জেনে রাখুন
সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কিত নানা তথ্য

প্রতীকী ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:৩৭ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:৩৭
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম বা কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এখন ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা– এ চারটি স্কিমে চাঁদা দিয়ে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারছেন। সরকারিভাবে পেনশন স্কিমের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।
পেনশন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী অনেকেই। তাদের জন্য জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটের (upension.gov.bd) হোম পেজে ‘সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন’ নামে একটি আলাদা মেন্যু রয়েছে। সেখানে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে প্রায়ই জানতে চাওয়া হয়– এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। সে আলোকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কিত কিছু তথ্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
ব্যাংকে টাকা রাখলে আজীবন পেনশন প্রাপ্তির সুযোগ নেই। অন্যদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিলে চাঁদাদাতা আজীবন মাসিক পেনশন পাবেন। তা ছাড়া জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারই জমাকৃত টাকার গ্যারান্টার। পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সের কোনো ঊর্ধ্ব সীমা নেই। ৬০ বছর বয়সেও কেউ অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ৭০ বছর হওয়ার আগে তিনি যদি মারা যান তাহলে তাঁর নমিনি মুনাফাসহ জমাকৃত অর্থ ফেরত পাবেন।
সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে শুধু রেজিস্ট্রেশন করে মাসিক টাকা জমা দিলেই হবে। হার্ড কপি জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। কোনো ব্যক্তির কাছে চাঁদার টাকা নগদ জমা দেওয়া যাবে না। ব্যাংক, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে চাঁদার টাকা জমা দেওয়া যাবে। চারটি স্কিমের মধ্যে শুধু ‘সমতা’ স্কিমে চাঁদাদাতার প্রদত্ত চাঁদাসহ সমপরিমাণ টাকা সরকার দেবে। সমতা স্কিমে প্রত্যয়ন প্রয়োজন নেই। এটি পেনশনার নিজে ঘোষণা করবেন, তাঁর মাসিক আয় ৫ হাজার টাকার নিচে হতে হবে।
চাঁদাদাতাদের জমাকৃত টাকা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিলে জমা হবে। জমাকৃত টাকা বিনিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী নিরাপদ বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হবে। চাঁদাদাতা তাঁর পেনশন আইডি দিয়ে পেনশন কর্তৃপক্ষের সিস্টেমে প্রবেশ করে সহজেই বছর শেষে মুনাফাসহ জমাকৃত টাকার পরিমাণ সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারবেন।
স্কিমের আওতাভুক্ত প্রতিটি চাঁদাদাতার নামে একটি পৃথক পেনশন হিসাব থাকবে, যা তার কর্পাস হিসাব হবে এবং ওই কর্পাস হিসাবে চাঁদাদাতা কর্তৃক জমাকৃত চাঁদার অংক হিসাবায়ন করা হবে। পেনশনার ২৫ বছর বয়সে চাঁদা দেওয়া শুরু করে ৪৫ বছর বয়সে মারা গেলে তিনি মোট ২০ বছর চাঁদা দিলেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর নমিনি ওই পেনশনারের বয়স ৬০ থেকে ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে নমিনি নিজে যদি পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত থাকেন, তাতেও অসুবিধা হবে না। তিনি দুটি পেনশনই পাবেন। তবে এককালীন টাকা নমিনি পাবেন না।
পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সের কোনো ঊর্ধ্ব সীমা নেই। ৬০ বছর বয়সেও কেউ অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ৭০ বছর হওয়ার আগে তিনি যদি মারা যান, তাহলে তাঁর নমিনি মুনাফাসহ জমাকৃত অর্থ ফেরত পাবেন। ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে হলে বিশেষ বিবেচনায় কমপক্ষে ১০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে তাঁকে চাঁদা দিতে হবে।
বড় স্কিম থেকে ছোট স্কিমে বা ছোট স্কিম থেকে বড় স্কিমে যাওয়া যাবে। বর্তমানে প্রতিটি স্কিমের জন্য ৮ শতাংশ হারে মুনাফা ধরা হয়েছে। ফলে বছরের যে কোনো সময়ে স্কিম বা প্যাকেজ পরিবর্তন করলেও মুনাফার হার একই হবে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে মাসিক পেনশনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা তপশিলি ব্যাংক, পোস্ট অফিস কিংবা অন্য কোনো অফিসকে স্কিমের সম্মুখ অফিস ঘোষণা করবে। আপাতত জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তথ্য সেবা প্রদান এবং সোনালী ব্যাংকের প্রতিটি শাখা নিবন্ধন ও চাঁদা জমা দেওয়ার কাজে সহযোগিতা করছে।
সরকারি কর্মচারীদের পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের চাকরিজীবনের বিভিন্ন অডিট আপত্তি, সরকারের সঙ্গে দেনা-পাওনা এবং শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করতে হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে এ ধরনের কোনো বিষয় নেই। ফলে ৬০ বছর পূর্তিতে চাঁদাদাতারা মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন।