ফিলিস্তিন সাহিত্যে গাজা ও মানবিকতা

বিপাশা মন্ডল
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০
মাত্র ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনে বসবাসকারী ২৩ লাখ নাগরিকের গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি এখন নরকের চেয়ে কম নয়। ৯ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ দিয়েছে। খাবার, ওষুধ, পানি, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ। গাজার ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করলে এ অবরোধের ভয়াবহতা সঠিকভাবে বুঝতে পারা যায়। কয়েক দিন ধরে ক্রমাগত বোমাবাজি চলছে। হাসপাতাল, স্কুলসহ অনেক ঘরবাড়ি পুরোপুরি ভূমিকম্পবিধ্বস্ত এলাকার চেহারায় পৌঁছেছে। গাজার একদিকে সমুদ্র, অন্যদিকে ইসরায়েল। দক্ষিণ দিকে সামান্য জায়গাজুড়ে মিসরীয় রাফা সীমান্ত। সে সীমান্ত বন্ধ। গাজায় বসবাসরত মানুষের অবস্থা ঠিক ফাঁদে পড়া ইঁদুরের মতো অথবা পুরো গাজাই যেন একটা বিশাল জেলখানা। এ কারণে অনেক দিন আগেই গাজার লেখক আদানিয়া সিবিল তাঁর ‘আউট অব টাইম’ গল্পে লিখেছিলেন, “এখান থেকে বের হলেই আমার ঘড়ি ঠিকভাবে চলতে শুরু করে। কখনও দ্রুতগতিতেও চলে, কিন্তু এখানে সেই একই ঘড়ি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।”
গাজা ভূখণ্ড বহু বছর ধরেই এমন বিশালায়তন জেলখানা হিসেবে পরিচিত। এখানে বসবাসরত মানুষ সব সময়ই ইসরায়েলি বাহিনীর নিবিড় নজরদারিতে থাকে, তাদের অনুমতি ছাড়া সীমান্তের বাইরে যেতে পারে না। কিন্তু সেই অবরুদ্ধ জায়গায়ও যে এমন নির্মম করুণ মানবিক বিপর্যয় ঘটবে, এমন নিষ্ঠুর আক্রমণের শিকার হয়ে সাড়ে চার হাজারের অধিক নিরপরাধ নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ মানুষ করুণ মৃত্যুবরণ করবে, তা কল্পনায়ও ছিল না। হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের অপেক্ষায় শত শত রোগী, ভেন্টিলেশন দরকার, এসব রোগীর জ্বালানিও শেষ পর্যায়ে, অর্থাৎ জ্বালানি শেষ তো তারাও মৃত্যুর দরজায় পৌঁছে যাবে। ক্যান্সার হাসপাতালেরও একই দৃশ্য। নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুসারে গাজায় নিহতদের অর্ধেক নারী ও শিশু। উল্লেখ্য, গাজা উপত্যকায় ২৩ লাখ মানুষের ৪৭ শতাংশই ছিল শিশু।
৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় গাজার ওপরে এই অনবরত আক্রমণ ও অবরোধ, যাতে হামাসের সামান্য সদস্যসহ মূলত বেসামরিক লোকজন মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী আদেশ জারি করেছে উত্তর গাজা থেকে জায়গা খালি করে ওখানকার ১১ লাখ মানুষকে দক্ষিণ গাজায় চলে যেতে হবে। গাজায় বারবার গুচ্ছ আক্রমণ হয়েছে। কুখ্যাত ‘নাকবার যুদ্ধ’, ‘ছয় দিনের যুদ্ধ’, কখনও ‘অপারেশন কাস্ট লিড’– সেসব রক্তাক্ত অপমানের দিনগুলোর ইতিহাস বারবার উঠে এসেছে গাজায় জন্ম নেওয়া অথবা গাজার সমব্যথী লেখকদের কলমে। এখন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারেরও বেশি নিরপরাধ মানুষ মারা গেছে। এই যুদ্ধ এখুনি না থামলে আরও কত মানুষ মারা যাবে, তার কোনো গোনাগুনতি নেই। এসব দুঃসহ স্মৃতি নিয়েও হয়তো আবার রচিত হবে কোনো রক্তাক্ত আখ্যান। নির্যাতিত গাজার কথা বলে নিচের আলোচ্য বইগুলো।
মাইনর ডিটেইল
আদানিয়া সিবিলের আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘মাইনর ডিটেইল’। যুদ্ধ, সহিংসতা, স্মৃতি এবং ফিলিস্তিনের জনগণের অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন তিনি। উপন্যাসের কাহিনি শুরু হয়েছে ১৯৪৯ সালের গ্রীষ্মে। ফিলিস্তিনবাসীর ভয়াবহ শোকাত্মক নাকবার যুদ্ধের (১৯৪৮ সালের এ যুদ্ধে ফিলিস্তিনি সমাজ ও তাদের দেশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায় এবং ফিলিস্তিনি আরবীয়দের এক বিশাল অংশকে বাস্তুচ্যুত করা হয়) এক বছর পর থেকে। এ ভয়াবহ যুদ্ধে সাত লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে হন– এতে ইসারায়েলিরা উদযাপন করেছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়। গল্পে দেখা যায় ইসরায়েলি সৈনিকরা একজন ফিলিস্তিনি তরুণীকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও হত্যা করে। এরপর তাঁকে বালির মধ্যেই কবর দেয়। অনেক বছর পরে রামাল্লায় একজন নারী এ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ জানার জন্য অবচেতন মনেই বারবার এ দুর্ঘটনাস্থলে ফিরে আসে। যুদ্ধ বিষয়ে একটা ভূতুড়ে আধ্যান, নিষ্ঠুরতা এবং স্মৃতি নিয়ে এ বই অনন্য। বইটি ২০২১ সালের বুকার পুরস্কারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। মাইনর ডিটেইলের বিস্তারিত অনুসন্ধান ফিলিস্তিনের জনগণের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা ও বাস্তুচ্যুত হবার হৃদয়দীর্ণ গল্প। দখলদার বাহিনীর অধীন ঔপনিবেশিক জীবন, ফিলিস্তিনিদের জীবনের সমাধানহীন জটিলতা, অনবরত সংঘাত ও সমস্যা একটা গল্পে তুলে এনে লেখক দেখিয়েছেন আপাত মসৃণ শান্তিপূর্ণ অবস্থার নিচেই লুকিয়ে আছে স্বাধীনতাহীনতার যন্ত্রণা।
আদানিয়া সিবিল ১৯৭৪ সালে ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেন। লেখক এ এম কাত্তান ফাউন্ডেশন থেকে তরুণ লেখক পুরস্কার পান ২০০২ ও ২০০৪ সালে।
আই স রামাল্লা
‘আমি রামাল্লা দেখেছি’ আত্মজীবনীমূলক বইটি লিখেছেন ফিলিস্তিনি কবি ও লেখক মাওরিদ বারঘাওতি। বইটির ইংরেজি ভাষার অনুবাদ প্রথম প্রকাশিত হয় কায়রো প্রেস থেকে ২০০০ সালে এবং পরে ২০০৫ সালের ১৬ মার্চ ব্লুসমবেরি প্রকাশনী থেকে। বইটি সম্পর্কে ওরিয়েন্টালিজমের লেখক ডব্লিউ এডওয়ার্ড সাইদ বলেছেন, “এ বইটি ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের ওপরে লেখা সর্বোত্তম বইগুলোর একটি।” এ ছাড়া গার্ডিয়ান পত্রিকা বলেছে যে এই আত্মজৈবনিক উপন্যাসটি, “কবির নিজের শহরে ফেরার আবেগ নিয়ে তীব্রভাবে গীতিময় এক গদ্য।” ১৯৬৬ সালে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য মাওরিদ মিসরের কায়রো গিয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালের সেই কুখ্যাত ছয় দিনের যুদ্ধ (অথবা জুনের যুদ্ধ যেটা ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েলের যুদ্ধ বা তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ নামেও পরিচিত। যে যুদ্ধে ইসরায়েলের বিপরীতে আরব জোটের যুদ্ধ হয়, শুরুতে মিসর, সিরিয়া এবং জর্ডান ছিল পরে অন্যান্য কিছু রাষ্ট্র যোগ দেয়, যুদ্ধটা জুনের ৫ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।) শেষে যখন তিনি পড়াশোনা শেষে ফিলিস্তিনে ফিরে আসেন, তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। অন্য অনেকের মতোই তিনি বিদেশেই দিন কাটাতে থাকেন। ধারাবাহিক সংগ্রাম ও দেনদরবারের মাধ্যমে ৩০ বছর অপেক্ষার পরে, তাঁর নিজ জন্মশহর, যেখানে শৈশব কৈশোরের স্মৃতি মেখে মাওরিদ বেড়ে উঠেছেন, সেই রামাল্লাতে ঢুকতে দেওয়া হয়।
মর্নিং ইন জেনিন
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আক্রমণ এবং দখলদারি নিয়ে লেখা এই ঐতিহাসিক উপন্যাসটির কালবিস্তৃতি ১৯৪১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। লেখক সুসান আবুলহাওয়া একজন শিশু ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু, যাঁকে প্রাণের দায়ে ঘুরতে হয়েছে বেশ কয়েকটি দেশে। উপন্যাসটি লেখার সময় তিনি নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে একটি ফিলিস্তিনি পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভঙ্গি বিবৃত করেছেন, যারা তাদের মাতৃভূমি, জন্মস্থান এবং প্রিয়জনদের হারিয়েছেন এ সংঘর্ষে। এ উপন্যাসে একটি পরিবারের কয়েকজন সদস্যের কথা বলা হলেও আসলে এতে ফিলিস্তিনের জনগণের সামগ্রিক জীবনযাত্রা, তাদের সহনশীলতা ও অন্তর্গত শক্তিকেও দেখানো হয়েছে, যা তারা তাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি থেকে অর্জন করেছে। পরিবারের গুরুত্ব এবং সেই পরিবারের অমোচনীয় বন্ধন তারা ধরে রেখেছে। দশকের পর দশক চলে আসা যন্ত্রণা ও সংগ্রামের ইতিহাস হয়তো তাদের এ বন্ধন আরও দৃঢ় করেছে। এ বইয়ের মধ্যে ফিলিস্তিনবাসীর যন্ত্রণাই মুখ্য, যেটা সংস্কৃতির সংঘর্ষ এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ধীরে ধীরে পাঠকের সামনে উন্মোচিত করে। অন্যদিকে ক্রমাগত অস্থির জীবনযাপনের ভেতর দিয়ে যাবার জন্য তাদের ভালোবাসা এবং ক্ষতির সংজ্ঞাও বদলে গেছে নিজেদের জীবনে।
বইটির ১০ লাখেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে এবং অন্তত ২০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সুসান আবুলহাওয়া একজন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান লেখক এবং মানবাধিকার কর্মী এবং একজন পশু-অধিকার কর্মী। তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন এবং ‘ফিলিস্তিনের জন্য খেলার মাঠ’ নামক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা।
মেন ইন দ্য সান
এই গল্পে তিন প্রজন্মের তিনজন ফিলিস্তিনি বসরা ফ্রন্টের একজন কেরানির সহায়তায় কাজ খুঁজতে খুঁজতে এক ড্রাইভারের মাধ্যমে ইরাকে যায়। সেখানে কাজ খুঁজে না পেয়ে কুয়েতের তেলের খনিতে শ্রমিকের কাজ পাবে– এ আশায় কুয়েতে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। এ রকম অবৈধভাবে আসার জন্য তিনজনের সঙ্গেই কুৎসিত ব্যবহার করা হয় ও অনেক অপমান অবজ্ঞা তাদের ভোগ করতে হয়। লোকগুলোকে জোর করে মরুভূমির ভেতর থেকে তাদের কুয়েতের পথে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভিন্ন চেকপয়েন্টে তাদের লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। মরুভূমির তীব্র গরমের মধ্যেই দমবন্ধ করা মধ্যদুপুরের তাপে, বড় বড় খালি পানির ট্যাঙ্কে এদের লুকিয়ে থাকতে হয়। এই ফাঁকে ড্রাইভার লোকটি সামনে এগিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে। শেষ চেকপয়েন্টে যখন পলাতকরা প্রায় কুয়েতের মাটি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, ঠিক সেই সময় চেকপয়েন্টের আমলারা ড্রাইভারকে তার অসংযত যৌন আচরণের দুর্নামের অভিযোগে ধরে ফেলে। নানারকম হেনস্তা করে। যখন ড্রাইভার ছাড়া পেয়ে সেই চেকপয়েন্ট থেকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তখন দ্রুত গিয়ে ওই লোকদের বের হবার জন্য পানির ট্যাঙ্ক খুলে দেয়, আর দেখে যে মানুষগুলো এর মধ্যেই মরে গেছে। ঠিক এমনই মর্মন্তুদ বাকি গল্পগুলোও। গাসান কানাফানি একজন ফিলিস্তিনি লেখক এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ফিলিস্তিনের পিএফএলপি বা পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় সদস্য ছিলেন।
গাজা রাইটস ব্যাক ‘গাজা রাইটস ব্যাক’ বইটি মূলত গাজার ১৫ জন তরুণ লেখকের একটি সংকলিত ছোটগল্পের গ্রন্থ। যারা দীর্ঘকাল ধরে ইসরায়েলি বিধিনিষেধ ও অবরোধের কারণে ভুগছে। ২০০৮-০৯ সালে ইসরায়েলের ‘অপারেশন কাস্ট লিড’ যুদ্ধের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তারা তাদের জীবন ও লেখায় যেভাবে উপলব্ধি করেছে, তারই অভিব্যক্ত রূপ এ গল্পগুলো। প্রকৃতপক্ষে এ লেখকদের অধিকাংশই তাদের লেখার প্রভাবক হিসেবে এ নির্যাতনকেই বেছে নিয়েছে। তারা এ বইটাকে ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক স্মৃতি এবং তাদের বক্তব্য পৃথিবীর কাছে তুলে ধরার অবিকল উচ্চারণ হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছে।
বইয়ের গল্পগুলোর ঘটনায় আমাদের সামনে এসেছে একেবারে ভেতর-বাড়ির কথা; মায়ের উদ্বিগ্নতা, বাবা, ছাত্র, শিশু এবং বৃদ্ধদের জীবনের সম্মান, সহানুভূতির বিবরণ এবং পৃথিবীর সবচেয়ে যুদ্ধক্লান্ত সম্প্রদায় হিসেবে তারা কীভাবে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তার আখ্যান। এখানে তারা ফিলিস্তিনিদের সহনশীলতা, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের জন্য তাদের সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতা, এসব চলমান সমস্যার প্রতিরোধকল্পে কীভাবে মুখোমুখি হবার সাহস জোগাচ্ছে সেই গল্প বলেছেন। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা দমিয়ে নীরব করে দেওয়ার পাঁয়তারা সব সময়ই চলেছে। চারপাশে যথেচ্ছ মিসাইল আক্রমণ ও বাড়িতে পুলিশি তল্লাশির মধ্য দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। ভূখণ্ডে প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা মর্যাদাহীনতা ও অপমানের সম্মুখীন; বইটিতে এসব ঘটনার জীবন্ত বর্ণনা আছে। বইয়ের অনেকগুলো গল্পেই চরিত্রদের প্রচুর জটিল জাগতিক ইচ্ছার মধ্যে একটি শক্তিশালী আকুলতা প্রায় সবার মধ্যে দেখা যায় যে, তারা বহু বছর ধরে ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত থাকার পরেও নিজের বাড়িঘর গ্রাম ও দেশের টানে সেখানেই ফিরে যেতে চায়। গাজার অভ্যন্তরীণ সামাজিক ব্যবধানও যথেষ্ট সংবেদনশীলতার সঙ্গে খনন করেছেন তরুণ লেখকরা। চমৎকার শৈলীতে লিপিবদ্ধ এই গল্পগুলোতে ছোটবড় যেসব সংগ্রাম ও যন্ত্রণার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, পাঠকদের তা স্পর্শ করতে বাধ্য। এসব লেখা পড়েই লেখকদের আশা ও সাহসের উৎসমূল বুঝতে পারা যায়। মূলত নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বেরিয়ে আসার সংগ্রামই মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়। অপারেশন কাস্ট লিড শেষ হবার পাঁচ বছর পরে প্রকাশিত এই বইয়ের গল্পগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে এখনও হৃদয়ের গভীরে কতটা বেদনা লুকানো আছে এবং গাজা উপত্যকার অধিবাসীরা আজীবন এই আক্রমণের দাগ বুকের গভীরে বয়ে নিয়ে চলবে। এখনও সেখানে সঠিক ন্যায়বিচারের জন্য দাবিদাওয়া আরও বেশি সোচ্চার ও ধারাবাহিক। এসব তরুণ উদ্বাস্তু লেখক পৃথিবীকে তাদের সম্বন্ধে, তাদের মাটি সম্বন্ধে, তাদের জনগণ এবং তাদের গল্পগুলো সম্বন্ধে ভুলে যেতে দেবে না।
বইটির সম্পাদক রিফাত আলারিয়ার গাজা শহরের মূল অধিবাসীদের একজন। লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে এমএ করেছেন। মালয়েশিয়ার পুত্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেছেন ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডি। ২০০৭ সাল থেকে অদ্যাবধি গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বসাহিত্য, তুলনামূলক সাহিত্য এবং সৃজনশীল সাহিত্য পড়াচ্ছেন।