ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

রূপশৈলী

চুলের যত্নে ভেষজপণ্য

চুলের যত্নে ভেষজপণ্য

তাসলিমা তামান্না

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ০৬:৩৮

প্রাচীনকাল থেকেই নারীর সৌন্দর্যের সঙ্গে তাঁর চুলের বর্ণনা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সপ্তদশ শতকের বিখ্যাত কবি আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ কাব্যে পদ্মাবতীর চুলের বর্ণনায় লিখেছেন, ‘আপাদলম্বিত কেশ কস্তুরী সৌরভ/ মহা অন্ধকারময় দৃষ্টি পরাভ। পদ্মাবতীর কেশরাজি পা পর্যন্ত লম্বা, আর তাতে ভরপুর সর্বদা মৃগনাভির সৌরভ।’ অন্যদিকে জীবনানন্দ দাশ বনলতা সেনের চুলের কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন, ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা ...।’

কিন্তু যান্ত্রিকতার এ পৃথিবীতে নারীর চুলের সেই সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে অনেকটাই। ক্রমাগত রাসায়নিকের ব্যবহার, দূষণে প্রতিনিয়তই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চুল। একটা সময় ছিল চুলের যত্নে নারীরা প্রাকৃতিক সব উপাদানের ওপরেই ভরসা করতেন। তাদের চুলও থাকত ঘন, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। এ ব্যাপারে ভেষজ পণ্যের প্রতিষ্ঠান ‘আমলকী’র স্বত্বাধিকারী এবং ভেষজ বিশেষজ্ঞ নন্দিতা শারমিন জানান, মূলত পানি ও পরিবেশ দূষণের কারণেই চুল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, ভেষজপণ্য অবশ্যই চুল-ত্বকের জন্য উপকারী। তবে চুলের যত্নে নিয়মিত তেল ম্যাসাজ ও চুল পরিষ্কার করাও জরুরি।

গুণগত কারণে সৌন্দর্যচর্চায় দিন দিনই ভেষজ পণ্যের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন মেথি কিংবা জবা। যুগ যুগ ধরে এ দুটি উপাদান মাথার ত্বকের পুষ্টি, চুলের বৃদ্ধি, চুল মজবুত করা এবং চুলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নন্দিতা শারমিন বলেন, মেথিতে চুলের জন্য উপকারী অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, ভিটামিন আছে। এসব উপাদান চুল নরম করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে জবার রস চুল ঘন কালো করতে ভূমিকা রাখে।

এ ছাড়াও মেথিতে থাকা প্রোটিন এবং নিকোটিনিক এসিড, চুলের ফলিকলকে মজবুত করতে সাহায্য করে, চুল পড়া কমায় এবং চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করে। মেথি চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া রোধ করে। মেথিতে বেশ কিছু অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মাথার ত্বককে প্রশমিত করে এবং খুশকি কমায়। কীভাবে ব্যবহার করবেন মেথির হেয়ার মাস্ক: ৩ টেবিল চামচ মেথি সামান্য পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে একই পানিতে বীজগুলো দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। চুলে তেল দেওয়ার পর এ পেস্টটি পুরো মাথার ত্বক থেকে শুরু করে চুলের আগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগান এবং শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখুন। ৩০ মিনিট পর হালকা প্রাকৃতিক শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে হালকা কন্ডিশনার লাগান এবং ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। তোয়ালে ব্যবহার করে স্বাভাবিকভাবে চুল মুছে নিন। পরে চওড়া দাঁতযুক্ত চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান।

মেথি এবং দইয়ের মাস্ক: চার টেবিল চামচ টক দইয়ের সঙ্গে এক টেবিল চামচ মেথির গুঁড়া মিশিয়ে নিন। মাথার ত্বক এবং চুলে ভালোভাবে মিশ্রণটি লাগান। ৩০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলনু। মেথির তেল: আধা কাপ নারকেল তেল গরম করে তাতে এক টেবিল চামচ মেথির বীজ যোগ করুন। ২০ মিনিটের জন্য কম আঁচে ফুটতে দিন। ঠান্ডা হলে ছেঁকে কাচের বোতলে সংরক্ষণ করুন। সপ্তাহে দু’বার এই তেল লাগিয়ে সারারাত রেখে দিতে পারেন। পরের দিন হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এরপর কন্ডিশনার লাগান। জবা ফুল এবং পাতা চুলের পুষ্টিকর বৈশিষ্ট্যের জন্য আয়ুর্বেদে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। জবা ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জবা ফুল মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালনও উন্নত করে। জবা ফুলের পাপড়ি এবং পাতায় প্রাকৃতিক কন্ডিশনার বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা চুলকে নরম, মসৃণ করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য অকালে চুল পাকা রোধ করে। জবা ফুল-পাতা মাথার ত্বককে প্রশমিত করে এবং হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে মাথার ত্বকে চুলকানি এবং খুশকির মতো সমস্যাগুলো কমে।

জবার তেল: নারকেল বা তিলের তেলে প্রায় ৫-৬টি জবা ফুল এবং কিছু পাতা মিশিয়ে নিন। অল্প আঁচে কয়েক মিনিটের জন্য তেলটি গরম করুন। চুলা বন্ধ করে তেল ঠান্ডা হতে দিন। এই তেল ছেঁকে নিন এবং নিয়মিত চুলে ম্যাসাজ করার জন্য ব্যবহার করুন। জবার হেয়ার মাস্ক : এক কাপ জবা ফুলের পাপড়ি বা পাতা পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। পরে একটি প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ব্যবহার করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। জবা এবং মেথির কন্ডিশনিং হেয়ার প্যাক: এক টেবিল চামচ মেথির বীজ সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। ভেজানো মেথি বীজের মধ্যে কয়েকটি জবা ফুল এবং পাতা যোগ করুন। এরপর ব্লেন্ডারে দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন বা পাটায় বেটে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও প্যাকটি চুলে লাগালে উপকার পাবেন। 

আরও পড়ুন