ফিচার
টেলিগ্রাম কী বলছে

আলাউদ্দিন আলাদিন
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ০৫:৫৩
সময়ের জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ তাদের প্রাইভেসি নীতিতে পরিবর্তন করায় অনেকেই খুঁজছেন বিকল্প অ্যাপ। ফলে মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে এখন জনপ্রিয় হচ্ছে টেলিগ্রাম বা সিগন্যাল অ্যাপ। যদিও টেলিগ্রাম ছিল আগে থেকেই জনপ্রিয়।
সাইলেন্ট মেসেজ: কাউকে সাইলেন্ট মেসেজ পাঠালে তাঁর ফোনে কোনো নোটিফিকেশন শব্দ হবে না। গভীর রাতে জরুরি তথ্য প্রেরণের জন্য ফিচারটি বেশ সহায়ক।
সিক্রেট চ্যাট: সিক্রেট চ্যাটে যে বার্তাবিনিময় করা হয়ে থাকে, তা প্রেরক ও প্রাপক ছাড়া আর কেউ দেখতে পারবে না। এমনকি যারা এটি বানিয়েছেন, তারাও দেখতে পারবেন না। টেলিগ্রামের সব মেসেজ বিশেষভাবে এনক্রিপড করা। ফলে প্রাইভেসির প্রশ্নে বহুলাংশে টেলিগ্রাম অ্যাপ সেরা হিসেবে বিবেচিত।
স্ক্রিনকাস্ট করে না: লাইভ গেমিং, প্রেজেন্টেশন বা কোনো কারণে ডিভাইস রেকর্ড করার প্রয়োজন হলে টেলিগ্রাম অপর পক্ষকে মেসেজ নোটিফিকেশন প্রদর্শন করে না। ফলে নিশ্চিন্ত মনেই প্রয়োজনে রেকর্ড করা যায়।
নম্বর হাইড: অন্য সব মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম, যেমন– হোয়াটসঅ্যাপে কাউকে মেসেজ প্রেরণের প্রয়োজন হলে তাঁর ফোন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু টেলিগ্রামে কারও ফোন নম্বর ছাড়াই তাঁর ইউজার আইডি ব্যবহার করে মেসেজ পাঠানো যায়। ফলে ফোন নম্বর গোপন (হাইড) রাখার সুযোগ থাকে। আবার গ্রুপে যুক্ত হলে সদস্যরা কেউই ফোন নম্বর দেখতে পায় না।
ক্লাউড স্টোর: ক্লাউড বেজড হওয়ায় বহু ডিভাইসের মাধ্যমে টেলিগ্রাম ব্যবহার করা যায় সহজেই। যার মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, উইন্ডোজ, লিনাক্স, ম্যাক উল্লেখযোগ্য। এমনকি ওয়েব ব্রাউজারেও টেলিগ্রাম ব্যবহার করা যায়। টেলিগ্রামের নিজস্ব ক্লাউড স্টোরে সব ফাইল সংরক্ষিত থাকে। ছবি, ভিডিও ও টেক্সটের জন্য আলাদা কোনো মেমোরির প্রয়োজন হয় না। ক্লাউড থেকেই যখন ইচ্ছা ডাউনলোড করা যায়।
দ্রুততা: বাকি সব অ্যাপ্লিকেশন থেকে টেলিগ্রাম দ্রুত বার্তাবিনিময়ে পারদর্শী। কম ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার করেও দ্রুততার সঙ্গে মেসেজ পাঠানোর জন্য অ্যাপটি জনপ্রিয়।
দ্রুত ফাইল ট্রান্সফার: টেলিগ্রামে সর্বোচ্চ ১ জিবি সাইজের মিডিয়া ফাইল বা ডকুমেন্ট বিনিময় করা যায়। বিপরীতে হোয়াটসঅ্যাপে মাত্র ১৬ মেগাবাইট (এমবি) সাইজের ফাইল ট্রান্সফার করা যায়।
আঙুলের ছাপে লক: ফিঙ্গারপ্রিন্ট লকের অনবদ্য সুবিধা থাকছে টেলিগ্রাম অ্যাপে। আঙুল ভেজা বা ময়লা থাকলেও টেলিগ্রামে লক খোলা যায়। কারণ, বিশেষ অবস্থার জন্য থাকছে চার সংখ্যার বিশেষ পাসকোড। যার মাধ্যমে আঙুলের বিকল্প হিসেবে লক খোলা যায়। গত বছর হোয়াটসঅ্যাপে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক ফিচার যুক্ত হয়।
বহু ডিভাইস যুক্ত: টেলিগ্রাম অ্যাপে একসঙ্গে বহু ডিভাইসে যুক্ত হওয়া যায়। ফলে সব ডিভাইসেই অ্যাপটি সমানভাবে সচল থাকে। অন্যদিকে হোয়াটসঅ্যাপ শুধু নিবন্ধিত নম্বরযুক্ত স্মার্টফোনকেই মূল ডিভাইস হিসেবে বিবেচনা করে। বাকি সব ডিভাইসে স্মার্টফোন দিয়েই লগইন করতে হয়।
ইউআই কাস্টমাইজ: ইন্টারফেসকে ইচ্ছামতো কাস্টমাইজ করা যায় টেলিগ্রামে। ফন্ট সাইজ, থিম কালার, চ্যাট লিস্ট— ফিচারকে পছন্দ অনুসারে সাজানো যায়। কম আলোতে কাজে অভ্যস্ত হলে ‘নাইট মোড’ চালু করে তার আলোকেও কমবেশি করা যায়।
চ্যানেল ও গ্রুপ: চ্যানেল ও গ্রুপ নামে দুটি জনপ্রিয় ফিচার আছে টেলিগ্রামে। দুই লাখ মেম্বার যোগ করা যায় টেলিগ্রাম গ্রুপে। যেখানে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করা যায় ২৫৬ জন সদস্য। টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কমিউনিটি তাদের সাবস্ক্রাইবারদের লিঙ্ক, টেক্সট, ছবি ও ভিডিও পাঠাতে পারে। তবে সাবস্ক্রাইবারদের রিপ্লাই দেওয়ার সুযোগ থাকে না। আনলিমিটেড সাবস্ক্রাইবার যুক্ত করা যায় টেলিগ্রাম চ্যানেলে। বর্তমানে এ ফিচার বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস শিক্ষার্থীদের কাছে প্রেরণে জনপ্রিয় হয়।
গেটওয়ে সার্ভিস (পেমেন্ট): বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশে স্ট্রাইপ, ইয়ান্ডেক্স, পেমি, রেভ, লিকপে— পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন সমর্থন করে টেলিগ্রাম। তবে ফিচারটি প্রিমিয়াম সদস্যদের নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের জন্য প্রযোজ্য।
ইতিহাসে টেলিগ্রাম
২০১৩ সালে নিকোলাই ও পাভেল দুরভ নামের দুই রাশিয়ান বংশোদ্ভূত ভাই মেসেজিং অ্যাপ ‘টেলিগ্রাম’ প্রতিষ্ঠা করেন। পাভেল টেলিগ্রামকে আর্থিক বিভাগ আর নিকোলাই অ্যাপের প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নে কাজ করেন। টেলিগ্রাম তৈরি করতে নিকোলাই একটি অনন্য কাস্টম ডেটা প্রটোকল তৈরি করেন। যার কারণে টেলিগ্রাম অ্যাপটি একাধিক ডেটা সেন্টারের সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম। ফলে টেলিগ্রাম উন্মুক্ত, সুরক্ষিত ও অপ্টিমাইজড অ্যাপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০২২ সালের ২১ জুন টেলিগ্রামে প্রিমিয়াম ফিচার যুক্ত হয়।
- বিষয় :
- টেলিগ্রাম
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম