ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

তোমাদের যা বলার ছিল...

'ক্যাপ্টেন আপনাকে যেতে বলেছেন'

'ক্যাপ্টেন আপনাকে যেতে বলেছেন'

শহীদ বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ুম

মো. আমিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ২৩:৪৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রেজিস্ট্রার শাখার কর্মচারী এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনুচর তৈয়ব আলী এসে ক্যাপ্টেন তাঁকে যেতে বলেছেন বলে ডেকে নিয়ে যায় অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ুমকে। তিনি যেতে না চাইলেও তৈয়ব আলীর অতিরিক্ত পীড়াপীড়িতে যেতে বাধ্য হন। অদূরে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আনুমানিক আরও ১৭ জনকে বেঁধে বোয়ালিয়া ক্লাবসংলগ্ন পদ্মার পাড়ে নৃশংসভাবে জীবন্ত মাটিচাপা দেয়। স্বাধীনতার পর ৩০ ডিসেম্বর স্থানীয় লোকজন এই গণকবর চিহ্নিত করেন। সেখান থেকে মীর আব্দুল কাইয়ুমসহ সবার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ুম ১৯৩৯ সালের ৬ জুলাই ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ঘাগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গফরগাঁওয়ে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে মনোবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। উনসত্তরে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। তখন বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষকই ছিলেন পাকিস্তানপন্থি। প্রগতিশীল একজন শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ুম শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে ইয়াহিয়ার এই ধূর্ত কৌশল নিয়ে আলোচনা ও বক্তৃতা করেন।

একাত্তরজুড়ে বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর দালালদের হত্যা-ধর্ষণ আর নির্যাতনের নারকীয় ঘটনায় পরিপূর্ণ। দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তরুণ শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ুম ছিলেন রাবি শিক্ষার্থীদের কাছে বিপুল সমাদৃত এবং গ্রহণযোগ্যতা ছিল ঈর্ষণীয়। তিনি ভারতে না গিয়ে নিজ দেশে থেকেই গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে থাকেন। পাকিস্তানের দোসর এ দেশের দালাল-রাজাকার-আলবদরদের হত্যা-ধর্ষণ আর লুটপাট-অগ্নিসংযোগ চলতে থাকে। মসজিদ এবং মুসলমার বাড়িতে সংরক্ষিত কোরআন তাদের আক্রমণে ছিঁড়ে-পুড়ে যাওয়ার পর সেগুলো বের করে জনসমক্ষে দেখিয়ে নিজেদের অপকর্মের দায় ভারত ও হিন্দুধর্মের অনুসারীদের ওপর চাপায়।

মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী অধ্যাপককে তারা হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। বাসায় না পেয়ে বাসায় অগ্নিসংযোগ করে সবকিছু জ্বালিয়ে দিলে তিনি ঘোড়ামারায় শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপন করেন। একাত্তরের ২৫ নভেম্বর রাতে অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ুম ঘোড়ামারায় নিজ শ্বশুরবাড়িতে অবস্থানকালে তাঁকে পাকিস্তানি হানাদাররা তুলে নেয় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে; যা ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করে।
সহযোগী অধ্যাপক ও উপদেষ্টা, সুহৃদ সমাবেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন

×