আঞ্চলিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতা দিয়ে শুরু হলো বিডিবিও-সমকাল বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান উৎসব। গত দু'বছরের অনলাইন নির্ভরতা পেরিয়ে এবার শিক্ষার্থীদের শারীরিক উপস্থিতিতে হচ্ছে উৎসব আয়োজন। ফলে প্রাণ ফিরে পেয়েছে জীববিজ্ঞান নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন 'বিডিবিও-সমকাল জীববিজ্ঞান উৎসব ২০২২'। তরুণ শিক্ষার্থীদের আগমনে মিলনমেলায় পরিণত উৎসব ভেন্যু তিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। ১৮ ও ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত তিন আঞ্চলিক উৎসবে ঢাকা দক্ষিণে ১ হাজার ৫১ জন, রাজশাহীতে ৬৫০ এবং সিলেটে ৯৮৬ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। দিনব্যাপী পরীক্ষা, প্রশ্নোত্তর, হাসি, আড্ডা, গান শেষে ঢাকা দক্ষিণের ২৯৫, রাজশাহী ১৩৬ এবং সিলেট অঞ্চলের ২০৭ শিক্ষার্থী জায়গা করে নেয় জাতীয় পর্বে

ঢাকা দক্ষিণ

আসাদুজ্জামান
পরীক্ষা শুরু সকাল সাড়ে ১১টায় কিন্তু সকাল ৯টা থেকেই আসতে শুরু করে নিবন্ধনের মাধ্যমে জীববিজ্ঞান উৎসবে অংশগ্রহণেচ্ছু শিক্ষার্থীরা। কেউ বাবা-মার হাত ধরে, কেউ আবার বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে এসেছে উৎসবে যোগ দিতে। কেউ এসেছে নরসিংদী থেকে, কেউ মুন্সীগঞ্জ, কেউ আবার ঢাকারই কোনো স্কুলের শিক্ষার্থী কিন্তু ভাব জমতে একটুও সময় লাগেনি। একটু পরে পরীক্ষা তা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। পরীক্ষা যেন কোনো বিষয়ই না। এমনি করেই সময় চলে যায়। ১১টায় ইসিই ভবনের প্রধান ফটক খুলে দেওয়া হলে এনজাইমদের দেখানো পথে সবাই যে যার পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করে। ঠিক সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে লিখিত পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে জীববিজ্ঞান উৎসব ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ড. মুহাম্মদ তারিক আরাফাত ও সমকালের সহসম্পাদক আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা শুরু হলে সবাই তাদের অনুসরণ করে। ছায়াঢাকা পথে উদ্দাম তরুণের দল জানিয়ে দেয় দেশের জন্য তারা কাজ করতে চায়। শোভাযাত্রা শেষ হয় বুয়েট মিলনায়তনের সামনে গিয়ে। এরপর মিলনায়তনে আসন নেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
মধ্যাহ্নভোজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার সবাইকে যখন আমন্ত্রণ জানান প্রশ্নোত্তর পর্বে মুহূর্তে সবাই বেশ মনোযোগী ছাত্র হয়ে ওঠে। নিজের ভেতরে জীববিজ্ঞানের যে প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল সেটা জেনে নেওয়ার এখনই তো সময়। জিন মডিফাই করে কি আয়ু বাড়ানো সম্ভব? ডিএনএর মতো ছোট অণু কীভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে? অ্যাপেন্ডিকসে ব্যথা হয় কেন? যেসব প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, সেগুলোর ক্লোন করে টিকিয়ে রাখা কি সম্ভব নয়? কিংবা মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ কেন? ইত্যাদি মেধাবী, সৃজনশীল প্রশ্নের মাঝে কেউ কেউ যেন ইচ্ছে করেই হাস্যরসাত্মক প্রশ্ন করছিল- একদিন তো মরেই যাব, এতো পড়াশোনা করে কি লাভ? কিংবা জীববিজ্ঞানের অনেক মুখস্থ করতে হয় তাহলে এটা সৃজনশীল কীভাবে? খুদে শিক্ষার্থীদের নানা মাত্রিক ও ভাবনার উত্তর দিতে প্যানেলে ছিলেন বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের (বিডিবিও) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. শামীম আরা, মুগদা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. আসিফ রাশেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ফারহানা তানিম চৌধুরী।

বিকেল ৪টায় ড. মুহাম্মদ তারিক আরাফাতের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন (বিডিবিও) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার, অধ্যাপক ডা. শামীম আরা, অধ্যাপক ড. মো. আয়নাল হক, সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক নূরুন নবী, সমকালের সহকারী সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ প্রমুখ।

অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে নিজেদের যাচাই করা যায়, সমৃদ্ধ করা যায়, জ্ঞানের গভীরে প্রবেশ করা যায়। জানার শেষ নেই, তাই সব সময় জানার আগ্রহ লালন করতে হবে। জীববিজ্ঞান, বিজ্ঞানের অন্য শাখার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। জীববিজ্ঞান নিয়ে দেশে এমন আয়োজন সত্যি আশা জাগায়। প্রযুক্তি জ্ঞানের পাশাপাশি আমাদের মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাহলেই আমরা সমৃদ্ধ ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবো।

অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে এ দেশ উন্নত, জ্ঞানময়, বিজ্ঞাননির্ভর জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর এ আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের একটাই চাওয়া, বিজ্ঞান শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে নূ্যনতম ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি যেন স্কুল-কলেজগুলোকে দেওয়া হয়।
সহসম্পাদক সমকাল সুহৃদ সমাবেশ

রাজশাহী
সৌরভ হাবিব ও নুরুজ্জামান খান
বিজ্ঞানপ্রেমী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে রাজশাহী অঞ্চলের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন- জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক শহীদুল আলম, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুব হাসান, জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবু রেজা, রাজশাহী জেলা শাখা সুহৃদ সমাবেশের সভাপতি ও রাজশাহী কলেজের অধ্যাপক হবিবুর রহমান, সমকালের রাজশাহী ব্যুরোপ্রধান সৌরভ হাবিব। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের রাজশাহী অঞ্চলের সভাপতি ও রাবি শিক্ষক অধ্যাপক হাবীবুর রহমান।
সমাপনীতে উৎসবের রাজশাহী অঞ্চলের সভাপতি অধ্যাপক হাবীবুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক জালাল উদ্দিন সরদার, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিওকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ফারজানা আশরাফী নিলা, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হকসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের সভাপতি ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, যুক্তিনির্ভর, সমতাভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক যদি আমরা সমাজ গড়তে চাই তাহলে অবশ্যই বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। কারণ বিজ্ঞামনস্ক মানুষ সবকিছুকে যুক্তি দিয়ে গ্রহণ করে। উৎসবে শিক্ষার্থী জ্ঞানকে আরও শানিত করার সুযোগ পাবে। প্রতিযোগিতা মানে প্রথম বা দ্বিতীয় হওয়া নয়। প্রতিযোগিতা মানে নিজের জ্ঞান, দক্ষতা যাচাই। তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ। তোমাদের দিকেই সবাই তাকিয়ে আছে। এ সময় আমরা থাকব না, প্রবীণরা হারিয়ে যাবে, তোমরা সেই জায়গাটি দখল করবে। সে জন্য নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন- অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম এবং উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মনজুর হোসেন প্রমুখ।
রাজশাহী ব্যুরো ও রাবি প্রতিনিধি


সিলেট
ফয়সল আহমদ বাবলু
ডিম আগে না মুরগি আগে? মানুষ দৌড়ালে হাঁপায় কেন? মশা কামড়ালে ফুলে যায় কেন? শৈবাল সালোকসংশ্নেষক প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে- তাহলে শৈবালকে উদ্ভিদ বলা যাবে কিনা? ১৯ মার্চ শনিবার এমন চিন্তাকর্ষ, কৌতূহলী ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের মুখে পড়েন শিক্ষকরা। জীববিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরাও শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবও দেন অত্যন্ত সুচারুরূপে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিডিবিও-সমকাল বাংলাদেশ জাতীয় জীববিজ্ঞান উৎসব সিলেট অঞ্চল পর্বে এমন প্রশ্নের উত্তরে মুখর হয়ে ওঠে উৎসবের প্রশ্নোত্তর পর্ব। এর আগে এক ঘণ্টার পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা।
সকাল ৯টায় অংশগ্রহণকারীরা সিকৃবি কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের মাঠে উপস্থিত হয়ে তাদের নিবন্ধন নিশ্চিত করে। সকাল সাড়ে ৯টায় সমবেত জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে সিকৃবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা সামসুজ্জামান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আ খ ম গোলাম সারোয়ার আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের পতাকা, সিলেট অঞ্চলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের পতাকা এবং সমকালের সিলেট ব্যুরো স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল আহম্মদ বাবলু সমকালের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিডিবিও সিলেট আঞ্চলিক কমিটির সহ-সভাপতিমণ্ডলী, বিডিবিও সিলেট অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক তাসফিয়া তাহজিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাহিদ হাসান। এ ছাড়া এনজাইম ও সমকাল সুহৃদ সমাবেশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, এখানে নতুন প্রজন্মের যে উচ্ছ্বাস দেখলাম সেটি আমাদের বাঁচার স্বপ্টম্ন দেখায়। আজকের এই নতুনদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সকাল সাড়ে ৯টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন মাঠে বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান উৎসব সিলেট অঞ্চল পর্বের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু, অধ্যাপক ড. আ খ ম গোলাম সারোয়ারসহ অতিথি ও আয়োজকরা।
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিডিবিও সিলেট আঞ্চলিক কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস, অধ্যাপক ড. শরিফুন্নেছা মুনমুন, অ্যধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান, সিকৃবির সহকারী অধ্যাপক ড. কাজি জিন্নাহ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ।
উৎসবে সিলেট আঞ্চলিক পর্ব থেকে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ৪৯, সেকেন্ডারি থেকে ১১৪ এবং হায়ার সেকেন্ডারি থেকে ৪৪ জনসহ মোট ২০৭ জনকে পুরস্কার ও মেডেল তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তদের পুরস্কার দেওয়া হয়। পরে সব বিজয়ীর হাতে অতিথিরা পুরস্কার তুলে দেন।