ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বায়ুদূষণ প্রতিরোধে ‘তরল গাছ’

বায়ুদূষণ প্রতিরোধে ‘তরল গাছ’

সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের রাস্তায় ‘তরল গাছ’

টি এইচ মাহির

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৯:২০

গাছ মানুষের পরম বন্ধু। পৃথিবীতে মানুষের অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আসে গাছ থেকে। শুধু অক্সিজেন নয়। ফলমূল, খাদ্যশস্য ইত্যাদি গাছের কল্যাণে পাই আমরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঢাল হিসেবে কাজ করে গাছ। শহরাঞ্চলে গাছ কম থাকার দরুন বায়ুদূষণসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের শহরে বায়ুদূষণের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক কাজ বন্ধও রাখতে হচ্ছে। বায়ুতে দূষক পদার্থের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই বিজ্ঞানীরা পরিশুদ্ধ বাতাসের খোঁজে তরল গাছ তৈরি করেছেন।

সম্প্রতি সার্বিয়ান বিজ্ঞানীরা লিকুইড-৩ নামে এক তরল গাছ তৈরি করেছেন। ইউরোপীয় এনজিও হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যালায়েন্সের (এইচইএএল) মতে, আশপাশে দুটি বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপস্থিতির কারণে সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের বায়ুর গুণগতমান ভয়াবহভাবে কমেছে, যা ইউরোপের শীর্ষ ১০টি নোংরা প্লান্টের মধ্যে রয়েছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বিয়ায় দূষণজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে ইউরোপ সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সেখানে প্রতি ১০ হাজার জনে ১৭৫ জনের মৃত্যু হয় বায়ুদূষণে। সামগ্রিকভাবে ২০২০ সালে সবচেয়ে খারাপ বায়ু মানের জন্য সার্বিয়া বিশ্বে ২৮তম স্থানে ছিল। বর্তমানে দেশটির বাতাসে পিএম ২.৫ বা অতিসূক্ষ্ম কণার পরিমাণ অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক বায়ুমানের নির্দেশিকা মান থেকে যা ৪.৯ গুণ বেশি। তাই সার্বিয়ার নাগরিকরা এ ধরনের দূষণের তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগেন। দেশটির বায়ুদূষণ কমাতে বিজ্ঞানীরা একটি সমাধান নিয়ে এসেছেন। বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ইভান স্পাসোজেভিক জানান, তারা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং বায়ুর গুণমান উন্নত করার জন্য একটি উদ্ভাবনী হাতিয়ার তৈরি করেছেন; যা ‘তরল গাছ’ নামে পরিচিত। 

লিকুইড-৩ নামের এই তরল গাছটি মূলত একটি ফটো-বায়োরিয়্যাক্টর। একটি বড় স্বচ্ছ ইলেকট্রিক পাত্র, যা স্থাপন করা হচ্ছে শহরের রাস্তার পাশে। ফটো-বায়োরিয়্যাক্টর হলো ক্রমবর্ধমান অণুজীবের জন্য একটি ফার্মেন্টার ট্যাঙ্ক; যা সালোকসংশ্লেষণের জন্য হালকা শক্তি ব্যবহার করে। এই ট্যাঙ্কে ৬০০ লিটার পানিতে ভাসমান শৈবাল রয়েছে। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে এই অণু শৈবাল তার চারপাশ থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং বিশুদ্ধ অক্সিজেন নির্গত করে। ডিভাইসটিতে একটি অন্তর্নির্মিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রয়েছে; যা ট্যাঙ্কগুলোয় ইনস্টল করা সোলার প্যানেল দ্বারা চালিত হয়। এর ফলে বায়োরিয়্যাক্টরের অভ্যন্তরে একটি সবুজ আভা দেখা দেয়; যার ফলে অণু শৈবাল সারা বছর অবিরাম সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া চালাতে পারে। কার্বন-ডাই অক্সাইড একটি পাম্পের মাধ্যমে মাইক্রোঅ্যালগিকে সরবরাহ করা হয়; যা দূষিত বায়ুকে ধরে রাখে। এখানে এককোষী মিঠাপানির শৈবাল ব্যবহার করা হয়, যা উচ্চ ও নিম্ন তাপমাত্রার প্রতিরোধী।

একটি তরল গাছ দুটি ১০ বছর বয়সী গাছ বা ২০০ বর্গমিটার ঘাসের সমান। গাছের তুলনায় মাইক্রোঅ্যালগির সুবিধা হলো, এরা গাছের তুলনায় প্রায় ১০-৫০ গুণ বেশি দক্ষ। এই গাছ শীতকালেও কার্যকর থাকে। এই তরল গাছ শুধু বায়ুদূষণ প্রতিরোধে নয়, রাতে সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবেও কাজ করবে। এখানে মোবাইল ফোনের চার্জারও রয়েছে। ড. ইভান স্পাসোজেভিকের এই আবিষ্কার ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এটি নগরে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে কাজ করতে পারে বলে আশাবাদী পরিবেশকর্মীরা। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ঘনবসতি, গাছ লাগানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই, সেসব এলাকায় স্থাপন করা যেতে পারে তরল গাছ। বায়ুদূষণ প্রতিরোধে লিকুইড-৩ হতে পারে টেকসই সমাধান। 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×