ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফুটবল কোচ লিটু-অনন্যা দম্পতির গল্প

ফুটবল কোচ লিটু-অনন্যা দম্পতির গল্প

ফুটবল কোচ লিটু-অনন্যা দম্পতি/ ছবি- সংগৃহীত।

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২২ | ০৫:০৫ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২২ | ০৫:০৫

দু’জনই সহকারী কোচ। তাও একই দলের। মাহবুবুর রহমান লিটু ও মাহমুদা আক্তার অনন্যা। অবশ্য একসময়কার খেলোয়াড় অনন্যার কোচ ছিলেন লিটু। ২০১০ সালে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ দলে খেলেছেন অনন্যা। ওই দলের সহকারী কোচ ছিলেন লিটু। সে বছরই তাঁরা বিয়ের পিড়িতে বসেন। লিটু এএফসি ‘বি’ সনদ পেয়েছেন, অনন্যার আছে ‘সি’ সনদ। এ দম্পতি এখন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। 

আবাসিক ক্যাম্প নিয়মিত হওয়ায় তাঁদের দু’জনকেই ক্যাম্পে থাকতে হয়। পেশাদারিত্বের কারণে দুই মেয়ে মা-বাবার আদর থেকে যে বঞ্চিত হয় তা এড়িয়ে যাওয়ার অবকাশ নেই। তবে বিষয়টিকে লিটু পেশাগতভাবেই দেখছেন। 

তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৯ সাল থেকে সহকারী কোচ হিসেবে নারী ফুটবল দলের সঙ্গে যুক্ত। অনন্যা যুক্ত হয় ২০১৫ সালে। আমাদের দুই মেয়ে। রওজার বয়স ১১ বছর, ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট মেয়ে রাইসা প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ওর বয়স ৬ বছর। আমরা ক্যাম্পে থাকি। সন্তানকে সময় দিতে পারি না। আমার শাশুড়ি নারায়ণগঞ্জে থাকেন। তিনিই তাদের দেখাশোনা করেন। এখন কিছু পেতে হলে তো ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।’ 

খেলোয়াড় ও সহকর্মীদের সঙ্গে কোচ লিটু-অনন্যা দম্পতি। ছবি- সংগৃহীত। 

লিটু ও অনন্যা যোগ করেন, রওজার বয়স যখন ৬ মাস, তখন তাকে নানির কাছে রেখে ক্যাম্পে যোগ দেন অনন্যা। আর ছোট মেয়ে রাইসার যখন মাত্র ৩ মাস তখনই ক্যাম্পে আসতে হয়েছিল অনন্যাকে।

এখানে তিনটা দল- মূল জাতীয় দল, অনূর্ধ্ব-১৮ ও অনূর্ধ্ব-১৫। কোচিং স্টাফরা এ দলগুলোকে আগলে রাখেন। এ কোচ দম্পতি জানান, তাঁদের দু’জনের সঙ্গে আরেক সহকারী কোচ তৃষ্ণা চাকমা, গোলকিপার-কোচ মাসুদ আহমেদ উজ্জ্বল এবং প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন- সবাই মিলে ভাগ করে টিমগুলোকে দেখাশোনা করেন। ট্রেনিং সেশনটাও লিটু আর অনন্যা ভাগ করে দেখেন। সেই সঙ্গে অনন্যা জিপিএস সিস্টেমসহ খেলোয়াড়দের ঘুম ঠিকমতো হলো কিনা, কারও শরীর অসুস্থ কিনা এসব দেখাশোনা করেন।

তাঁদের কাজের ধরন ও প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে লিটু বলেন, ‘আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি না তা নয়। তবে তা আরও বাড়ানো দরকার। আমাদের ফিটনেস কোচ আইভান আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি একটি ডাটাবেজ তৈরি করে দিয়েছেন। তা অনন্যা ও তৃষ্ণাদি দেখেন। জিপিএসের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেক খেলোয়াড়ের রানিং ক্যাপাসিটি বিশ্লেষণ করতে পারি। সেই সঙ্গে ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে যেমন রণনীতি তৈরি করি, তেমনি নিজেদের শক্তিশালী ও দুর্বল দিক নিয়েও খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করি। তা কাটানোর পথ বের করি। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে ফুটবলে এখন যে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে তার অনেক কিছুই আমাদের এখানে নেই। সামনে তা বাড়বে বলে আশা করি।’ 

লিটু-অনন্যার মেয়ে রওজা ও রাইসা। ছবি- সংগৃহীত।

তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড়দের উঠে আসার ক্ষেত্রে প্রধানত তিনটি প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করেছেন অনন্যা ও লিটু। অপর্যাপ্ত মাঠ, ফুটবল ও অন্যান্য সরঞ্জামের অভাব এবং সামাজিক বাধা। তবে প্রথম দিকে যে পরিমাণ প্রতিবন্ধকতা ছিল, এখন তা কমেছে বলে জানান তাঁরা।

লিটু জানান, পেশাদার ফুটবলের জন্য ক্লাব ফুটবল সবচেয়ে জরুরি। মাহফুজা আক্তার কিরণ আগামী বছর সব ক্লাবকে চিঠি দেবেন যে তাদের সবারই নারী দল থাকতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক করা হবে। আবার এ বছর থেকে ক্লাব লাইসেন্স করা হয়েছে। সেখানে মাঠ, ট্যান্ট, কোচিং স্টাফ ও সুযোগ-সুবিধা থাকার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পেশাদার ফুটবলকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে পরিকল্পনা আছে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বেশি ম্যাচ খেলার। যত ম্যাচ খেলা হবে ততই অভিজ্ঞতা বাড়বে। আর ভালো খেললে র‍্যাংকিং এগোবে। তাই আমাদের চেয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে বেশি ম্যাচ খেলার চেষ্টা করা হবে।’

আরও পড়ুন

×