ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

কফির চাষ এখন দেশে

কফির চাষ এখন দেশে

মধুপুরের ছানোয়ার হোসেন ব্যক্তি উদ্যোগে প্রথম কফি চাষ শুরু করেন

--

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের লাল মাটিতে কফি চাষ শুরু হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে। কফি চাষের জন্য মধুপুরের মাটি, জলবায়ু বিশেষ উপযোগী। ২০২১ সালে শুরু হওয়া কফি চাষ এখন ব্যাপকহারে বাড়ছে। কৃষকরা কফি চাষকে ঘিরে নতুন স্বপ্নের জাল বুনছেন। কফি চাষ করে এবার বঙ্গবন্ধু কৃষি স্বর্ণপদক পেয়েছেন স্থানীয় কৃষক ছানোয়ার হোসেন। লিখেছেন আনছার আলী

ভূ-প্রকৃতি ও কৃষিশস্যের এক বৈচিত্র্যময় অঞ্চল মধুপুর গড়। টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলার অংশ নিয়ে গঠিত এ লাল মাটির গড়। অঞ্চলটি সমতল হলেও ছোট ছোট টিলা আর বাইদে ঘেরা। উঁচু অংশকে টিলা, নিচু অংশকে বাইদ বলে। নিচু অংশ কৃষকরা ধান চাষের জন্য ব্যবহার করেন। উঁচু এলাকায় রয়েছে অবারিত বন ও চোখ জুড়ানো কৃষি ফসলের মাঠ। এখানে নতুন অতিথি ফসল হিসেবে সুনাম কুড়াচ্ছে কফি। মধুপুর গড় অঞ্চলের মাটি, ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতাশক্তি ভালো থাকার কারণে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মধুপুরের লাল মাটিতে গড়ে ওঠা প্রথম কফি বাগান মহিষমারা গ্রামে। মধুপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের এ গ্রামে ছানোয়ার হোসেন প্রথম ব্যক্তি উদ্যোগে কফি চাষ শুরু করেন। সরেজমিন মহিষমারা গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ছানোয়ার পাঁচ বছর আগে শখের বশে কফি চাষ শুরু করেন। প্রথমে রাঙামটি জেলার রায়খালী থেকে ২০০টি চারা সংগ্রহ করে এ আবাদ শুরু করেন। গড়ে তুলেছেন কফির বাগান। এখন প্রায় দুই বিঘা জমিতে রয়েছে প্রায় ৬০০ পরিপক্ব গাছ। প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় কফি ঝুলছে। যেন এক খণ্ড কফিরাজ্য।

দুই বছর আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এখানে কফি চাষের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাজুবাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষকদের মাধ্যমে মধুপুরে ১১ হেক্টর জমিতে কফি চাষ শুরু করেন ৫৩ জন কৃষক। এখন ব্যাপকহারে ছড়িয়েছে কফি চাষ। প্রায় ৪৯ হেক্টর জমিতে ৩৬ হাজার ৭০০টি চারা রোপণ করেছেন ২৬৫ জন কৃষক। পৃথিবীতে ৬০ প্রজাতির কফি থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে দুই রকমের কফির চাষ রয়েছে। এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য এরাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, রোবাস্টা জাতের কফি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বেশি উপযোগী। যে কারণে পার্বত্য অঞ্চল ও মধুপুর গড়ের আবহাওয়ায় এর সম্প্রসারণ সম্ভব।

কফির চারাগুলো দেখতে কিছুটা দেবদারু চারার মতো। প্রতিটি গাছে লতিয়ে রয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ কফির ফল। এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করেছে। কৃষিতে এ ফসল যেন এক নতুন অতিথি। কফির পাকা ফল টকটকে লাল, আবার কোনোটা কাঁচা হলুদের মতো। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিটি পরিপক্ব গাছে ফুল ধরা শুরু হয়। মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল থেকে গুটি গুটি ফলে পরিণত হয়। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ফল পরিপক্বতা লাভ করে। পরে এগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। বাজারজাত ও কফি পান করার জন্য উপযোগী করতে মেশিনের মাধ্যমে কফিবীজ গুঁড়া করে নিতে হয়। আবার কফির বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায় বলেও জানান কৃষকরা।

ফলন ভালো হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হেক্টরপ্রতি ৭৫০ থেকে ১ হাজার কেজি এবং গাছপ্রতি বছরে এক কেজি কফি পাওয়া সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়ভাবে কফির দাম নির্ধারিত না থাকলেও কৃষক ছানোয়ার হোসেন গ্রিন কফি দেড় হাজার টাকা ও প্রসেসিং করা কফি আড়াই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বলে জানান।

মধুপুর অঞ্চলে কফি চাষ নিয়ে এখন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। কাঙ্ক্ষিত ফলন ও বাণিজ্যিক পথ সুগম হলে সুসময়ের দুয়ার খুলে যাবে এ অঞ্চলের কৃষকদের। স্থানীয় কফি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মধুপুর অঞ্চলে কফি প্রসেসিংয়ের মেশিন আনা না হলে তারা কফি চাষে কতটা লাভবান হবেন, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। তারা মধুপুর এলাকায় কফি প্রসেসিং সেন্টার স্থাপনের দাবি জানান। স্থানীয়ভাবে কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থা গড়ে না উঠলেও পার্শ্ববর্তী উপজেলা ধনবাড়ী হর্টিকালচারের মাধ্যমে প্রসেসিং চলবে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল। তিনি জানান, মধুপুরের মাটিতে অম্লত্ব ও উর্বরতা শক্তি কফি চাষের উপযোগী। বৃষ্টিপাত ও মাটির গঠন বিন্যাস মিলে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। 

আরও পড়ুন

×