হাতে ঝিমঝিম লাগা

প্রতীকী ছবি
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:১৪ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:১৪
সম্প্রতি এক নারী এসে আমাকে জানালেন, গত বছর দেড়েক থেকে দুই হাতে প্রচণ্ড পরিমাণে ঝিমঝিম করে। গর্ভাবস্থায় এটা শুরু হয়েছে। বাচ্চার বয়স ৯-১০ মাস। প্রথমে ভেবেছিলেন বাচ্চা হলে ঝিমঝিম কমে যাবে। কিন্তু বাচ্চা হওয়ার পর ঝিমঝিম তো কমেনি, উল্টো দিন দিন বেড়েই চলছে। কোনো কাজ করতেই পারেন না। মোবাইলে কথা বলতে গেলে ঝিমঝিম ব্যথা আরও বেড়ে যায়। রাতে ঘুম ভেঙে যায়। বাচ্চার কোনো কাজ করতে পারেন না।
রোগীর হিস্টোরি ও পরীক্ষা করে আমার কাছে মনে হলো, তিনি কার্পাল টানেল সিনড্রোমে আক্রান্ত। চিকিৎসার পর তার অবস্থার বেশ উন্নতি হয়। আজকে আমি এ রোগ নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
আমাদের দুই হাতে অনেক নার্ভ বা স্নায়ু আছে। এদের মধ্যে একটি হলো মিডিয়ান নার্ভ। বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থা, থাইরয়েডের সমস্যা, অতিরিক্ত স্থূলতা, পেশাগত কারণ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গ্যাংলিওন, হাতের কবজিতে আঘাত ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা দেখা দিলেও প্রায় অর্ধেক রোগীর কোনো কারণ জানা যায় না। উপসর্গ দেখেই কিন্তু এ রোগ চেনা যায়। হাতে ঝিমঝিম করা এ রোগের মূল উপসর্গ। একটু মোটা ভারী কিছু ধরলে, মোবাইলে কথা বলার সময় বা এমন কোনো কাজ যাতে কবজি ভাঁজ পড়ে তাহলে ঝিমঝিম বেশি হয়।
রাতের বেলা ঘুমের সময় হাত ঝিমঝিম করে ঘুম ভেঙে যাওয়া এ রোগের মূল উপসর্গ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাতের ঝিমঝিম কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে; তবে তা ঘাড় পর্যন্ত যাবে না। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় এ ধরনের রোগী কাঁধের সমস্যার চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। নিউরোলজিস্টরা খুব সহজ দুটি শারীরিক পরীক্ষা করে এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলতে এ রোগের কারণ খুঁজে বের করার জন্য কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। রোগ নিশ্চিত হতে নার্ভের পরীক্ষা যাকে এনসিএস বলে তা করা প্রয়োজন হতে পারে।
এ রোগের চিকিৎসা খুবই সহজ। নিউরোপ্যাথিক পেইনের জন্য যেসব ওষুধ যেমন– প্রিগাবালিন, গাবাপেন্টিন, এমিট্রিপ্টিলিন, এনএসএআইডি ও স্টেরয়েড ব্যবহার করা যায়। ঘুমের সময় হাতে রিস্ট স্প্লিন্ট ব্যবহার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। ওষুধ সেবনে ভালো না হলে কবজিতে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া যায়।
অনেকে জানতে চান এ রোগীদের অপারেশনের প্রয়োজন আছে কিনা?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। যদি ওষুধে ভালো না হয় বা হাতের মাংশপেশি শুকিয়ে যায় তাহলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। আপনার নিউরোলজিস্ট আপনাকে জানাবেন কখন অপারেশন করতে হবে। তাই চিকিৎসা এবং ফলোআপে গাফিলতি করবেন না।