ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

তোমাদের যা বলার ছিল...

স্মৃতিচিহ্ন বিলুপ্তির পথে

স্মৃতিচিহ্ন বিলুপ্তির পথে

শহীদ বুদ্ধিজীবী, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত

কামাল উদ্দিন

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ২৩:৪৫

একাত্তরের ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তাঁর ছোট ছেলে দিলীপ কুমার দত্তসহ কুমিল্লা সেনানিবাসে ধরে নিয়ে যায়। এই দেশপ্রেমিক রাজনীতিক ও তাঁর ছেলের ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। অসামান্য ত্যাগ ও দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পরও তাঁদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজও জানা যায়নি, তাঁদের মরদেহ কোথায় মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ব্রিটিশবিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সর্বপ্রথম বাংলা ভাষাকে আমাদের 'রাষ্ট্রভাষা' করার দাবি পাকিস্তান গণপরিষদে উত্থাপন করেন।

১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রামরাইল গ্রামে তাঁর জন্ম। নবীনগর হাই স্কুল, কুমিল্লা কলেজ এবং কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি একাধারে রাজনীতিক, আইনজীবী, সমাজকর্মী ও ভাষাসংগ্রামী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। আমৃত্যু তিনি কুমিল্লা নগরীতেই বসবাস করেছেন। তাঁর বাবা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও নবীনগর মুন্সেফ আদালতের সেরেস্তাদার। দুঃখের বিষয়, পাকিস্তানি হানাদাররা যে বাড়ি থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়, সেই বাড়িতে ধীরেন্দ্রনাথের সব স্মৃতিচিহ্ন প্রায় বিলুপ্ত। ভেঙে পড়ছে টিনের চালা, দরজা-জানালা, খসে পড়ছে দেয়ালের ইট-সুরকি-পলেস্তারা। সরকারের পক্ষ থেকে 'ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি জাদুঘর' নির্মাণের আশ্বাস দেওয়া হলেও এক যুগেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

ধীরেন্দ্রনাথের বড় ছেলে সঞ্জীব দত্ত ছিলেন সাংবাদিক। তাঁর স্ত্রী প্রতীতি দেবী বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋত্বিক ঘটকের যমজ বোন। তাঁদের বড় মেয়ে আরমা দত্ত বর্তমানে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য। গত রোববার সন্ধ্যায় তিনি সমকালকে বলেন, 'আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। একাত্তরের উত্তাল দিনে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে আমি কুমিল্লায় চলে আসি। সে দিন আমার চোখের সামনে থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমার দাদু (ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত) ও কাকাকে (দিলীপ দত্ত) ধরে নিয়ে যায়।

ভাই রাহুল দত্তকে ঘর থেকে বের করে নিলেও বাড়ির গেটে নিয়ে ছেড়ে দেয়। অনেক চেষ্টা করেও দাদা-কাকার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানতে পারিনি। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শোক প্রকাশ করার পরই আমরা নিশ্চিত হয়েছি- দাদু আর কাকাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করেছে। তবে তাঁদের মরদেহ কোথায় আছে- তা আজও জানতে পারিনি।' এমপি আরমা দত্ত আরও বলেন, কুমিল্লার বাড়িতে দাদুর অনেক স্মৃতিচিহ্ন জড়িয়ে আছে। বাড়িটি এখন জরাজীর্ণ। আমরা নিজ উদ্যোগে এ বাড়িতে দাদু ও কাকার স্মৃতি ধরে রাখার ব্যবস্থা নেব।
উপদেষ্টা, সুহৃদ সমাবেশ, কুমিল্লা

আরও পড়ুন

×