‘এখন দুই বেলা খাওন জোটাইতে পাইরতেছি’
কল্যাণ ভৌমিক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
‘করোনাকালে স্বামীর বেসরকারি কোম্পানির চাকরিটা চইলা যায়। সংসারে নাইমা আসে অভাব-অনটন। নিরুপায় হইয়া পড়ি। কিন্তু এ সময় সলপ ইউনিয়ন পরিষদে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়া বিনা পয়সায় একটা মেশিন পাই। সেই মেশিন দিয়া জামা-কাপড় তৈরি কইরা বাজারে কাপড় বিক্রি কইরা ভালোই রোজগার করি। এখন দুই বেলা খাওন জোটাইতে পাইরতেছি।’ এভাবেই নিজের কষ্টের কথা জানান উল্লাপাড়ার সলপ গ্রামের সাবিনা ইয়াসমিন। সাবিনার মতো অসচ্ছল পরিবারের অনেক নারীই এখন সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছেন।
সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অনেক নারী মেশিনে সেলাইয়ের কাজ শিখছেন। কানসোনা গ্রামের লাকী খাতুন জানান, প্রশিক্ষণ নিয়ে বিনামূল্যে একটি মেশিন পেয়েছেন। জামা-কাপড় তৈরি করে যা আয় করছেন তাতে সংসারে অনেক সমস্যা দূর হচ্ছে। হাঁড়িভাঙ্গা গ্রামের অন্তরা খাতুন জানান, অসচ্ছল সংসারে প্রতিদিন নানা সমস্যার সৃষ্টি হতো। একজনের কাছ থেকে শুনে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন নিয়ে বাড়ি ফিরে কাজ শুরু করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সলপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকাত ওসমান জানান, অভাবী পরিবারে শুধু ত্রাণের মালপত্র দিয়ে সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। তাই বেকার নারীদের স্বাধীন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি এ প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করেছেন। এতে সহায়তা দিচ্ছে উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়। প্রশিক্ষণ নেওয়া মেয়েদের সেলাই মেশিন দেওয়ার ব্যাপারে ওই সরকারি অফিস এবং ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে চাহিদা অনুসারে অর্থের জোগান দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় তিনি ব্যক্তিগত আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছেন। এতে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। অনেক নারী এখন কর্মে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। ঘুচতে শুরু করেছে সংসারের অভাব। গত চার বছরে চার শতাধিক নারী এ কেন্দ্র থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
উল্লাপাড়া উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান, সলপ ইউনিয়ন পরিষদে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি স্থানীয় অসচ্ছল পরিবারের নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তার অফিস থেকে এ ব্যাপারে সাধ্যমতো সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।