জেনে রাখুন
প্রচলিত ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
সরাসরি কাউন্টারে না গিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সহায়তায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করাই ডিজিটাল ব্যাংকিং হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রচলিত ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার মধ্যে রয়েছে– ইন্টারনেট বা অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) সেবা, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড সেবা, মোবাইল ব্যাংকিং, এসএমএস (শর্ট মেসেজ সার্ভিস) সেবা ইত্যাদি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যের আলোকে ব্যাংকগুলোর বর্তমান ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো।
ইন্টারনেটের সহায়তায় ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করাই হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিং। এক্ষেত্রে যে ব্যাংকে গ্রাহকের হিসাব থাকবে সেই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনের মাধ্যমে গ্রাহকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করতে হবে। গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক গ্রাহককে একটি আইডি ও পাসওয়ার্ড সরবরাহ করে। পরবর্তী সময়ে নিজের পছন্দমতো গ্রাহক পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দিষ্ট সময় পর পর পাসওয়ার্ডটি পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে হবে।
ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে একজন গ্রাহক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সুরক্ষিত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তাঁর ব্যাংক হিসাবে প্রবেশ করতে পারেন। ইন্টারনেট ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে একজন গ্রাহক বিভিন্ন সুবিধা পেতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে– দিনে ২৪ ঘণ্টা অ্যাকাউন্টে প্রবেশের সুবিধা, হিসাবের ব্যালান্স অনুসন্ধান, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সুবিধা ব্যবহার করে এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে বা মোবাইল ওয়ালেটে অর্থ স্থানান্তর, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ল্যান্ডফোন, মোবাইল, টিউশন ফি, ইন্টারনেট বিল ইত্যাদি), অনলাইন কেনাকাটা, হিসাবের বিবরণী অনুসন্ধান, ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন ডিপোজিট স্কিমে সঞ্চয় ও ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম প্রদান ইত্যাদি।
এটিএম সেবা
এটি এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে গ্রাহক ব্যাংকে না গিয়ে তাঁর কার্ড ব্যবহার করে কাছের বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের বুথে গিয়ে প্রথমে কার্ড প্রবেশ করার পর পিন চাপতে হয়। তারপর পিন আইডেনটিটি পরীক্ষা হওয়ার পর রিকোয়েস্টটি ব্যাংকের এটিএমের সুইচে যায়। তারপর সেখান থেকে ভেরিফাই হলে অ্যাকাউন্টের টাকা উত্তোলন করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় খুব সহজেই দেশের যে কোনো প্রান্তে অবস্থিত এটিএম বুথ থেকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে নগদ টাকা উত্তোলন করা যায়। ফলে দূর-দূরান্তে ভ্রমণে বা শপিং করতে নিজের সঙ্গে নগদ টাকা বহন করার ঝুঁকি কমানো যায়।
এসএমএস সেবা
এটি এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে গ্রাহক ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারেন এবং হিসাবসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য পেতে পারেন। এ ছাড়া গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের যাবতীয় লেনদেন সম্পর্কে অবগত করে স্বয়ংক্রিয় বার্তা পাঠানো হয়ে থাকে, যা গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের নিরাপত্তা বাড়ায়।
কার্ড সেবা
ডেবিট কার্ড এক ধরনের পেমেন্ট কার্ড, যা গ্রাহকের হিসাবের বিপরীতে ইস্যু করা হয় এবং গ্রাহক হিসাব থেকে সরাসরি অর্থ বিয়োজনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে আর্থিক লেনদেন পরিচালনার সুবিধা প্রদান করে। ক্রেডিট কার্ড এক প্রকারের পেমেন্ট কার্ড, যার মাধ্যমে ওই কার্ডের মালিক পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট তারিখে সমন্বয়যোগ্য ঋণের ভিত্তিতে বর্তমানে লেনদেন পরিচালনা করতে পারেন। এছাড়া প্রিপেইড কার্ড নামে আরও এক ধরনের পেমেন্ট কার্ড পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমার বিপরীতে এ কার্ড ইস্যু করা হয়। এ জাতীয় কার্ড গ্রহণের জন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের হিসাব থাকার প্রয়োজন নেই।
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস
রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরের বিপরীতে অর্থ লেনদেনের জন্য যে হিসাব খোলা হয় সেটিই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) হিসাব। এ ধরনের হিসাবে গ্রাহকের টাকা ইলেকট্রনিক উপায়ে জমা থাকে। এই সেবার মাধ্যমে নিজের এমএফএস হিসাব থেকে নগদ টাকা জমা ও উত্তোলন, অর্থ প্রেরণ, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, পণ্য-সেবার দাম পরিশোধ ইত্যাদি করা যায়। এমএফএস হিসাব খোলার জন্য যে কোনো অপারেটরের একটি সক্রিয় ও রেজিস্টার্ড সিম, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও গ্রাহকের সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত এজেন্টের কাছে গেলে তিনি অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে পারবেন। এছাড়া নিজের স্মার্টফোনে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক উপায়েও এ হিসাব খোলা যায়। সেক্ষেত্রে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল সেট ব্যবহার করে গ্রাহকের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি তুলে আপলোড করে এবং প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এ হিসাব খোলা যায়।