চাঁদে পা রাখার ৫৪ বছর

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই অ্যাপোলো-১১ চাঁদের বুকে অবতরণ করে
মোশারফ হোসেন
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে থিয়া নামে একটি গ্রহাণু নতুন ও প্রায় গলিত পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে। এতে গ্রহটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। এই বিপর্যয়ের পর সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ থেকে নতুনভাবে পৃথিবী সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয়েছিল চাঁদেরও।
প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে চাঁদ নিয়ে কাজ করার উদাহরণও পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে গ্রিক দার্শনিক অ্যানাক্সাগোরাস অনুমান করেন চাঁদ পাথুরে এবং প্রায় পৃথিবীর মতো। জ্যোতির্বিদ্যায় আধুনিক যুগের সূচনা হয় ১৭ শতকে টেলিস্কোপ আবিষ্কারের মাধ্যমে। টেলিস্কোপ চাঁদের গভীর কৌতূহলের দরজা খুলে দেয়। যেহেতু চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের ও একমাত্র উপগ্রহ, তাই কম শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদ সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা তুলনামূলক সহজ ছিল। ১৭ থেকে ২০ শতকের গোড়ার দিকে চাঁদ ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে। এ সময় বিজ্ঞানীরা চাঁদের ছবি আঁকার পাশাপাশি ছবি তুলতেও সক্ষমতা অর্জন করেন। এ সময় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতেও চাঁদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ১৬ শতকে জোহানেস কেপলার প্রোটো-সাই-ফাই উপন্যাস ‘সোমনিয়াম’ লেখেন। এই উপন্যাসের মাধ্যমে কেপলার চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন– তা তুলে ধরেন।
১৯০২ সালে জর্জ মেলিয়াস চাঁদ নিয়ে তৈরি করেন ‘অ্যা ট্রিপ টু দ্য মুন’ সিনেমা। এসব কল্পকাহিনি বাস্তবে রূপ নেয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। শুরুতে প্রতিযোগিতা ছিল পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির। দ্রুতই প্রতিযোগিতা মহাকাশমুখী হয়ে যায়। ১৯৫৭ সালে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ হিসেবে স্পুটনিককে মহাকাশে পাঠানো হয়। তারপর ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে মানুষবাহী মহাকাশযান পাঠায়।
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই যখন অ্যাপোলো-১১ চাঁদের বুকে অবতরণ করে, তখন নাসার অ্যাপোলো মিশন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন তোলে। নাসার তথ্য অনুসারে, এ সময় আনুমানিক ৬৫ কোটি মানুষ সরাসরি চন্দ্র অভিযান দেখে। এ অভিযানে পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নিল আর্মস্ট্রং ও দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে বাজ অলড্রিন চাঁদের বুকে পা রাখেন। ১৯৭২ সালে জেন সারনান নাসার মহাকাশযান ‘অ্যাপোলো-১৭’ নিয়ে চাঁদে অবতরণ করেন। পরে নাসা আরও কয়েকটি চন্দ্রাভিযান চালায়। এর মাধ্যমে চাঁদ থেকে মাটি ও শিলা সংগ্রহ করে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মুক্ত করা হয়।
২০ জুলাই মানুষের চাঁদে পা রাখার ৫৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সেই প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও মানুষের মধ্যে চাঁদের প্রতি আগ্রহ এখনও কমেনি। তাই তো প্রতি বছর নতুন নতুন মহাকাশযান নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চাঁদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। v