রঙে ভরা রঙ্গ
কফিশপে লুঙ্গি

সাইফুল ইসলাম জুয়েল
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
কেউ দেরি করলে মানুষ বিরক্ত হয়। অথচ এ মুহূর্তে সেই মানুষটির দেরিতে বিন্দুমাত্র রাগান্বিত হচ্ছি না আমি। বরং কায়মনোবাক্যে চাচ্ছি সে যেন দেরিতে আসে। কবি বলেছেন, কেউ একেবারে না আসার চাইতে দেরিতে আসা ভালো। আমি চাচ্ছি সে দেরিতে আসুক কিংবা না আসুক। অন্তত তাড়াতাড়ি না আসুক। কফিশপে বসে আছি। এখানে ঢোকার ঠিক আগমুহূর্তে রিকশা থেকে নামতে গিয়ে প্যান্টের পেছনটা ‘ফড়াৎ’ করে একটা শব্দ করে হাঙ্গরের মতো মুখ হাঁ করে ফেলেছে। আড়াল দেখে সেই যে এসে বসেছি, ওঠার নামা করিনি। বসেই চটজলদি অনলাইনে একখানা লুঙ্গির অর্ডার দিয়েছি। মেয়েটি আসার আগে লুঙ্গির ডেলিভারি পেলে হয়।
এখানে আমাদের প্রথম দেখা হবে। আমরা দু’জন সম্ভাব্য পাত্র-পাত্রী। আমাদের আলাপ যদি ঠিকঠাক এগোয়, তাহলে এই শহরের একদল লোক একদিন পেট পুড়ে খেতে পারবে।এক কাপ কফির অর্ডার দিয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। কফির ওপরে সুন্দর একখানা ঠোঁট আঁকা। বসে বসে ভাবছিলাম, বয়স তো কম হয়নি। এখনও ছাদনাতলায় যাওয়া হলো না। তাই প্রেয়সীর অধরে চুমু আঁকতে পারি বা না পারি, আজ এই কাপভর্তি কফিতে অঙ্কিত ওষ্ঠে একখানা চুমু খেয়েই যাব। হঠাৎ ‘ভন ভন’ শব্দে বেশ চমকে উঠলাম। একটা দুষ্টু মাছি কাপের চারপাশে চক্রাকারে ঘুরছে।
‘আরে ভাই সৌরজগৎ, গ্রহ-নক্ষত্র, ভূগোল... এসব আমাকে ডেমো দেখিয়ে বোঝাতে হবে না; যা তো এখান থেকে।’ তখনই টের পেলাম আমার সামনে এক রমণী এসে দাঁড়িয়েছে। কাপ থেকে চোখ না সরিয়েই বললাম, ‘জি বলুন।’ ‘আপনিই কি সে?’ ‘আমি কে?’ আমার দৃষ্টি এখনও মাছিটির দিকে। সে এবার আমাকে জিলাপির প্যাঁচ শেখাচ্ছে। কোন দিক থেকে কোনদিকে যে যাচ্ছে...! ‘ইয়ে মানে... আপনিই কি সেই পাত্র?’ ‘আজ্ঞে।’ ‘বসতে পারি?’ ‘নিশ্চয়ই।’ ওয়েটার আরেক কাপ কফি এনে রাখল। টের পেলাম, আমার সামনে বসা রমণী তাতে চুমু– সরি চুমুক লাগিয়েছে। মাছিটি বেশ জ্বালাচ্ছে বলে মেয়েটির দিকে তাকাতেও পারছি না। এভাবে কতটা সময় কাটল জানি না। সামনে তাকিয়ে দেখি সে চলে গেছে! আমার মনে তখন বেজে উঠল করুণ রাগিণী, ‘বাবা, আমার কি বিয়ে হবে না?’ হঠাৎ মোবাইল ফোনের আওয়াজে বাস্তবে ফিরে এলাম। ওপাশ থেকে অদ্ভুত রিনরিনে কণ্ঠে বলল, ‘প্রথমে তীব্র অভিমান জমেছিল মনে।’ ‘কেন?’ ‘বারে! সামনে সুন্দরী মেয়ে বসে আছে। আর আপনি কিনা তার দিকে একটিবারের জন্যও তাকালেন না।’ বললাম, ‘ইয়ে মানে... সরি!’ ‘আপনি যে লজ্জায় আমার দিকে তাকাননি, সে আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি!’ লজ্জায়! তা বটে। লুঙ্গির ডেলিভারি পাইনি এখনও। প্যান্টের অমন চিচিং ফাঁক অবস্থায় লজ্জা তো মনে থাকবেই কিছুটা। ‘এই গুণটা আমার হেভভি পছন্দ হয়েছে।... অ্যাই লেবু!’ ‘আই লেবু টু!’ ওপাশ থেকে মেয়েটি কিছুটা দ্বিধাভরা কণ্ঠে বলল, ‘ইয়ে... ওই কথাটা আমি বলিনি।’ আমি জানি, তার পাশ দিয়ে কোনো এক লেবু বিক্রেতা যাচ্ছিল, হাঁকটা সে-ই দিয়েছিল। তবুও মজা করে বললাম! হঠাৎ ওয়েটার এসে বলল, ‘স্যার, আপনার লুঙ্গি!’ সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ওপাশ থেকে প্রশ্ন এলো, ‘এই, আপনি কফিশপে লুঙ্গি দিয়ে কী করেন? আপনি বুঝি বাইরেও লুঙ্গি পরে চলাফেরা করেন? আই লাইক ইট, ম্যান।’ আমি খুশিতে বাকবাকুম। বিড়বিড়িয়ে বললাম, ‘আমাদের বাসর রাতে ডুয়েট ড্যান্স হবে। লুঙ্গি ড্যান্স।’
সুহৃদ, পটুয়াখালী
- বিষয় :
- সুহৃদ সমাবেশ