ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

রঙে ভরা রঙ্গ

সাঁঝের সভা

সাঁঝের সভা

কাজী সুলতানুল আরেফিন

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ | ০৫:৫০

এক সান্ধ্যকালীন আসর জমেছে আমার বাড়িতে। সেই সন্ধ্যায় আমার স্ত্রী নাহিদা বেগমের ইজ্জত প্রায় যায় যায় অবস্থা! সে আসরে অন্য সবার মুখ এনার্জি লাইটের মতো জ্বলে আলো দিচ্ছিল; শুধু নাহিদা বেগমের চেহারায় রাত্রিকালীন ডিম লাইটের আলোও দেখা যাচ্ছিল না!

 সন্ধ্যার আসর জমেছিল গল্পে গল্পে। রমরমা আসর। জুলেখা বেগম থেকে আসমা খাতুন সবাই– আছে এই আসরে। নাহিদা বেগমও আছে। তবে সব বেগম আসর জমিয়ে গপ্পো করলেও নাহিদা বেগমকে বরাবরই আসরে নীরব থাকতে হচ্ছে। এর নানা কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এই আসরের আলোচ্য বিষয় যা, সে বিষয়ে নাহিদা বেগম বলতে গেলে ব্যর্থ। অন্যরা এ প্লাস। শুধু এ প্লাস নয়, গোল্ডেন এ প্লাস! আসরের আলোচ্য বিষয় ছিল, ‘কে কার স্বামীকে দিয়ে কত কাজ করিয়ে নিয়েছে!’ আসর জমেছিল আমার বাড়ির আঙিনায়। আমি জানালার ওপাশ থেকে ঘাপটি মেরে কান খাড়া করে শুনছিলাম। যদিও ঘাপটি মারার অভ্যাস আমার নেই। বিষয়বস্তু কান অবধি পৌঁছানোর কারণে ঘাপটি মেরে শুনতে বাধ্য হলাম। 

আহ! সবাই বুক ফুলিয়ে বলে যাচ্ছিল। জুলেখা বেগম জানিয়েছে, সে এবার ঈদে রান্না করলেও গোশত কাটাকুটি করিয়ে নিয়েছে স্বামীর হাতে। আসমা বেগম জানিয়েছে, সে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে, কাটাকুটি থেকে রান্নাও স্বামীই করেছে। এসব শুনে শুনে নাহিদা বেগম ফুলে ফুলে ঢোল হচ্ছিল। মনে মনে নিজের স্বামীকে (আমাকে) কল্পনায় চিবিয়ে খাচ্ছিল!

যেন মনে মনে বলছিল, অন্তত এই ঈদে কাজগুলো এগিয়ে দিতে পারত! তাহলে এটা বলে হলেও ইজ্জতটা রক্ষে হতো। এমন বজ্জাত স্বামী মনে হয় আর নেই!

আমি তার কল্পনা ধরতে পেরেছিলাম, কারণ আমাকে চিবিয়ে খাওয়ার কল্পনায় তার চেহারায় যে চিত্র ধারণ করে, সে চিত্র আমি বুঝতে পারি। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। ভিন্ন এক চেহারা!

নাহিদা বেগম হেরেই যাচ্ছিল। ঠিক হেরে যাওয়ার একটু আগে নাহিদা বেগমের চেহারা ধপ করে প্রদীপের মতো জ্বলে উঠল। সে ইউরেকা, ইউরেকা বলে চিৎকার করে উঠল। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। নাহিদা বেগম বলল, ‘আমি তোমাদের থেকে এগিয়ে।’ সবাই অবাক হয়ে দৃষ্টি ফেরালেন নাহিদা বেগমের দিকে। সমস্বরে জানতে চাইল, ‘কীভাবে?’ – ‘আমি উনাকে দিয়ে গরুর নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কার করিয়েছি!’ শুনে সবাই হা করে রইল।

সভাপতি, সুহৃদ সমাবেশ, ছাগলনাইয়া (ফেনী)

আরও পড়ুন

×