৩০০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত জমিদারবাড়ি
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ক্ষেতুপাড়া জমিদারবাড়ি
জালাল উদ্দিন
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৯:১৪
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ঐতিহাসিক ক্ষেতুপাড়া গ্রামের জমিদারবাড়িটি ৩০০ বছরের স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে। এ জমিদারবাড়িটি উপজেলার প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনগুলোর অন্যতম। তবে বর্তমানে জীর্ণ এর দেহ। জমিদারবাড়িটির শেষচিহ্ন হিসেবে থাকা শিবমন্দিরটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় গুল্ম লতাপাতায় ছেয়ে গেছে। গুল্মের শিকড় দেয়াল ভেদ করেছে। বাড়ির সঙ্গে বাজার হওয়ায় বাড়িটির প্রধান প্রবেশদ্বার ভেঙে মঠটির সামনে তোলা হয়েছে দোকান ঘর।
জনশ্রুতি রয়েছে, আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে ভারত থেকে নবকুমার নামে এক জমিদার এ অঞ্চলে এসে সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামে অবস্থান নেন। সেখানে তিনি একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। এটি ‘ক্ষেতুপাড়া জমিদারবাড়ি’ নামে পরিচিত। তিনি ১৫৪টি তৌজি নিয়ে তাঁর জমিদারিত্ব পরিচালনা করতে থাকেন। জমিদার নবকুমার রায় মারা যাওয়ার পর তাঁর একমাত্র ছেলে পার্বতী চরণ রায় ৬০ বছর এখানে জমিদারি করেন। জমিদার নবকুমার সম্পর্কে তেমন কিছু জানা না গেলেও পার্বতী চরণ রায় সম্পর্কে জানা যায়, তিনি ভারতের কাশীতে বিয়ে করেন। চার ছেলের মধ্যে শ্যামাচরণ রায় সাঁথিয়াতেই থেকে যান এবং ১৯৪০-এর দশক পর্যন্ত এখানে থেকে জমিদারির দেখভাল করতেন।
শ্যামাচরণ রায় মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলে দীপক কুমার রায় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে দীপক কুমার রায় জমিদারবাড়িটি বিক্রি করে দেন। বর্তমানে ভগ্নদশা বাড়িটিতে ক্রয়সূত্রে মালিক সন্ধ্যা রানী ও তাঁর স্বামী জ্ঞানেন্দ্রনাথ তালুকদারের চার ছেলে বসবাস করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনের পলেস্তারা বহু বছর আগেই খসে পড়েছে। ভাঙা দেয়াল, কোথাও ঘষা লাগলে ইটের লাল ধূলিকণা পড়তে থাকে। মাকড়সার জালে বিস্তৃত। ছোট্ট প্রজাতির বাদুড়ের বসতবাড়ি। পোকামাকড় আর সাপের ভয় যেন সর্বদাই। এখানে আছে একটি শিবমন্দির। মন্দিরের শিব ঠাকুরের মূর্তিটি অনেক আগেই চুরি হয়েছে। আছে ১০ শতাংশ জমির ওপর ভাঙাচোরা পলেস্তারা খসা শিবমন্দিরের গম্বুজ।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সাইদ ইনাম তানভিরুল বলেন, ‘সাঁথিয়ার ক্ষেতুপাড়া জমিদারবাড়ির স্থাপনার নির্মাণশৈলী দেখে মনে হচ্ছে ২০০ বছরের বেশি সময় আগে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো স্থাপনার বয়স ৯০ থেকে ১০০ বছর হলে সেটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হয়ে যায়। এ জমিদারবাড়িটির মন্দির ও স্থাপনা সংরক্ষণ করা হলে তা ইতিহাস রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর যথেষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করি।’