিয়ে করি।'
আলোচনায় ব্যক্তিজীবন, পরিবার-সন্তান প্রসঙ্গে শাকিব খানের বক্তব্য- তারকার সব নজরবন্দি থাকে জানি; কিন্তু তাঁর নিজস্ব বলে কিছু আছে? আমারও ব্যক্তিজীবন আছে। তবে এখন আর যা-ই করি না কেন, কোনোকিছুই গোপনে করব না। বিয়ে করলে ধুমধাম আয়োজনে সবাইকে জানিয়ে করব। পরিবার থেকে এরই মধ্যে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। আগের বার নিজের ইচ্ছেতে করেছিলাম। এবার যা হবে, পরিবারের পছন্দে হবে। হয়তো শিগগির হবে। পরিবার চাইছে, সুন্দর গোছানো কিছু হোক।

আরও পড়ুন

×