ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

ইআরএফের কর্মশালায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে সরকারের

মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে সরকারের

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

মূল্যস্ফীতির কারণে জনগণের কষ্ট হচ্ছে। সরকারের মধ্যেও উদ্বেগ আছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে  অস্বস্তি আছে সরকারের মধ্যে।

গতকাল রোববার রাজধানীতে এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা র‍্যাপিড বাংলাদেশ যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

পল্টন টাওয়ারে ইআরএফ কার্যালয়ে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, জার্মানিভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেডরিক এবার্ট স্টিফটাং বাংলাদেশের প্রতিনিধি সাধন কুমার দাস প্রমুখ। ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মিরধা কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে আমদানি শুল্ক বেশি। এ কারণেও মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। তবে আগামীতে পণ্যের সরবরাহ বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।  

রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, রপ্তানি বৈচিত্র্যময় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ট্যারিফ পলিসিতে বেশ কিছু সংশোধন করা হয়েছে। ড. শামসুল আলম বলেন, রপ্তানিতে বৈচিত্র্য কিছুটা কম হলেও ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। পাট, পাটপণ্যসহ কয়েকটি পণ্য ১০০ কোটি ডলারের ওপরে রপ্তানি হয়। আগামীতে বৈচিত্র্যের বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাবে।

মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উদ্বেগ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে ফ্রান্সও আলাদা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের জন্য একজন মানবাধিকারকর্মীকে আদালত সাজা দিয়েছেন। শামসুল আলম বলেন, হেফাজতের আন্দোলন প্রশমিত করার সময় ১০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। অথচ এ রকম তথ্য কোথাও নেই। তিনি বলেন, যে কোনো সংবাদ তৈরির আগে তথ্য-উপাত্ত ভালোভাবে যাচাই করা প্রয়োজন। জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। অনেক মিডিয়া তথ্য যাচাই না করে ভুল সংবাদ পরিবেশন করে।

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইইউতে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করাসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্য সম্পর্কিত মান, তথ্য ও জ্ঞানের অভাব, অর্পযাপ্ত লজিস্টিক সুবিধা ইত্যাদি। তবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের জন্য সম্ভাব্য পণ্য শনাক্ত করা, বন্ডেড ওয়্যার হাউসের সুবিধা নিশ্চিত করা, মান যাচাই কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা জোরদার করা, ব্যবসার খরচ কমানো ইত্যাদি।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার। এর মধ্যে ইইউ দেশগুলোতে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২৫.২ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৪৫ শতাংশ। ইইউ থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৯২ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৯ সাল পর্যন্ত এ বাজারে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাবে। এই সময়ের মধ্যে ইউরোপের বাজারের জন্য পণ্যে বৈচিত্র্য আনার সুযোগ রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ ইইউতে কটন পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। ২০২২ সালে ইইউর মোট কটন পোশাক আমদানিতে বাংলাদশের শেয়ার ছিল ৩৪.৭ শতাংশ। আর চীনের শেয়ার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। তবে নন-কটন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের শেয়ার ১২.২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে চীন সর্বোচ্চ ৪১.২ শতাংশ শেয়ার নিয়ে এগিয়ে আছে। র‍্যাপিডের গবেষণায় ছয়শর বেশি সম্ভাব্য রপ্তানি পণ্য শনাক্ত করা হয়েছে। পোশাকবহির্ভূত পণ্যে আরও প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।

ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, ইইউর বাজারে রপ্তানির জন্য আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে চলা অপরিহার্য।  এজন্য মান যাচাইকারী কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা জোরদার করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ইইউ রপ্তানি প্রসারিত করতে হলে দেশে কার্বন বাজার প্রতিষ্ঠা, কার্বন নিঃসরণ কমানোর নীতি প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×